এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তরপ্রদেশ,২২ অক্টোবর : উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বিঘাপুর কোতোয়ালি এলাকার রানীপুর গ্রাম মুসলিম অধ্যুষিত৷ এই গ্রামে মুসলমানদের ১৩০টি বাড়ি এবং হিন্দুদের মাত্র ৩০টি ঘর । মুসলিমদের মসজিদ থাকলেও এযাবৎ হিন্দুদের তেমন কোনো মন্দির ছিল না । তাই এলাকায় একটা মন্দিরের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল । কিন্তু মন্দির নির্মান রুখতে এবারে মুসলিম মহিলাদের আসরে নামিয়ে দিয়েছে কট্টরপন্থীরা । সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের নারীরা মন্দির নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ‘মন্দিরের ঘণ্টা বাজলে তাদের সমস্যা হবে। তাই তারা কোনো ভাবেই ওই মন্দির তৈরি হতে দেবে না। এদিকে যে পরিবার মন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মুসলিমদের চাপের কারণে তারা উন্নাও থেকে লখনউতে চলে গেছে বলে জানিয়েছে হিন্দি নিউজ পোর্টাল ওপি ইন্ডিয়া ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,রানীপুর গ্রামের মুসলিম মহিলারা প্রকাশ্যে মন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করেছে এবং উস্কানিমূলক বক্তব্যও দিয়েছে । সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ছে তাদের উত্তেজক বক্তব্যের ভিডিও। মন্দিরের বিরোধিতাকারী মুসলিম মহিলারা বলছেন, মন্দিরের ঘণ্টা বাজলে তাদের সমস্যা হবে । ইতিমধ্যে, যে পরিবার মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা হয়রানির কারণে গ্রাম ছেড়ে রাজধানী লখনউতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে এই অভিবাসন স্থায়ী নাকি অস্থায়ী সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।
একইসঙ্গে পুরো বিষয়টিতে প্রশাসনের মনোভাব আগের মতোই রক্ষণাত্মক। প্রশাসন বিষয়টি শান্ত করার চেষ্টা করছে। এসডিএম সদর ক্ষিতিজ দ্বিবেদীর বক্তব্যও এসেছে। তিনি জমি নিয়ে কোনো সমস্যার কথা অস্বীকার করেছেন। এসডিএম জানান, বিরোধপূর্ণ জমির পরিমাপ করে দেখা গেছে সেটি বসতিপূর্ণ জমি। প্ল্যাটফর্মটি জনবহুল জমিতে হলে কোন সমস্যা নেই। তবে মন্দিরের ছাদ ঢালু হতে না দেওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এই বিতর্কে এএসপি অখিলেশ সিংয়ের বলেছেন, মন্দিরের ছাদ তৈরির জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। অনুমতি চাওয়া হলে মন্দির নির্মাণে কেউ বাধা দিতে পারবে না। উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার মতো তথ্য পুলিশের কাছে নেই। পুলিশ পুরো বিষয়টির দিকে নজর রাখছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন কেন অস্বীকৃতি জানাচ্ছে ?
সংবাদ মাধ্যমটি আভ্যন্তরীণ তদন্তে জানতে পেরেছে যে পুলিশ ও প্রশাসন বিষয়টিকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করছে। এসডিএম একটি বিবৃতি দেয় যে মন্দির নির্মাণের জন্য কেউ অনুমতি চাইতে আসেনি, তবে জমির পরিমাপের কথা বলে। যদি কোন অভিযোগ না থাকে, তাহলে পরিমাপ জানলো কি করে প্রশাসন ? একইসঙ্গে এএসপি বলেন, মন্দির নির্মাণের অনুমতি চাওয়া হলে অনুমতি পাওয়ার পর কেউ মন্দির নির্মাণে বাধা দিতে পারবে না।
জানা গেছে, গ্রামে একটি শিব মন্দির রয়েছে, যা ৭০ বছরেরও বেশি পুরনো। এই মন্দিরের প্ল্যাটফর্মে, হিন্দু পরিবারগুলি তাদের ধর্মীয় আচার যেমন উপনয়ন এবং বিবাহ অনুষ্ঠান পালন করে। মন্দিরের প্ল্যাটফর্মের চারপাশে দেয়াল ও স্তম্ভ রয়েছে, কিন্তু ছাদ স্থাপনের কাজ এখনও অমীমাংসিত, কারণ নিহাল, আনিস খান, আসগর খান, শোয়েব, সেলিম, ইউনুসের মতো গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামী মৌলবাদীরা প্রথম থেকেই মন্দিরের ছাদ নির্মাণের বিরোধিতায় সরব হয়েছে । ইসলামিক মৌলবাদীরা বলছেন, মন্দির থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে একটি মসজিদ রয়েছে। মন্দির নির্মাণের কারণে তাদের নামাজে সমস্যা হবে। কিন্তু নামাজের সময় মাইকের আওয়াজে স্থানীয় হিন্দুদের সমস্যার বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিতে নারাজ । স্থানীয় হিন্দুদের অভিযোগ যে এটাই মুসলিমদের পর ধর্ম অসহিষ্ণুতার একটা জলজ্যান্ত প্রমান । এখন দেখার বিষয় যে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় মন্দিরটি নির্মিত হয়, নাকি ইসলামী মৌলবাদীরা মন্দির নির্মাণ বন্ধ করে দেয়।
উন্নাও পুলিশ একটা বিবৃতিতে বলেছে,’উক্ত ঘটনাটি প্রায় ১৫ দিনের পুরানো এবং পুলিশের নজরে এসেছে।যার মধ্যে একটি রয়েছে ভিঘাপুর থানার অন্তর্গত রানীপুর গ্রামে। একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে এক পক্ষের দ্বারা পূজা করা হয় এবং এর উপর স্থায়ী নতুন নির্মাণ কাজ শুরু হয় । যার উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য পক্ষের সঙ্গে মতানৈক্য ছিল । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিঘাপুর থানার পুলিশ। উভয় পক্ষকে অবহিত করা হয় যে, উল্লিখিত ধরনের শুধুমাত্র সরকারি আদেশ জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ করা যায়। বর্তমানে সেখানে একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যার উপর কোন নির্মাণ কাজ করা হয়নি। ঘটনাস্থলে শান্তি বজায় রয়েছে।’।