এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাকিস্তানি,৩০ মে : পাকিস্থানের সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিস্টানদের বেঁচে থাকা কার্যত অসম্ভব করে দিয়েছে সেদেশের মুসলিম কট্টরপন্থীরা । সংখ্যালঘু মেয়েদের ধর্ষণ, অপহরণের পর ধর্মান্তরিত করে মুসলিম পুরুষকে নিকাহ করতে বাধ্য করার ঘটনা প্রায় প্রতিদিন ঘটে চলেছে । পাশাপাশি ধর্ম নিন্দার মিথ্যা অভিযোগে পুরুষদের পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে । আর হামলার সুযোগ নিয়ে মুসলিম জিহাদি মহিলারা হিন্দু বা খ্রিস্টানদের বাড়িতে দেদার লুটপাট চালাচ্ছে । গত ২৫ মে পাকিস্তানের সারগোধায় লাজার নাজির মসিহ নামে একজন নিরপরাধ খ্রিস্টানকে ধর্ম নিন্দার মিথ্যা অভিযোগে মুসলিম সন্ত্রাসী সংগঠন তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) একদল জঙ্গি নির্মমভাবে ইঁট ছুড়ে মেরে ফেলেছে । মসিহের বিরুদ্ধে কোরানের একটি কপি পোড়নোর অভিযোগ তোলা হয়েছিল । যদিও জানা গেছে যে মসিহের বাড়িতে কোরানের কপিটি পুড়িয়ে তাকে ফাঁসিয়েছিল তারই এক মুসলিম পরিচারিকা । এদিকেলাজার নাজির মসিহের বাড়ি ও জুতোর কারখানায় হামলার সময় বোরখা পরিহিত বেশকিছু মুসলিক জড়ো হয়েছিল এবং তারা বাড়ি ও কারখানায় ঢুকে দেদার লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ । পাকিস্তানি খ্রিস্টান ফারাজ পারভেজ নিজের দেশে ঘটে চলা ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগে খুন ও লুটপাট রুখতে আমেরিকার হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ।
সারগোধায় লাজার নাজির মসিহের হত্যাকাণ্ডের পর একের পর এক টুইট করেছেন ফারাজ পারভেজ । একটি টুইটে তিনি লিখেছেন,’মুসলিম মহিলারাও পাকিস্তানে মব লিঞ্চিংয়ে অংশগ্রহণ করছে : মিথ্যা ব্লাসফেমির অভিযোগ একটি সমস্যাজনক নতুন প্রবণতা । বিশ্ব একটি ভয়ঙ্কর যুগে প্রবেশ করছে কারণ তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) পুরুষ সদস্যরা পাকিস্তানের দরিদ্র ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে খ্রিস্টানদের উপর ধ্বংসযজ্ঞ ও বর্বরতা নিয়ে আসছে। সারগোধার মুজাহিদ কলোনির ঘটনায় দেখা গেছে যে একটি মুসলিম মহিলা স্কোয়াডকে তাদের খ্রিস্টান ভিকটিমদের বিরুদ্ধে মব লিঞ্চিং এবং বর্বরতার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং চালু করা হয়েছে। মুসলিম নারীরা তাদের পুরুষদের পাশাপাশি ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিচ্ছিলেন।আশ্চর্যজনকভাবে, ইসলামপন্থীদের ভয়ঙ্কর এবং ভয়ঙ্কর চেহারা অদূর ভবিষ্যতে দৃশ্যমান হবে, কারণ মুসলিম মহিলারাও ছিল যারা গৃহস্থালির জিনিসপত্র, নারীদের উপযোগী জিনিসপত্র এবং অলঙ্কার লুট করেছিল। প্রশ্ন হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসব নারীকে তদন্তের মুখোমুখি করবে কি না এবং বিচার হবে কিনা। উত্তর হল না, কারণ আদালত এবং তদন্ত সংস্থাগুলি আসলে তাদের সহায়তাকারী।’
তিনি ইউ এস স্বরাষ্ট্র বিভাগকে একটি চিঠি লিখে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন । চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘ বিষয়: হস্তক্ষেপের জন্য জরুরী আবেদন: সারগোধা, পাকিস্তানে খ্রিস্টান লেজার নাজির মসিহকে হত্যা ।’ এরপর তিনি লিখেছেন,’প্রিয় সেক্রেটারি অফ স্টেট, ব্লিঙ্কেন,২০২৪ সালের ২৫ মে তারিখে পাকিস্তানের সারগোধায় ঘটে যাওয়া একটি দুঃখজনক এবং গভীর উদ্বেগজনক ঘটনাটি আপনার জরুরি দৃষ্টিতে আনতে আমি লিখছি। লাজার নাজির মসিহ, একজন নিরপরাধ খ্রিস্টান, মিথ্যা ব্লাসফেমির জন্য মুসলিম তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের একদল অপরাধীদের দ্বারা প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি পাকিস্তানে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত এবং ক্রমবর্ধমান ঘৃণার কথা তুলে ধরে, এটি একটি সমস্যা যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে।’
তিনি লিখেছেন,’লেজার নাজির মসীহকে পিটিয়ে হত্যা শুধুমাত্র পাকিস্তানে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার তীব্রতাই তুলে ধরে না বরং এই নৃশংসতায় রাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়টিও প্রকাশ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে নারীরা সক্রিয়ভাবে স্লোগান দিচ্ছিল এবং নাজিরের পরিবারের লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডে জনতার নেতৃত্ব দিচ্ছিল। এই ঘটনাটি পাকিস্তানে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত নিপীড়ন এবং সহিংসতার একটি বিস্তৃত প্যাটার্ন প্রতিফলিত করে।
ক্ষোভের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে , এই ঘটনায় পাকিস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া গভীর উদ্বেগজনক। লেজার নাজির মসিহকে একটি সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে, এমন একটি সিদ্ধান্ত যা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। সরকার নাজিরের পরিবারকে তার সাথে দেখা করতেও বাধা দিয়েছে, সন্দেহ জাগিয়েছে যে তিনি ইতিমধ্যেই তার আঘাতে মারা গেছেন এবং কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের রক্ষা করতে এবং সত্যকে ধামাচাপা দিতে তার মৃত্যু গোপন করছে।’
ফারাজ পারভেজ লিখেছেন,’ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাকে আমার বিশ্বাস বলতে হবে যে লেজার নাজির মসীহ ইতিমধ্যেই মারা গেছেন, এবং পাকিস্তান সরকার একটি প্রতারণামূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে । এই ঘৃণ্য চালাকির লক্ষ্য হল হামলাকারীদের ন্যায়বিচার থেকে রক্ষা করা এবং পাকিস্তানে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্রকে স্থায়ী করা। এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে, আমি মার্কিন বিদেশ দপ্তরকে অনুরোধ করছি :
১)এই জঘন্য সহিংসতার নিন্দা জানাই এবং লাজার নাজির মসীহ ও তার পরিবারের বিচার দাবি করছি।
২) মব লিঞ্চিং এবং পরবর্তী মামলা পরিচালনার জন্য একটি স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করতে পাকিস্তান সরকারকে চাপ দিন।
৩)লাজার নাজির মসীহের অবস্থা সম্পর্কে অবিলম্বে সঠিক তথ্য প্রকাশের জন্য আহ্বান করুন এবং তার পরিবারকে তার কাছে প্রবেশের অনুমতি দিন।
৪)পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য শক্তিশালী সুরক্ষার জন্য আইনজীবী দিন যাতে এই ধরনের ট্র্যাজেডি পুনরাবৃত্তি না হয়।’
সব শেষে তিনি লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলার এবং তাদের ধর্ম নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির জন্য ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। পাকিস্তানে খ্রিস্টানদের দুর্দশা ভয়াবহ এবং এই সংকট মোকাবেলায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।আমি লাজার নাজির মসীহ এবং তার পরিবারের বিচারের জন্য আপনার দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছি।’।