এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ নভেম্বর : বাংলাদেশের ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস প্রভুকে নিঃশর্ত মুক্তি ও বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে সনাতনী পরিষদ-এর ডাকে আজ শনিবার সন্ধ্যায় যাদবপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদ সভা হয় । সভার মুখ্য বক্তা ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতন নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দ্রুত জনবিন্যাস পরিবর্তনের একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি । শুভেন্দু বলেছেন, ‘আপনারা ভাববেন হয়তো ওখানে হচ্ছে এখানে বলছে কেন ? এখানে এই জন্য বলছি ১৯৭১ এর বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ২২ শতাংশ । আর আজকে মাত্র ৭.৫% । বুঝতে পারছেন তো? পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫১ সালে প্রথম জনগণনায় মুসলিমদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ । সবে তো সেনসাস শুরু হয়েছে । রেজাল্ট এলা দেখবেন পশ্চিমবঙ্গে হয়ে গেছে ৩৫ শতাংশ। যতক্ষণ ওরা পঞ্চাশের নিচে আছে ততক্ষণ সংবিধান । ততক্ষণ সেকুলারিজম । আর ৫০ পেরিয়ে গেলেই…।’উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বলেন,’আপনারা একত্রিত হন । কথা দিলাম উত্তরপ্রদেশের মত উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব ।’
তিনি বলেন,’সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ভাষা দেখছেন ? এই মহুয়া মজুমদার ওকে মন্ত্রী করেছে। বিধানসভা ফ্লোরে দাঁড়িয়ে কি বলছে? তোমাদের হাম দো হামারা দো । আর আমাদের হাম দো হামারা চার । রাজ্যের মন্ত্রী বলছে। কোন মৌলবী বলছে না । কোন হুজুর বলছে না । রাজ্যের মন্ত্রী বলছে । এরপরেও সনাতনীদের একটা অংশ তৃণমূলকে ভোট দিতে যান ।’ বামপন্থীদের ঘাঁটি বলে পরিচিত যাদবপুরে দাঁড়িয়ে সিপিএমের নেতাদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’এখানে তো আর একদল আছে । যারা প্যালেস্টাইনে বোম ফাটলে বলে আমেরিকার হাত ভেঙে দাও ইসরাইল দূর হটো । আর মিছিল বের হলে বলে ‘তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম’ । আর বাংলাদেশের হিন্দু মরলে ডক্টর সুজন চক্রবর্তী, খোকন ঘোষ দস্তিদার, মীনাক্ষী, আর এখানে একটা কে দাঁড়িয়ে ছিল যেন সৃজন না সুজন এদের মুখ এখন সেলাই করা । এরা আবার পরে নামবে । বলবে ইনকিলাব জিন্দাবাদ । পরে নামবে তৃণমূলের সুবোধ সরকার, সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্য্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে গো মাংস খাবে । হিন্দুদের অপমান করবে আর বলবে আমরা সেকুলার । তাদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বলেন, যতক্ষণ না ওরা ৫০ পেরুচ্ছে বলে নেন । পঞ্চাশ পেরুলে আর সেকুলার শব্দ থাকবে না ।’
মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে তিনি বলেন,’ওপারে জিহাদী ইউনুস আর এপারে ইউনূসের আদর্শ বোন মমতা ব্যানার্জি, দুজনেই এক । ওখানে মন্দির ভাঙছে আর এখানে ইনি দুর্গামূর্তি ভাঙছেন । দুজনের মধ্যে কোন তফাৎ নেই । তাই ওপারের বাঙালি হিন্দুরা যেমন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে , আমাদেরও পশ্চিমবঙ্গকে যাতে তালেবানদের হাতে না চলে যায়, হিন্দু জনসংখ্যা যাতে কমে না যায়, রোহিঙ্গা মুসলমানের হাতে যাতে বাংলায় চলে না যায়, তার জন্য আমাদেরকেও লড়ে যেতে হবে । যাদবপুর সনাতন পরিষদের পক্ষ থেকে আজকে সবে শুরু । আগামী দিনে এর ব্যপ্তি আরো বাড়বে।’পাশাপাশি তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ধর্ম রক্ষা কমিটি গড়তে হবে । তা না হলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না ।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ও তার দলের লোকরা বলেন যে ধর্ম যার যার উৎসব সবার । আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমি আপনাদের বলছি ধর্ম যার যার ধর্ম রক্ষা করার দায়িত্বও তার তার ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’গতকাল যখন চট্টগ্রাম থেকে হিন্দুরা আমায় ফোন করে বলছেন অফিস যেতে পারলাম না, স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা যেতে পারল না, দোকান খুলতে পারল না, কাল শুক্রবারও এগারোটা মন্দির ভেঙেছে । কাউকে ছাড়েনি । ইসকনের মন্দির, বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দির, ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশনের মন্দির, দুর্গা মাতার মন্দির, মাতা কালীর মন্দির, মহাদেবের মন্দিরের শিবলিঙ্গ, রাধা মাধবের মন্দির,এবং সবচেয়ে কষ্ট লাগছিল যখন চট্টগ্রাম থেকে, মৌলভীবাজার থেকে, রংপুর থেকে বলছে যে গলায় কন্ঠি দেখলে আর হাতে শাখা পলা দেখলে আমাদেরকে মারছে । ভাবতে পারেন কোথায় নিয়ে গেছে ? যে দেশ ১৯৭১ সালে ভারতবর্ষ সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানকে রুখে দিয়ে, ১৭ হাজার আর্মি আর বিএসএফ শহীদ হয়েছেন বাংলাদেশ সৃষ্টি করার জন্য । ৩০০০০ যে শহীদ হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি হওয়া বাঙালি হিন্দু । ওই দেশে মাথায় টিকা, মাথায় শিখা, গলায় কন্ঠি,মহিলাদের শাখা পড়া সিঁদুর আর মঙ্গলসূত্র রাখা যাবে না ।’
রাজ্যে অনুপ্রবেশের বাড়বাড়ন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দায়ি করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘বিএসএফকে ৭২ জায়গায় বেড়া দিতে দেয়নি মমতা ব্যানার্জি । বিজেপি সরকার এলে এক মাসের মধ্যে বিএসএফকে জমি দেব । বেড়া কমপ্লিট করবে ভারত সরকার । আর এক কোটি রোহিঙ্গাকে খুঁজে খুঁজে বের করে চুলের মুঠি ধরে ওপারে পাঠাবো আমরা ।’ তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন,’বাঁচান বাংলাকে । যেমন উত্তর প্রদেশ এবং আসামকে যোগীজি এবং হেমন্ত বিশ্ব শর্মাজি বাঁচিয়েছেন ।’
বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকা অবমাননা প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’কি সাহস! ভারতের জাতীয় পতাকায় পা দিয়ে কলেজে ঢুকছে বের হচ্ছে । এক্ষুনি যদি আদানি বিদ্যুৎ বন্ধ করে ৮০ ভাগ অন্ধকারে চলে যাবে । সবে তো আলু ১২০, পিঁয়াজ দেড়শ, লঙ্কা ৪০০ । বাকিটাও দেখতে পাবেন । পাকিস্তানে যেমন ১ কেজি আটার দাম ৪০০ টাকা, এক লিটার পেট্রোল হাজার টাকা, তেমনি এই ইউনূসের বাংলাদেশের অবস্থা কি হবে আপনারা দেখতে পাবেন । ভারত থেকে এক কেজি পেঁয়াজ না পাঠালে চিৎকার পড়ে যায় । আর ভারত হটাও ? ভারতবর্ষে রুগি পাঠাবেন না। করাচি লাহোরে পাঠাও ।’ কলকাতার কিছু চিকিৎসকের বাংলাদেশিদের চিকিৎসা পরিষেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক ডাক্তারবাবু সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছেন আগে দেশ পরে রোজগার । বাংলাদেশেদের রোগী দেখবো না । আমি এই ডাক্তার বাবুদের হ্যাটস অফ করি ।’।