প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ ডিসেম্বর :ছেলেকে নানির বাড়ি পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন মা রীণা দেবী। কথা ছিল বুধবার রাতের মধ্যে ছেলে বাড়ি ফিরবে ।কিন্তু তা আর হয় নি। উল্টে ছেলের ক্রান্তি বাহাদুরের(১৪) লাশ নিতে বৃহস্পতিবার মা রীণা দেবীকেই আসতে হল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । ছেলের নিথর দেহ জড়িয়ে
হাসপাতাল কান্নায় ভেঙে পড়েন বীণাদেবী।
সন্তান হারানো এক মায়ের বুকফাটা কান্না দেখে হাসপাতালে উপস্থিত থাকা রোগী পরিজনদের অনেকেরই চোখেও জল চলে আসে । তাঁরা বীণাদেবীর পাশে দাড়িতে তাকে সান্তনাা দেন।
বেদনায় ভারাক্রান্ত বীণাদেবী এদিন হাসপাতালে
সাংবাদিকদের বলেন,ছেলে ক্রান্তি বিকেল বাড়ি বলে অপেক্ষাা করছিলাম।ছেলে এবং তাঁর দুই মিলে হুগলীর পাণ্ডুয়ায় গিয়েছিল।রাতে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন না পাওয়ায় তারা বুধবার
বেলায় জয়নগর এক্সপ্রেস ট্রেন ধরার জন্যে বর্ধমান স্টেশনে অপেক্ষা করছিল। সঙ্গে তাদের এক আত্মীয়ও ছিল । ওই সময়ে আচমকাই বর্ধমান স্টেশনে থাকা শতাব্দী প্রাচীন জলের ট্যাঙ্ক আচমকা ছেলের মাথায় ভেঙে পড়ে ।তাতে ছেলে ক্রান্তি মারাত্মক জখম হয় । ট্যাঙ্কের জলে ছেলের মোবাইল ফোনটাও নষ্ট হয়ে যায়। দুর্ঘটনারর পর পুলিশ বর্ধমান স্টেশন থেকে ক্রান্তিকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে । সেখানে চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন। রীণাদেবী বলেন,এসব আমি কিছুই জানতাম না। তবে বর্ধমান হাসপাতাল থেকে পুলিশ মারফত রাতে খবর যায় সাহেবগঞ্জে। সেখানকার রেল পুলিশ তার আমাদের বাড়িতে দুঃসংবাদ পৌছায়।
আক্ষেপ প্রকাশ করে রীণাদেবী এদিন আরো বলেন, আমার স্বামী নেই । ছেলে ক্রান্তি বাহাদুর-ই
ছিল আমার একমাত্র ভরসা। আমার চোদ্দ বছর বয়সী ছেলে স্কুলে পড়তো ।সেই ছেলেকে হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেন বলে রীণাদেবী মন্তব্য করেন। মৃত ক্রান্তির মাসি চম্পা দেবী জানান,
বুধবার ১ টায় ট্রেন আসার কথা। তার আগেই চরম সর্বনাশেয় ঘটনা ঘটে যায়।চম্পাদেবী বলেন,
ক্রান্তির মৃত্যুর জন্য রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে তারা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু অর্থ কি কোন মাকে তাঁর সন্তান হারানোর বেদনা ঘুচিয়ে দিতে পারে। তাই আমরা চাই যাত্রী সুরক্ষায় সচেতন হোক রেল দফতর ।।