এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ জুন : গত চার জুন লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহর কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলাগুলিতে ভোট পরবর্তী হিংসা চলছে । তবে সৌভাগ্যের বিষয় যে ভোট পরবর্তী হিংসায় এখনো পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি । কিন্তু ভাঙচুর, লুটপাট, ভয় দেখানো, দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া, জল বা বিদ্যুৎ এর লাইন কেটে দেওয়া প্রভৃতি বিস্তর অভিযোগ উঠছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়,’বিরোধীদের অস্তিত্বকে শূন্য করে দিতে রাজ্যে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চলছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রশ্রয়ে ।’
বুধবার সন্ধ্যায় সল্টলেকে দলীয় কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ৫-৭ হাজার ঘরছাড়া রয়েছেন । কেন্দ্র বাহিনী থাকা অবস্থাতে ৮ থেকে ১০ হাজার অভিযোগ হয়েছে । বহু জায়গায় থানাতে অভিযোগ নেয়নি । পরে বিচারপতি কৌশিক চন্দ্রের বেঞ্চ ডিজিপির দুটো মেইল আইডি দিয়ে বলেছিলেন সেখানে অভিযোগ করতে । সেখানেও কয়েক হাজার অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে ।’ তিনি বলেন,’২০২১ সালের থেকে এবারের সন্ত্রাসের কায়দাটা একটু অন্যরকম । ওই বছর ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল । এবারে মৃত্যু নেই, কিন্তু প্রচুর আহত হয়েছে। এবারে যেটা ভয়ংকর ভাবে করা হয়েছে তাহলে বাজারের দোকানগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে । বিজেপির সমর্থক বা যে বুথে তৃণমূল ভোট পায়নি এই সমস্ত এলাকায় মূলত হিন্দুদের দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আইএসএফ বা বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার যারা রয়েছেন এমন কিছু মুসলিমও আছে তার মধ্যে । আমাদের শিবিরগুলোতে অনেক মুসলিম লোকজনও আছেন।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আসলে এরা চাইছে রাজ্যের একটা বড় অংশে বিরোধীদের অস্তিত্বকে শূন্য করে দিতে । এবারে যে সন্ত্রাসটা করছে সেটা কার্যত মধ্যযুগীয় বর্বরতা । কয়েক হাজার লোকের রেশন বন্ধ করে দিয়েছে। বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে । ট্রান্সফর্মার ফেলে দিয়েছে। এরকম বেশ কয়েকটা গ্রাম ও পাড়া রয়েছে। আর টালিগঞ্জ ও যাদবপুর সহ বিভিন্ন রুটে টোটো বা অটো চালাতে দিচ্ছে না । রাজ্যের প্রায় ১৫০ জায়গা থেকে এরকম আমরা অভিযোগ পেয়েছি । হিঙ্গলগঞ্জ, বাদুড়িয়া, কোচবিহারের তুফানগঞ্জ এর রামপুর বাজার, দিনহাটা, ক্যানিং, জয়নগর, কুলতলী মিলে ১৫০০ থেকে ২০০০ দোকান এখনো খুলতে দেওয়া হয়নি । একই ঘটনা ঘটেছে, আমি যেখানে বসে আছি বিধাননগরের পাশে ভাঙ্গরের চন্দননগরে । সেখামে একজন হাতুড়ে ডাক্তারের চেম্বার এবং ওষুধের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।’
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,’রাজ্য চলে যে সন্ত্রাস চলেছে তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রশ্রয় হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী এই কালচারটা ২০১৩ সাল থেকে শুরু করেন । ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী ভুমিকা যথেষ্ট ইতিহাসের বাচক ছিল । আমি ওনার সহযোগে ছিলাম, ওনার প্রচারক ছিলাম । ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর পরে সবচেয়ে বেশি সোফা আমি করেছিলাম । আমি সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী, মুখ থেকে পরিষ্কার শুনেছি যে একটা বড় অংশের মানুষ বিরোধীদলকে ভোট দিয়েছে তাদেরকে আমাদের পক্ষে আনতে হবে । তাই তখন বলা হয়েছিল বদলা নায় বদল চাই । কিন্তু ২০১৩ সালে আমি নিজে দেখেছিলাম যখন বিজ্ঞান ভবনে অর্থ কমিশনের সভার গেটে ঋতব্রতের নেতৃত্বে হামলা হল মুখ্যমন্ত্রী, অমিত মিত্র, সুব্রত মুখার্জির ওপরে, সেই রাতেই নির্দেশ এসেছিল সিপিএমের সমস্ত পার্টি অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দাও । তারপর এক রাত্রে ৩,৫০০ পার্টি অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছিল । তারপর থেকেই সমানে এটা রাজ্যের কালচার চলছে ।’।