এইদিন ওয়েবডেস্ক,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২৫ জুলাই : করোনা পরিস্থিতির কারনে বিগত প্রায় দু’বছর ধরে বেড়েছে অনলাইন লেনদেন । আর এই সুযোগ নিয়ে বেড়ে চলেছে আর্থিক প্রতারনার ঘটনাও । সম্প্রতি অনলাইনে পোশাক কিনতে গিয়ে প্রতারিত হতে হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মন্তেশ্বর থানার হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বপ্না গুপ্ত নামে জনৈক এক গৃহবধূ । এনিয়ে তিনি পুরুলিয়ার কুস্তোর এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া রাউত নামে এক তরুনীর বিরুদ্ধে মন্তেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন । পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলার সাইবার সেলেও অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানান তিনি । যদিও অভিযোগ দায়েরের পর দু’সপ্তাহের অধিক সময় কেটে গেলেও এযাবৎ এই ঘটনার কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ । এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারিনী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ৷
হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বপ্না গুপ্ত নামে ওই গৃহবধু জানিয়েছেন,তিনি দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন পোশাকের ব্যাবসা করছেন । পাইকারি দামে পোশাক কিনে তা অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করেন । মূলত চেনাজানা ক্রেতাদের সঙ্গেই তাঁর লেনদেন হয় বলে জানিয়েছেন তিনি ।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে পুরুলিয়ার কুস্তোর এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া রাউত নামে ওই তরুনীর সঙ্গে ফেসবুকে আমার আলাপ হয়েছিল । ওই তরুনী মহিলা ও পুরুষদের পোশাক পরিচ্ছদের হোলসেলের ব্যাবসা করেন বলে জানায় । সে বলে সরাসরি পোশাক কোম্পানির কাছ থেকে মাল কেনায় তাঁর রেটও কম । আমার বিশ্বাস অর্জনের জন্য ওই মহিলা তাঁর আধার কার্ডের ছবি তুলেও আমায় পাঠায় । এই সব দেখেশুনে আমি ওর কথায় বিশ্বাস করে ফেলি । এছাড়া পোশাকের রেট কম থাকায় আমি কিছু পোশাক কেনার জন্য আগ্রহও প্রকাশ করি । পরে পাপিয়া রাউত নামে ওই তরুনী তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেল পাঠালে আমি আমার অ্যাকাউন্ট থেকে সেখানে ৬ হাজার টাকা ট্রান্সফার করে দিই ।’
স্বপ্না গুপ্ত জানান,যে ব্যক্তি বা সংস্থায় অর্ডার করা হয় সাধারনত তারা মালপত্র পাঠানোর আগে ট্রাকিং নম্বর(Tracking Number) দিয়ে দেয় । ওই নম্বর ধরে সার্চ করলেই অর্ডার করা সামগ্রী কবে পাওয়া যাবে তা জানতে পারা যায় । কিন্তু পাপিয়া রাউতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করার ৩ দিন পরেও কোনও সাড়াশব্দ নেই দেখে উনি তাঁকে ট্রাকিং নম্বর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন । আর ওইদিন বিকেল নাগাদ তাঁর মোবাইল ও হোয়াটস অ্যাপ নম্বর ব্লক করে দেয় ওই তরুনী ।
জানা গেছে,চলতি মাসের ৮ তারিখে বিকেলে স্বপ্নাদেবীর নম্বর ব্লক করে দেয় অভিযুক্ত তরুনী । পরের দিন সকালে স্বপ্নাদেবী তাঁর স্বামীকে নিয়ে মন্তেশ্বর থানায় গিয়ে ওই তরুনীর আধারকার্ড এর প্রতিলিপি ,ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর,মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন । স্বপ্নাদেবীর অভিযোগ, ‘পাপিয়া রাউতের বিভিন্ন নামে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে । সাধারনত সে পুরুলিয়া থেকে অনেক দুরের এলাকার মহিলাদের টার্গেট করে । দূর্গাপুর, মেদিনীপুর, বোলপুর, এমনকি গুজরাতের বহু মহিলাকে সে প্রতারিত করেছে । ৫৫০ থেকে ৯০০০ টাকা নেওয়ার পর সকলের নম্বর ব্লক করে দিয়েছে ।’
একই অভিযোগ করেছেন, দূর্গাপুরের কাঁটাবেড়িয়ার বাসিন্দা দিশা গড়াই নামে এক তরুনী । তাঁর অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে তিনি পাপিয়া রাউতকে ২০০ টাকা দামের চারটি কুর্তি অর্ডার করেছিলেন । কিন্তু তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কুর্তির দাম বাবদ ৮০০ টাকা পাঠাতেই ফোন ও হোয়াটস অ্যাপ নম্বর ব্লক করে দেয় । যদিও তিনি এনিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি । এই বিষয়ে দিশা গড়াই বলেন, ‘পাপিয়া রাউত অনেককেই প্রতারিত করেছে । কেউ কেউ থানায় অভিযোগ দায়েরও করেছেন । কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যাবস্থা নিচ্ছে না । শুনছি পুলিশ উলটে তাঁদের অনলাইনে কেনাকাটা না কিরার পরামর্শ দিচ্ছে । তাই আমি প্রতারিত হয়েও থানাও অভিযোগ দায়ের করতে যাবার সাহস পাইনি ।’
পুরুলিয়ার ওই তরুনীর গোটা পরিবার এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্বপ্না গুপ্ত,দিশা গড়াইরা । পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, টাকা ফেরতের কথা কেউ কেউ বললে পাপিয়া রাউত জানায় পুলিশ প্রশাসন,নেতারা সব তাঁর হাতে আছে । তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারবে না ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে স্বপ্না গুপ্তর অভিযোগপত্রে দেওয়া নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করা হলে ফোন রিসিভ করা হয়নি । ফলে অভিযুক্তর তরফ থেকে কোনও মতামত পাওয়া যায়নি । পুরুলিয়ার কুস্তোর এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া রাউত নামে যে তরুনীর বিরুদ্ধে মন্তেশ্বরের ওই গৃহবধু থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি কি সত্যই এই ঘটনায় জড়িত নাকি তাঁর নাম দিয়ে কোনও প্রতারনা চক্র গজিয়ে উঠেছে, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ ।।