এইদিন ওয়েবডেস্ক,জম্মু-কাশ্মীর,১৫ জুলাই : সাম্প্রদায়িক সময়ে জম্মু-কাশ্মীরের রিয়াসিতে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বাসে সন্ত্রাসী হামলা ছিল সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা । এই হামলায় প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল শিশুসহ ৯ জন তীর্থযাত্রীর । আহত হয়েছিলেন আরও বেশ কয়েকজন । ঘটনার তদন্তে নেমে নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে একটা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে । এই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত হল স্থানীয় বাসিন্দা গরু ব্যবসায়ী হাকাম দীন (৪৫) । তদন্তকারী দল জানতে পারে যে মাত্র ৫,০০০ টাকার জন্য হাকাম দীন দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল । নাশকতার পূর্বাভাস পেয়েও সবকিছু জেনেশুনে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের সে থাকার জায়গা এবং রসদ জুগিয়েছিল ।
সংবাদ মাধ্যম ওপি ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে, হাকাম দ্বীন রাজৌরি জেলার বাসিন্দা। ২০শে জুন তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে মাতা বৈষ্ণো দেবী মন্দিরে কুলির কাজ করত । সেই কাজ ছেড়ে সে গরু কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করে । রিয়াসি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২০শে জুন তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর হাকাম দীনকে বিভিন্ন সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করে । সে তদন্তকারীদের কাছে জানিয়েছে,’সন্ত্রাসীরা পয়লা জুন ৫:৩০ নাগাদ প্রথমে তার বাড়িতে আসে এবং তাকে তিনজনের জন্য খাবার রান্না করতে বলে। তাদের একজনের নাম ‘মঞ্জুর ভাই’ এবং সে তার সঙ্গীদের জন্য বনে খাবার নিয়ে গিয়েছিল । জিজ্ঞাসাবাদের সময়, হাকাম দিন প্রকাশ করেছিল যে এই হামলার পিছনে লস্কর সন্ত্রাসীরা ছিল । ৭ জুন তিন সন্ত্রাসী আবার তার বাড়িতে এসে পাউনি নামের একটি জায়গার সন্ধান চায়। এখানেই বাসে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় তিন সন্ত্রাসী তার বাড়িতে সাড়ে তিন ঘণ্টা অবস্থান করে। তারা বাসের আগমন ও প্রস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল এবং হামলার স্থানও চিহ্নিত করেছিল । গত ৮ জুন সন্ত্রাসীরা তৃতীয়বারের মতো তার বাড়িতে চা খেতে এসে হামলার বিষয়ে আলোচনা করে। এরপর তারা খাবার নিয়ে চলে যায়।’ তদন্তকারী দল জানতে পারে, ৯ জুন তারা তাদের চিহ্নিত স্থানে ফিরে আসে এবং তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বিশেষ বাসের জন্য অপেক্ষা করে । তারা প্রথমে চালককে লক্ষ্য করে গুলি চালায় । চালক গুলিবিদ্ধ হলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়, এর পরেও সন্ত্রাসীরা বাসে গুলি চালাতে থাকে । হামলার পর সন্ত্রাসীরা হাকামকে ৫ হাজার টাকা দেয় এবং পালাতে সাহায্য চায়। সন্ত্রাসীরা হাকাম দ্বীনের আধার কার্ডও নিয়ে যায়।
এই মামলার তদন্ত জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের পরিবর্তে এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এনআইএ পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) এর কর্তারা এই হামলায় জড়িত ছিল বলে জানতে পেরেছিল। এখন তদন্তকারী সংস্থাগুলি রিয়াসি হামলায় জড়িত আরও দুই সন্ত্রাসীর স্কেচ তৈরি করেছে, যা হাকাম দ্বীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে প্রস্তুত করা হয়েছে। জম্মু- কাশ্মীরের সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহিতা শর্মা এনআইএ-র কাছে তদন্ত হস্তান্তর করার আগে হাকামকে “সন্ত্রাসীদের মূল সহযোগী” হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। নিরাপত্তা কর্মীরা মনে করেন যে সন্ত্রাসীরা সীমান্ত অতিক্রম করেছিল এবং এখনও বনে লুকিয়ে আছে। উভয় সন্ত্রাসীর স্কেচ প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুন, কাতরার শিব খোরি মন্দির থেকে মাতা বৈষ্ণো দেবীর মন্দিরে যাওয়ার সময় ৫৩ সিটের একটি বাসে সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে নয়জন নিহত এবং ৪১ জন আহত হয়। সন্ত্রাসীদের গুলির কারণে বাসটি রিয়াসিতে রাস্তা থেকে ছিটকে গিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়। রিয়াসি হামলার পর উপত্যকায় আরও দুটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, কাঠুয়া এবং ডোডায় । জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসির কান্দা এলাকায় তীর্থযাত্রীদের বাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি লোককে আটক করা হয়েছিল। এসএসপি আরও জানান যে আরও প্রমাণ সংগ্রহ করতে এবং লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের ধরতে অনুসন্ধান অভিযান অর্ণাস এবং মহোর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।।