এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ ডিসেম্বর : বৃহস্পতিবার সকালে তৃণমূল কাউন্সিলর ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি দুলাল সরকার ওরফে বাবলাকে গুলি করে খুন করা হয় । দুলাল মালদহের ঝলঝলিয়ার মাতাল মোড় এলাকায় দাঁড়়িয়ে ছিলেন। সেই সময়ে একটি বাইকে তিন জন যুবক মাথায় হেলমেট পরে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি চালায়। প্রথম দুটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও তৃতীয় গুলিটি দুলালের মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন । ঘটনার পর নবান্নে বসে সেই ঘটনার জন্য খোদ মালদার পুলিশ সুপারকে দায়ী করে মমতা বলেছিলেন, ‘পুলিশ সুপারের অপদার্থতার জন্য এটা হয়েছে।’ সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । কিন্তু মালদার তৃণমূল নেতার খুনের ঘটনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সহ সভাপতি তথা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি দাবি করেছেন,তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই খুন হতে হয়েছে দুলাল সরকারকে এবং খুন হবে জেনেও তার জন্য নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থাই মুখ্যমন্ত্রী করেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি ।
তরুণজ্যোতি একটা বাংলা খবরের চ্যানেলের প্রতিবেদনের স্ক্রীন শর্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের হত্যাকাণ্ড তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চরম পরিণতি হিসাবে সামনে এসেছে। এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুজন তৃণমূল কর্মী অভিজিৎ ঘোষ ও অমিত রজক এবং বিহারের দুই দুষ্কৃতী রয়েছে। অমিত রজকের বাড়িতে তৃণমূলের পতাকা পাওয়া যাওয়ায় এই হত্যার রাজনৈতিক যোগ নিয়ে প্রশ্ন আরও প্রকট হয়েছে। দুলাল সরকারের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে, তার স্বামীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল। বিশেষত, তার জীবনের হুমকির কথা জেনেও রাজ্য সরকার কেন তার পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নিয়েছিল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। যেহেতু এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব হোম ডিপার্টমেন্টের অধীনে আসে, তাই এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা প্রশ্নের উর্ধ্বে থাকতে পারেনা।’ তিনি আরও লিখেছেন,’এভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই ক্রমেই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। দুলাল সরকারের হত্যাকাণ্ড থেকে স্পষ্ট, দলের অভ্যন্তরে আস্থা ও নিরাপত্তার সংকট চরমে পৌঁছেছে। বিরোধীরা ব্যঙ্গ করে বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে “তৃণমূল কর্মীদের তৃণমূল কর্মীদের হাত থেকে বাঁচাও” প্রকল্প চালু করার প্রয়োজন। তৃণমূলের ক্ষমতার লড়াই দলের অভ্যন্তরীণ সংকটকেই স্পষ্ট করে তুলেছে, যা শুধু দলের জন্য নয়, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার জন্যও বিপজ্জনক।’
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার সকালে মালদা জেলার তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিনই ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ধৃতরা হল, সামি এবং টিঙ্কু। তাঁদের মধ্যে সামি বিহারের কাটিহারের বাসিন্দা। অপর জন টিঙ্কু ঘোষ, ইংরেজবাজারের গাবগাছি অঞ্চলের বাসিন্দা। পরে মালদহ জেলা পুলিশ এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশের যৌথ অভিযানে বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয় আব্দুল গনি (২৩) নামে আরও এক দুষ্কৃতীকে। সেও বিহারের বাসিন্দা । শুক্রবার এই তিন জনকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বিচারক তিন জনকেই ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি দুই ধৃত হল অমিত রজক এবং অভিজিৎ ঘোষ৷। আজ শনিবার এই দুই অভিযুক্তকে আদালতে তুলে ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত,মালদা জেলার প্রাক্তন জেলা সভাপতি এবং বর্তমান জেলা সহসভাপতি তথা সাত বারের কাউন্সিলর মালদা দুলাল সরকার ছিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রতিষ্ঠাতা নেতা । প্রাথমিকভাবে অনুমান, মোটা টাকার বিনিময়ে সুপারি কিলারদের দিয়ে খুন করানো হয়েছে দুলাল সরকারকে ।।