প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ জুন : ’লাল ঝান্ডা’ পুঁতে দিয়ে এক তৃণমূল নেতার চাষ জমি জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ উঠলো এক তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার চকদিঘী পঞ্চায়েতের পাহাড়পুর গ্রামে । ঘটনা বিষয়ে জমি মালিক কাশিনাথ সরকার শুক্রবার ওই তৃণমূল নেত্রী শিখা রায় ও তাঁর ছেলে সুমন্ত রায়ের বিরুদ্ধে জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন । পুলিশ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে ।
কাশিনাথ সরকারের বাড়ি জামালপুরের চকদিঘীর পাহাড়পুর গ্রামে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা হিসাবেই এলাকায় তিনি পরিচিত। পুলিশকে এদিন কাশিনাথবাবু জানিয়েছেন,পাহাড়পুরে জ্যোৎসুবল মৌজায় ৩৩৩ দাগে তাঁর ৬৯ শতক চাষ জমি রয়েছে। ওই সম্পত্তিটি তাঁর বাবা হরিসাধান সরকার ১৯৪৯ সালে রেজিস্ট্রি দলিল দ্বারা ক্রয় করেন পাহাড়পুর গ্রাম নিবাসী ফকির বাগদির কাছ থেকে। যে সম্পত্তি তাঁর বাবার নামেই ভূমি দপ্তরে ’আর-এস’ ও ’এল-আর’ রেকর্ডে নথিমুক্ত রয়েছে।ওই জমিতে দীর্ঘকাল তাঁর বাবা চাষ করে এসেছেন বলে কাশিবাবু দাবি করেন।একই সঙ্গে তিনি জানান ,জীবিতাবস্থায় তাঁর বাবা হরিসাধন সরকার ওই ৬৯ শতক চাষ জমি দলিল করে তাঁকে লিখে দিয়ে যান ।
কাশিনাথবাবু দাবি করেন ,প্রায় ৭০-৭১ বছর ধরে তাঁর বাবা ও পরবর্তিতে তিনি ওই জমি চাষ করে আসছেন। কাশিনাথ বাবুর অভিযোগ, নিজেকে পাহাড়পুর এলাকার তৃণমূল নেত্রী বলে দাবিকরা ফকির বাগদির বৌমা শিখা রায় তাঁর ছেলে সুমন্ত রায় কে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কারুর ট্র্যাক্টর নিয়ে এসে জোরপূর্ব তাঁর জমি চষে দেয় । এরপর প্রথমে তারা তৃণমূল কংগ্রেস দলের একটি ঝান্ডা ওই জমিতে পুঁতে দেয় ।পরে আবার ওই জমিতে বেগুন চারা লাগিয়ে দিয়ে তৃণমূলের ঝান্ডা সরিয়ে শিখাদেবী ও তাঁর ছেলে লাল একটি ঝান্ডা পুঁতে দিয়ে বেআইনি ভাবে এদিন তাঁর জমির দখল নিয়েছে বলে কাশিনাথবাবু অভিযোগ করেছেন। ঘটনা বিষয়ে ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের অফিসেও এদিন তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কাশিনাথবাবু দাবি করেন, ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খাঁনের ইন্ধনেই শিখা রায় ও তাঁর ছেলে বেআইনি ভাবে তাঁর জমির দখল নিয়েছে ।তাই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্ব্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছেও এই বিষয়ে সবিস্তার অভিযোগ জানাবেন বলে এদিন কাশিনাথ বাবু জানান।
কাশিনাথ সরকারের আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে
তৃণমূলের নেত্রী শিখা রায় এদিন জানিয়েছেন , তাঁর শ্বশুরমশাই ফকির বাগদি পাগল ছিলেন । তার সূযোগ নিয়ে পূর্বে অনেকে তাঁর শ্বশুর মশাইয়ের জমি নিজেদের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন ।একই ভাবে তাঁর শাশুড়ির কাছ থেকেও জমি লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল । শিখাদেবী দাবি করেন,’ তাঁর শ্বশুর মশাই যে পাগল ছিলেন সেই সংক্রান্ত নথি(সার্টিফিকেট)
তাঁর কাছে আছে ’। শিখাদেবীর বক্তব্য তাঁর শ্বশুর যেহেতু পাগল ছিলেন তাই অন্য কাউকে তাঁর শ্বশুর সাজিয়ে তখনকার দিনে তাঁর জমি
বিক্রি করা সংক্রান্ত দলিল করে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে ।সেই কারণে শ্বশুরের সম্পত্তি
পুনরুদ্ধারের জন্যে তিনি আদালতে মামলা করেছেন।তবে শিখাদেবী নিজেই এদিন জানান , জ্যোৎসুবল মৌজায় ৩৩৩ দাগে তাঁদের এলাকার তৃণমূল নেতা কাশিনাথ সরকারের যে ৬৯ শতক চাষ জমি রয়েছে সেই জমি নিয়ে তিনি মামলা করেন নি ।তবে কাশিনাথ সরকার যেহেতু বারে বারে ১০৭ ধারা ও ১৪৪ ধারার নোটিশ পাঠিয়ে তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে হয়রানি করছেন তাই তার বদলা নিতেই ৩৩৩ দাগের ওই জমি চষে দিয়ে তিনি বেগুনের চারা লাগিয়ে দিয়েছেন । তবে রাতে নয় শুক্রবার দিনের আলোতেই তিনি এই কাজ করেছেন । আর ওই জমিতে তৃণমূলের কোনও ঝান্ডা নয়,একটা লাল কাপড়ের ঝান্ডা লাগিয়ে দিয়েছেন বলে শিখাদেবী জানিয়েছেন।
চকদিঘি পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা গৌরসুন্দর মণ্ডল বলেন , ‘শিখা রায় যা করছেন ঠিক করছেন না । উনি যেভাবে জোরপূর্ব পাহাড়পুর এলাকার লোকজনের সম্পত্তির দখল নিয়ে নিচ্ছেন সেটা আইন বিরুদ্ধ কাজ হচ্ছে । তা নিয়ে ওই এলাকার মানুষজন ক্ষোভে ফুঁষছেন । শিখাদেবী যেহেতু আদালতে মামলা করেছেন তাই ওনার আদালতের উপরেই ভরসা রাখা উচিত । শিখা রায়ের এমন কাজ কর্মের জন্যে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে । প্রশাসন এই বিষয়ে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’
এই বিষয়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে কে কি করছে সেটা তাঁর জানার কথা নয় । তিনি ঘটনা বিষয়ে কিছু জানেন না । কোথাও বেআইনি কিছু হয়ে থাকলে প্রশাসন তার ব্যবস্থা নেবে ।
বিজেপির জামালপুর বিধানসভার আহ্বায়ক জিতেন ডকাল বলেন , ‘শুধু বিজেপির লোকজনই তৃণমূলের সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন না । এখন সন্ত্রাসের হাত থেকে তৃণমূলের লোকজনও যে ছাড় পাচ্ছেন না তা চকদিঘির ঘটনা থেকেই পরিস্কার হয়ে গেল।’।