এইদিন বিনোদন ডেস্ক,১১ জানুয়ারী : প্রবীর মিত্র বাংলাদেশের সিনেমা জগতের একজন খ্যাতনামা অভিনেতা । গত রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । কিন্তু তার মৃত্যুর পরেও সেদেশের হিন্দুদের মধ্যে তেমন শোক লক্ষ্য করা যায়নি । কারন নাম প্রবীর মিত্র হলেও তিনি ছিলেন ধর্মান্তরিত মুসলিম । মুসলিম প্রেমিকাকে পেতে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম রেখেছিলেন হাসান ইমাম। কিন্তু সে নামে পরিচিতি পাননি তিনি । ফলে তাকে হিন্দু নাম প্রবীর মিত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হতে হয় তাকে । সেই হিসাবে ইসলামি রীতি অনুযায়ীই তার শেষকৃত্য হওয়ার কথা । হিন্দুরা এটি জেনে চুপ ছিল । কিন্তু কিছু মুসলিম অভিনেতার শেষকৃত্য নিয়ে অহেতুক বিতর্ক উসকে দেয় । এরপর অভিনেতার পরিবারের পক্ষ থেকে জানাজা ও দাফন নিয়ে বিস্তারিত জানানো হলে ইসলামি রীতি অনুযায়ীই কবরস্থ করা হয় তাকে ।
অবশ্য ধর্মান্তরিত হাসান ইমামের বড় ছেলেও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন । পেশাগত সুবিধা পেতে তারাও হিন্দু নামেই পরিচিত । যেমনটি করেছিলেন হাসান ইমাম ওরফে প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজান্তা মিত্র।
দাফন নিয়ে অভিনেতার বড় ছেলে মিঠুন মিত্র রবিবার রাতে জানান, রাতে গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হবে। সোমবার বাদ যোহর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হবে। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে চ্যানেল আইতে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। সব জেনেও নামের কারণে প্রবীর মিত্র হিন্দু না মুসলাম নিয়ে মুসলিমদের একাংশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।। অবশ্য বিষয়টি খোলাসা করেন মিশা সওদাগর। তিনি জানিয়েছেন, প্রবীর মিত্র ভাই মুসলামনই ছিলেন। ধর্মমতে তার জানাজা হবে এবং দাফন হবে।
এক সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। সেই সময়ের ভিডিওতে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়,’আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনও সে ধর্মেই আছি।’ ধর্ম নিয়ে প্রবীর মিত্রের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘ধর্ম নিয়ে আমার কোনো বাড়াবাড়ি নাই। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই। মানুষ সবার উপরে।’
সেই সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র জানিয়েছেন,’অভিনয় করতে না পারলে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি অভিনয় করতে পারছি না, এটাই আমার বড় কষ্ট। অভিনয়টা আমাকে খুব টানে। অপেক্ষায় আছি, সুস্থ হয়ে আবার অভিনয়ে ফেরার।’ ভিডিওতে সহকর্মীদের কথাও বলেছিলেন এই অভিনেতা। তিনি জানিয়েছেন, অনেকেই তার খোঁজখবর নেন। সবাই তার জন্য দোয়া করেন। তিনিও সবার জন্য দোয়া করেন, সবাই যেন ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন।
উল্লেখ্য,ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর প্রবীর মিত্রের নাম পরিবর্তন করা রাখা হয়েছিল হাসান ইমাম। কিন্তু সে নামে পরিচিতি পাননি তিনি। যেকারণে নিজের পুরনো নাম প্রবীর মিত্র ব্যবহার করতেই বাধ্য হন তিনি । ওই নামেই সবার কাছে পরিচিত এই অভিনেতা। প্রবীর মিত্রর পারিবারের সদস্যরাই জানিয়েছেন এ তথ্য।
জানা গেছে, বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শরীরে অক্সিজেন -স্বল্পতাসহ বেশ কিছু অসুস্থতায় গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ প্রবীর মিত্রের। ১৯৮২ সালে তিনি বড় ভাল লোক ছিল চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে আজীবন সম্মাননা বিভাগে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজান্তা মিত্র মারা যান ২০০০ সালে। তার তিন ছেলে মিথুন মিত্র, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম। এক মেয়ে ফেরদৌস পারভীন। এদের মাঝে সামিউল মারা গেছেন। প্রবীর মিত্রের জন্ম ১৯৪১ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় নাম লেখান। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অভিনয় করেছেন অসংখ্য সিনেমায়।।