ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ । চীনের কাছ থেকে ভারত এই ‘কৃতিত্ব’ ছিনিয়ে নিয়েছে ৷ এই পরিস্থিতির কারনে ভারত সরকার দুই সন্তান আইন আনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে । কিন্তু ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’ ভারতের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ । ঠিক কত কোটি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী বর্তমানে ভারতে রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি । এই কারনে সিএএ/এনআরসি আইন পাশ করেছিলেন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার । কিন্তু সেই দুই আইন দেশ জুড়ে লাগু করা এবং অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সব চেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের ‘ভোটব্যঙ্ক রাজনীতি’ । পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার ও আধার কার্ড পর্যন্ত করে দেওয়া হচ্ছে । তাই তাদের প্রত্যাবর্তনের কথা উঠলেই সিএএ/এনআরসি আইনকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে জঙ্গি আন্দোলন শুরু করে দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস,কংগ্রেস,সমাজবাদী পার্টি, বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি৷
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকাও কিছু কম নয় । অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাবাসন তো দুরের কথা, সরকারি জায়গা জবরদখল করে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের উচ্ছেদের কথা উঠলেই সুপ্রিম কোর্টের ‘প্রবল মানবিক’ বোধ জেগে ওঠে । সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়া এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চের সাম্প্রতিক একটা নির্দেশে তারই প্রমান পাওয়া যায় । উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানি বনফুল পুরায় ৭৮ একর সরকারি জমি জবরদখল করে বসবাসকারী ৪,৩৬৫ পরিবারকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন বিচারপতির বেঞ্চের মানবিকতা জেগে উঠে এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় যে আগে ওই পরিবারগুলিকে পুনর্বাসন দিতে হবে । আদালত বলেছে যে রেলওয়ে দাবি করেছে যে এই জমি তাদের মালিকানাধীন, যার মানে রেলের উপরও কোন আস্থা নেই সুপ্রিম কোর্টের ওই তিন বিচারপতির ।
অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের কথা অনুযায়ী, ৫০ হাজার মানুষের বসতি স্থাপনের কাজটা সরকারের আগে করা উচিত । এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীরা অবৈধভাবে রেলওয়ের লাখ লাখ একর জমি দখল করে রেখেছে এবং সরকার যদি সবাইকে জমি বা বাড়ি দেয় তাহলে দেশের অর্ধেক জমি দখল করে নেবে এরা । কেউ কেউ সুপ্রিম কোর্টকে কটাক্ষ করেছেন,সর্বোচ্চ ভূমি জিহাদ করার জন্য আদালত আর রকটি “ওয়াকফ বোর্ড” তৈরির করার সূযোগ করে দিয়েছে ৷
সম্প্রতি, লখনউয়ের আকবরনগরে ১৩২০ টি অননুমোদিত বাড়ি এবং বিল্ডিং ভেঙে দেওয়ার আগে, সুপ্রিম কোর্ট তাদের প্রধানমন্ত্রী আবাস প্রকল্পের অধীনে বিকল্প বাড়ি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেখানেও বেশিরভাগ মানুষই ছিল অনুপ্রবেশকারী। অঅর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী আবাসন প্রকল্প ভারতীয় জনগণকে নয়, অনুপ্রবেশ কারীদের ঘর দেবে এবং দেশ এই অনুপ্রবেশ কারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। একটি অসমর্থিত সূত্রের হিসেব অনুযায়ী, ভারতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬ কোটি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী রয়েছে, যাদের অননুমোদিতভাবে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে এবং দাঙ্গা সৃষ্টি ও অন্যান্য অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ । অথচ উত্তরাখণ্ডের বনফুল পুরায় ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী যে একটি বিশাল দাঙ্গা হয়েছিল তাতে এই অনুপ্রবেশকারীদের মূখ্য ভূমিকা ছিল । সুপ্রিম কোর্ট যাদের উপর স্নেহ বর্ষণ করছে, সেই দাঙ্গাকারীদের নেতা ছিল কোটি টাকার মালিক আব্দুল মালিক । যিনি সরকারি সম্পত্তি বিক্রি পর্যন্ত করে দিচ্ছিল । সরকার তাকে ২.৪৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নোটিশ পর্যন্ত দিয়েছিল । অথচ সেই নোটিশ বাতিল এবং তাকে সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস করে দেওয়ার মানসিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে আদালতের ৷
এর আগে ২০২০ সালে দিল্লিতে ৪৮,০০০ টি কাঠামো ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে হাজার হাজার মানুষকে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার এবং তাদের মৌলিক মানবিক মর্যাদা এবং তাদের মাথার উপর একটি ছাদ বিবেচনা না করে ঠিক এভাবে সরানো যাবে না। অধিকার রক্ষা করা প্রয়োজন। অথচ এই সমস্ত হাজার হাজার লোকেরা অনুপ্রবেশ করে এবং বসতি গড়ে তোলে । এখন প্রশ্ন যে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকারীদের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ সুপ্রিম কোর্ট ভারতকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে না তো ?
জনৈক এক নেটাগরিক মন্তব্য করেছেন,কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট হয়ত ভুলে যায় যে ভারতের সংবিধান ভারতীয়দের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার জন্য, বিদেশী অনুপ্রবেশ কারীদের জন্য নয় । সুপ্রিম কোর্টের এই প্রকার মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করে তিনি মন্তব্য করেছেন, ইওর অনার, হিন্দুস্তান তোমার বাপের সম্পত্তি নয় যা তুমি টুকরো টুকরো করে অনুপ্রবেশ কারীদের মধ্যে বণ্টন করছ, তা করার অধিকার তোমার নেই। আপনারা ভোটব্যাংক যোগ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ ভাগ করতে সহায়তা করছেন । বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের জন্য যদি আপনার বুকে এত দরদ তাহলে তাদের আপনার নিজের জমি দিন যাতে তারা তাদের বাড়িঘর তৈরি করতে পারে।।