লাভ জিহাদ সংক্রান্ত একটি মামলায়, উত্তরপ্রদেশের বেরেলির ফাস্ট ট্র্যাক আদালত ২৫ বছর বয়সী মহম্মদ আলিম নামে অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রবি কুমার দিবাকর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। এ ধরনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিচারক বলেন, লাভ জিহাদের মূল উদ্দেশ্য হলো জনসংখ্যা যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের কিছু নৈরাজ্যবাদী উপাদান দ্বারা ভারতের বিরুদ্ধে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। বিচারক বলেন, লাভ জিহাদের আওতায় হিন্দু মেয়েদের ফাঁদে ফেলে তাদের ধর্মান্তরিত করা হয় যাতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ ষড়যন্ত্রে বিদেশি অর্থায়ন নেই তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটা করা হচ্ছে শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য ।
আদালতের এই মন্তব্য হয়তো সেই সব উদারপন্থী -বামপন্থীদের হজম হবে না যারা ‘লাভ জিহাদ’ শব্দের অস্তিত্বকে সর্বদা অস্বীকার করে আসছে… অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এই লাভ জিহাদ শুধুমাত্র ইসলামি মৌলবাদীদের সৃষ্টি। এ জন্য নিয়মিত ব্রেন ওয়াশিং করা হয়। কথিত আছে যে, কোন হিন্দু মেয়েকে এভাবে ফাঁদে ফেলে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে বিয়ে করলে সে নাকি স্বর্গলাভ করবে ।
আপনি যদি এটি বিশ্বাস না করেন তবে ২০২২ সালের একটি পুরানো কেস পড়ুন। মোহাম্মদ আলম নিজের নাম ও ধর্ম পরিচয় লুকিয়ে, অনুজ প্রতাপ সিং পরিচয় দিয়ে, একটি হিন্দু মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, সে মেয়েটিকে বোঝায় যে সে একজন হিন্দু এবং তারপর তাকে বিয়ে করে। গোপন কথা জানাজানি হলে মোহাম্মদ আলম মেয়েটির অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল করে তাকে গুলি করে মারার হুমকি দিতে থাকে। প্রকাশ্যে হিন্দুদের গালিগালাজও শুরু করেন। একবার সে মেয়েটিকে গুলিও করে, কিন্তু মেয়েটি পালিয়ে যায়।
এত কিছু করার পর আলম তার স্ট্যাটাসে কী আপডেট করেছেন তা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অশোভন শব্দ ব্যবহার করে লিখেছেন- ‘যাই করেছি, স্বর্গ পেয়েছি’। স্পষ্টতই কেউ তাকে বলেছে যে হিন্দু মেয়েকে ফাঁদে ফেলা, তাকে ধর্ষণ করা, তাকে ইসলাম গ্রহণ করা, এসবই ইসলে স্বর্গে যাওয়ার উপায়, সেজন্যই সে এমন করেছে…!
বাংলাদেশেও চলছে লাভ জিহাদ খেলা । আপনারা জেনে অবাক হবেন যে লাভ জিহাদিরা তাদের খেলা শুধু ভারতেই নয়, বাংলাদেশেও চালিয়ে যাচ্ছে । মিডিয়া রিপোর্টগুলিতে বলা হয়েছে যে হিন্দু মেয়েদের ফাঁসাতে জিহাদিদের লাখা লাখ টাকা পুরষ্কৃত পর্যন্ত করা হয়েছে মৌলবাদী সংগঠনগুলির দ্বারা । বাংলাদেশে এই ধরনের ফতোয়া ভাইরাল হয়েছিল যাতে বলা হয়েছিল যে হিন্দু মেয়েদের লাভ জিহাদে ফাঁসিয়ে তাদের ধর্মান্তরিত করা হবে। ফতোয়ায় ৫০ হাজার থেকে ৫০ লাখ বাংলাদেশি মুদ্রা পুরস্কার দেওয়ার কথাও রয়েছে। এই ফতোয়ার অনুলিপি সংগঠনের প্রতিটি জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে পাঠানো হয়েছে । সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ফতোয়া ভাইরালও হয়েছিল।
এসব প্রমাণের পরও যদি সন্দেহের উদ্রেক হয়, উদ্ধৃত করার মতো শত শত মামলা রয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালে, ১৫৩ জন মেয়ে লাভ জিহাদের শিকার হয়েছে ভারতে । একইভাবে,২০২২ সালে লাভ জিহাদের অন্তত ১৫০ টি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল । কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও ইসলামি মৌলবাদীদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন একবার তুলেছিলেন । কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দনও লাভ জিহাদের বাস্তবতা মেনে নিয়ে ২০১০ সালে, তিনি একটি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বলেছিলেন যে কীভাবে ইসলামিক মৌলবাদীরা আগামী ২০ বছরে কেরালাকে একটি মুসলিম রাজ্যে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে। এ জন্য তারা তরুণদের ব্রেন ওয়াশ করছে। তাদের টাকা দিচ্ছে। মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য যুবকদের হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করতে প্ররোচিত করা হচ্ছে। এই কমিউনিস্ট নেতা বলেছিলেন যে ইসলামি মৌলবাদীদের গোপন কৌশল কাজ করছে এবং যেকারণে রাজ্যে তাদের জনসংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।
সমীক্ষায় লাভ জিহাদের সত্যতাও উঠে এসেছে।সাধারণ মানুষও ধীরে ধীরে লাভ জিহাদের কালো সত্য বুঝতে পারছে। কিছুদিন আগে লাভ জিহাদের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন বেরিয়েছিল। এই সমীক্ষায়, সারাদেশে ১.৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়েছিল এবং ফলাফল ছিল যে দেশের ৫৩ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেছিল যে মুসলিম পুরুষরা লাভ জিহাদে জড়িত ।
এত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যারা বিশ্বাস করেন যে লাভ জিহাদ বলে কিছু নেই এবং ডানপন্থীরা শুধুমাত্র ধর্মকে ভালোবাসার মধ্যে এনে ঘৃণা ছড়ায়… তাদের প্রশ্ন করা উচিত যে, এই ধরনের ক্ষেত্রে যদি দুই জনের মধ্যে সম্পর্ক শুধুমাত্র প্রেমের হয়,তাহলে মিথ্যা দিয়ে শুরু কেন? নাম গোপন করে অন্য ধর্মের মেয়েকে ফাঁসানোর দরকার আছে কি ? তাকে বিয়ে করার আগে তার ধর্ম পরিবর্তন করার দরকার আছে কি? তাকে নামাজ পড়ার জন্য, তাকে ইসলামী রীতিনীতি মেনে চলার জন্য চাপ দেওয়ার দরকার কি আছে ? শুধু প্রেমের কথা হলে কি এমন ঘটনা সামনে আসত ? কখনোই আসত না ।
এগুলি লাভ জিহাদের ঘটনা যেখানে শুধুমাত্র এক ধরনের প্যাটার্ন দেখা যায়। দিল্লি হোক বা কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ বা কাশ্মীর… যেখানেই লাভ জিহাদের কথা শুনবেন, বুঝবেন শুধু ভিকটিম আর অভিযুক্তরা আলাদা কিন্তু বাকি সব কাহিনি একই। অনেক সময় লাভ জিহাদের শিকাররা পালানোর সুযোগ পায় এবং তাদের অগ্নিপরীক্ষা বর্ণনা করে, কিন্তু এমন অনেকেই আছে যারা একবার ফাঁদে আটকা পড়লে তা থেকে বের হতে না। তারপর হয় তাদের মৃতদেহ বা লাশের টুকরো পাওয়া যায় বস্তাবন্দি অবস্থায় অথবা রেফ্রিজারেটরের মধ্যে । তবে সবথেকে পরিতাপের বিষয় হল যে লাভ জিহাদের বিষয়ে ভারতের দুর্বল আইন এবং তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির ভোটব্যাংকের জন্য জিহাদিদের প্রতি নরম মনোভাব,যা এই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রুখতে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে । এছাড়া মাঝে মাঝে বিচার ব্যবস্থার ‘অদ্ভুত রায়’ এই চক্রকে উজ্জীবিত করতে সহায়তা করে বলে অভিযোগ ।
কংগ্রেস শাসিত কর্ণাটকে লাভ জিহাদের নতুন কৌশল প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ একটি বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে কোনও মুসলিম পুরুষ হিন্দু মেয়ের সাথে কেনাকাটা করতে এলে তারা ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবে ৷ কিন্তু যখনই কোনও হিন্দুত্ববাদী দল এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে তখন কংগ্রেসের সরকার “গঙ্গা- যমুনা তাহজিব” নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নেবে বলে অভিযোগ ।।