এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৪ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তরুনী চিকিৎসককে গনধর্ষণ-হত্যা নিয়ে প্রশ্ন করা বর্ষীয়ান সাংবাদিক অজিত অঞ্জুমকে ব্লক করে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র । ব্লক করার স্ক্রীন শর্ট শেয়ার করে অজিত অঞ্জুম এক্স-এ লিখেছেন,’বাংলার ডাক্তার মেয়ের সাথে যে নৃশংসতা ঘটেছিল সে বিষয়ে প্রশ্ন করে আমাকে ট্যাগ করে কী করলেন মহুয়া মৈত্র ? বাহ ম্যাডাম বাহ।প্রতিদিন আপনি তীক্ষ্ণ মনোভাব নিয়ে মোদীর সরকারকে প্রশ্ন করেন এবং যখন আমরা আপনার সরকারকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, আপনি তা অবিলম্বে ব্লক করে দেন। আপনি একটি প্রশ্ন শুনতে চান না ? আপনি শুধু জিজ্ঞাসা করতে জানেন? আপনি কি শুধু মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর উপদেশ দিতে জানেন? আপনার শাসনে একটি মেয়ের সাথে নির্মম আচরণ করা হয়েছিল এবং আপনাকে কোন প্রশ্নও করা যাবে না ? কিছু মনে করবেন না। তাই তো মানুষ বলে- হিপোক্রেসিরও সীমা আছে।’ এদিকে একজন বর্ষীয়ান সাংবাদিককে ব্লক করে দেওয়ায় নিন্দায় সরব হয়েছেন নেটিজেনরা । কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন,’এটা করে আদপে উনি নিজের ক্ষতি করলেন ।’
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের ৩১ বর্ষীয়া মেধাবী মহিলা চিকিৎসককের গনধর্ষণ ও অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে খুনের ঘটনার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এসেছে । সেই রিপোর্ট দেখে শিহরিত গোটা দেশ । রিপোর্টে নিহত তরুনীর পেলভিস ও কাঁধের হাড় ভাঙার কথা বলা আছে । এছাড়া হাত,পাসহ গোটা শরীরে রয়েছে ক্ষত । দু’চোখ ও মুখ থেকে রক্তের স্রোত, মুখ ও নখে ক্ষতসহ মোট ১১ টি আঘাতের কথা বলা হয়েছে হাতে লেখা ওই রিপোর্টে । আর জি করের মেডিকেল পড়ুয়ারা ক্যামেরার সামনে দাবি করেছেন যে নিহত চিকিৎসকের শরীরে অন্তত ৩ জন পুরুষের বীর্য পাওয়া গেছে । এই গনধর্ষণ-খুনের মামলায় পুলিশ ভবানীপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় রায় নামে একজন মধ্য বয়সী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে । যাকে একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে বলা হচ্ছে । পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের কথায় ধৃত ব্যক্তি হল মূল আসামি । কিন্তু দাবি করা হচ্ছে যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতাদের ছেলে বা ভাগনেরা এই বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত৷ আর তাদের আড়াল করতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পরামর্শে বিষয়টি ভিন্ন পথে পরিচালনার উদ্দেশ্যে বিনীত গোয়েল পরিকল্পিতভাবে মানুষের চোখে ধুলো দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ । ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে ‘ধনঞ্জয়’ বানানোর চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতারা ।
পুলিশ কমিশনারের তদন্ত প্রক্রিয়া এবং আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সম গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন খোদ কলকাতা হাইকোর্ট । মঙ্গলবার জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময় এই গনধর্ষণ-খুনের ঘটনায় একরাশ প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ । মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উপর আস্থা হারিয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে সরব হচ্ছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি । এদিকে আর জি কর হাসপাতালের যে সেমিনার হলে তরুনী চিকিৎসকের নগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল,তার কিছুটা পাশেই কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে দেওয়াল ভেঙে পুণঃনির্মানের কাজ ঘিরে ‘প্রমান লোপাট’-এর চেষ্টার অভিযোগ জোরালো হচ্ছে ।
এরই মাঝে কামারহাটিতে নিহত তরুনী চিকিৎসকের বাবা-মাকে পাশে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে তরুনীর মৃতদেহের হাড়হিম করা বিবরণ দিতে শোনা গেছে এক মহিলা প্রতিবেশীকে । ওই মহিলাকে বলতে শোনা গেছে,মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন তরুনীর বাবা-মা । পুলিশের কাছে তারা বারবার হাত জোড় করে তাদের যেতে দেওয়ার জন্য কাতর আকুতি জানান তারা । কিন্তু তিন ঘন্টা পর তাদের হাসপাতালের সেমিনার হলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় । তিনি বলেন, ভিতরে গিয়ে তারা দেখেন তাদের মেয়ের নগ্ন দেহ পড়ে রয়েছে সেখানে । তরুনীর এক পা উত্তরে এবং অন্য পা দক্ষিণ দিকে ছড়ানো । চোখ-মুখ ও গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্তের স্রোত । সারা শরীরে ক্ষত । তার প্রশ্ন,মেয়েটার পেলভিস হাড় না ভাঙলে কিভাবে তার দু’পায়ের অবস্থান অমন হতে পারে ? একথা বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেলেন ।।