প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ জুলাই : সালিশি সভায় হাজির না হওয়ার খেসারত গোনার দিন অবশেষে শেষ হল।জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার পর ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে থাকা থেকে অবশেষে মিললো মুক্তি।পুলিশের সহযোগীতায় শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার কুবাজপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারলেন বৃদ্ধা সাহানারা বিবি।সঙ্গে তাঁর ছেলে বসির আলি-ও থাকেন। পুলিশের উপস্থিতিতেই বৃদ্ধা তাঁদের বাড়ির দরজার তালা খুলে ঘরে ঢোকেন।৩৪ দিন বাদে ঘরে ফিরতে পেরে বৃদ্ধা সাহানারা বিবি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বৃদ্ধার প্রত্যাশা,আর হয়তো তাঁদের প্রতি কোন অন্যায় অবিচার হবে না। তিনি এবং তাঁর স্বামী ও ছেলে শান্তিতেই বাড়িতে বসবাস করতে পারবেন। চাষ আবাদও করতে পারবেন।
সপরিবার বৃদ্ধার বাড়ি ছাড়া হওয়ার ঘটনা সম্প্রতি তোলপাড় ফেলে দেয়।পাশাপাশি বিষয়টি জামালপুর ব্লকের চকদিঘী পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কুবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মহলেও উদ্বোগ বাড়ায় । নিজেদের ঘড়বাড়ি ছাড়া হয়ে থাকতে হওয়ার কারণ উল্লেখ করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী,রাজ্য পুলিশের ডি জি এবং জেলার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানান বৃদ্ধা সাহানারা বাবি ।
বাড়ি ছাড়া হতে হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সাহানারা বিবি মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রশাসনের কর্তাদের এই ভয়ংকর অভিযোগ করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর পুত্র বধূর করা খোরপোষের মামলা এখন বর্ধমান আদালতে বিচারাধীন।বৃদ্ধা তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন,আদালতে বিচারাধীন থাকা বৌমার করা সেই মামলা বিচার এলাকার তৃণমূলের নেতাা আজাদ রহমান করতে চান। সেইমত ’গত ১৩ জুন তাঁদের বাড়িতে আসে চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আজাদ রহমানের সাগরেদরা।তারা জানিয়ে যায়,আমাদের বৌমার করা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আজাদ রহমান চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস
অফিসে বিচারসভা ডেকেছে। ১৪ জুন সেই বিচার সভায় আমাদের পরিবারের সবাইকে হাজির থাকতে হবে।’ আজাদ রহমানের সাগরেদরা ওই দিন এও জানিয়ে যায়,“আমরা যদি আজাদ রহমানের বিচার সভায় হাজির না হই,তাহলে তারা আমাদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে, বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। এমনকি আমাদের প্রাণে মেরে দেওয়া হবে বলেও তারা হুমকি দিয়ে যায় ।
এমন হুমকি পেয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধা সাহানারা বিবির ছেলে শেখ বসির আলি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান।সাহানারা বিবির অভিযোগ অনুযায়ী,জীবনহানির শঙ্কায় তাঁরা কেউ ১৪ জুন চকদিঘীর তৃণমূল পার্টি অফিসে আজাদ রহমানের বিচার সভাতে যান নি।তার কারণে ওইদিন রাতেই লাঠি-সোটা ও ধারালো অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় আজাদ রহমানের ১২ জন সাগরেদ সহ আরো অনেকে।তারা বলতে থাকে,’আমরা শাসকের শাসন করতে এসেছি’।এই টুকু কথা বলেই তাঁর ছেলে বসির আলিকে ব্যাপক মারধোর শুরু করেদেয় আজাদের সাগরেদরা।তারা বসিরকে প্রাণে মেরে দিতে বসিরের গলায় পা তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।এমনটা দেখে তিনি ও তাঁর স্বামী তাঁদের ছেলে বসির কে বাঁচাতে যান।তখন তাঁদের উপরেও হামলা আক্রমণ শুরু হয়ে যায়।আজাদ রহমানের সাগরেদরা তাঁর শ্লীলতাহানি করা শুরু করলে তিনি ও তাঁর স্বামী চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন।
সাহানারা বিবির করা অভিযোগ অনুযায়ী,তাঁদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে কোন স্থানীয় কোন সহৃদয় ব্যক্তি জামালপুর থানায় ফোন করে দেন।সেই ফোন পেয়ে পুলিশ তাঁদের বাড়িতে পৌছায়।পুলিশ তাঁদেরকে উদ্ধার করে জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়।সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করে চিকিৎসকরা মারধোরে জখম বসির কে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বসির ওই দিনের হামলা মারধোরের ঘটনার সবিস্তার ফের জামালপুর থানায় গিয়ে জানান।কিন্তু কোন ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ঘর বাড়ি,ফসল ফলে থাকা চাষের জমি,গবাদি পশু সব ফেলে রেখে তাঁদের বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে বলে সাহানারা বিবি অভিযোগ করেছিলেন।
যদিও বৃদ্ধা সাহানারা বিবির আনা সমস্ত অভিযোগ চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ আজাদ রহমান অস্বীকার করেন। তিন জানান,বসির আলির পরিবাকে তিনি চেনেধ।তবে আদালতে বিচারাধীন থাকা বসির আলির বৌমার করা মামলার বিচারের জন্য তিনি কোন বিচারসভা বা সালিশি সভা ডাকি নি। খোঁজ নিয়ে নিয়ে তিনি জেনেছেন বসিরের পরিবারের সাথে যে ঘটনা ঘটছে সেটা গ্রাম্য বিবাদ জনিত ঘটনা। মিথ্যা করে ওই ঘটনার সঙ্গে নাম জড়ানো হয়েছে বলে আজাদ রহমান দাবি করেছিলেন । তবে আজাদ এমনটা দাবি করলেও রেহাই মেলে নি । পুলিশ সুপারের কাছে সাহানারা বিবির দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে জামালপুর থানার পুলিশ আজাদ রহমান সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে ।সেই মামলায় তারা সকলেই জামিন পেয়েছেন।
এর পরেই জাতীয় মানবাধীকার কমিশনের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা সাহানারা বিবি।তার পরেই পরিস্থিতি বদল হতে শুরু করে।অবশেষে পুলিশে সহযোগীতায় শুক্রবার পুলিশের সহযোগীতায় বাড়ি ফিরে আপাত স্বস্তিতে সাহানারা বিবি ও তাঁর ছেলে। এদিন সাহানারা বাবি জানান,তাঁর স্বামী অসুস্থ । স্বামীর চিকিৎসা চলছে । কয়েকদিন পর স্বামীকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসবেন বলে সাহানারা বিবি জানিয়েছেন, সাহানারা বিবির বাড়ি ফেরা নিয়ে এদিন আজাদ রহমান কোন মন্তব্য করতো চান নি । তিনি বলেন ,’এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।।