প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ মার্চ : অশুভ শক্তির বিপরীতে শুভর জয়ের রঙে রাঙিয়ে ওঠার উৎসব হিসাবেই দোল উৎসব মান্যতা পেয়ে আসছে।শুধু দেবতাকে রাঙিয়ে তোলাই নয়, দোল উৎসবের সঙ্গে জীবনের নানা রংও মিশে আছে । সেই রঙের উৎসবকে আঁকড়েই সোমবার থেকে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর দোগাছিয়াতে শুরু হয়েছে বড় মিষ্টির মেলা। রসনাতৃপ্ত বাঙালি সেখানে পৌছে যাচ্ছেন হরেক রকম মিষ্টি সহ ১৫০০ টাকা মূল্যের পেল্লাই মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করতে। নানা মিষ্টন্নের স্বাদ আস্বাদনের হিড়িক ঘিরেই এখন জমজমাঠ দোগাছিয়ার বড় মিষ্টান্ন মেলা প্রাঙ্গন ।
ধর্মীয় উৎসবে হিন্দুদের মধ্যে দেবতাকে মিষ্টান্ন নিবেদনের রেওয়াজ রয়েছে।এটাকে ধর্মীয় রীতি, ভক্তি,কৃতজ্ঞতা এবং শুভর প্রতীক হিসাবে তারা মানে থাকেন। সেই রীতিকে পাথেয় করেই বড় মিষ্টান্নের মেলা বসেছে পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের দোগাছিয়ার পাঁচ শতাধীক বছরের পুরাতন দোল উৎসব প্রাঙ্গনে।দেল পূর্ণিমার দিন শুরু হওয়া ওই মেলা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে । চার দিনই চলবে মিষ্টির বেচা কেনা।তাই বহু মিষ্টান্ন কারবারী মেলা প্রাঙ্গনে মিষ্টির দোকান খুলে বসেছেন।সেইসব মিষ্টির দোকানে নজর কাড়ছে ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ ও ১৫০০ টাকা মূল্যের এক একটি পেল্লাই মিষ্টি। যার স্বাদ গ্রহন করতে দূর দূরান্তের বহু মানুষও ভিড় জমাচ্ছেন।শুধু মেলা প্রাঙ্গনে বসে মিষ্টি খাওয়াই নয়,বাড়ির লোককে চমক দিতেও অনেকে পেল্লাই মিষ্টি কিনে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। বড় মিষ্টির মেলা প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌছে দেখা যায় মেলা প্রাঙ্গনে ভিড় থিক থিক করছে । মেলায় থাকা মিষ্টির দোকান গুলিতে ঘুরে দেখা যায় হরেক রকমের মিস্টির সম্ভার। সন্দেশ, বরফি, রসগোল্লা ছাড়াও নানা রকমের ফিউশন মিষ্টিও দোকাল গুলিতে দেখাযায়। তবে যে মিষ্টি নিয়ে সবথেকে বেশী আকর্ষণ ছিল মেলায় তা হল ১০০০ ও ১৫০০ টাকা মূল্যের পেল্লাই মিষ্টি। খরিদ্দারের কথা অনুযায়ী শুধু রুপেই নয় ,পেল্লাই মিষ্টিগুলি স্বাদেও অনন্য।
মেলায় যে মিষ্টি নিয়ে এত উন্মাদন সেই মিষ্টি তৈরিতেও অভিনবত্ব থাকবে এটাই স্বাভাবিক । ভাস্কর ঘোষ নামে এক মিষ্টান্ধ বিক্রেতা জানালেন,তারা ১৫০০ টাকা পিস দরের যে মিষ্টি তৈরি করেছে তাতে শুধু ছানাই লেগেছে চার কেজি । এছাড়াও অন্য উপকরণ তো আছেই । অপর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বাসুদেব ঘোষ জানান,তাঁরা ১০০০ টাকা মূল্যের এক একটি মিষ্টি তৈরির জন্যে আড়াই কেজি ছানা ব্যবহার করছেন । এছাড়াও তার সঙ্গে লাগছে ময়দা,অ্যারারুট, সুজি ও চিনি।
মিষ্টি তৈরি হয়ে যাবার পর কোনটি চিনির রসে,আবার কোনটি গুড়ের রসে ডুবিয়ে রাখা হয়। এমন এক একটি মিষ্টির ওজন প্রায় সাত-আট কেজি করে হয়।।এই মিষ্টি তৈরীতে সব মিলিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা সময় লাগে বলে বাসুদেববাবু জানিয়েছেন।একই সঙ্গে তিনি বলেন,’দাম বেশী হলেও আগে থেকে অর্ডার দিয়ে ভিন জেলার বাসিন্দারাও মেলায় এসে এই মিষ্টি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।’আয়োজকরা জানিয়েছেন, দোল উৎসবকে সামনে রেখে দোগাছিয়ায় শুরু হওয়া মেলা এখন শুধুই মিষ্টি ময় হয়ে উঠেছে।।