প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ এপ্রিল : গোটা দেশের পাশাপাশি এই রাজ্যেও উর্ধ্বমুখী কোভিড আক্রান্তের গ্রাফ।প্রতিদিন মৃতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে ব্যাপক হারে।এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রের তরফে ‘কোভিড টিকাকরণ’ অভিযানের ব্যপ্তি ঘটানোর কথাও বলা হয় । কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিটা যে সম্পূর্ণ উল্টো তা বৃহস্পতিবার
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌছেই পরিস্কার হয়ে গেল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তরফে হাসপাতাল চত্ত্বরে ফ্লেক্স ঝুলিয়ে দিয়ে দাবি করা হয়েছে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই’।টিকা নেওয়ার জন্য বুধবার রাত থেকে যেসব বয়স্ক মানুষজন হাসপাতালে লাইন দিয়েছিলেন তারা এদিন দুপুরে এই ফ্লেক্স দেখার পরেই কার্যত নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। মারণ ভাইরাস ‘কোভিড ১৯’ এর ভ্যাকসিনের ’সরবরাহ নেই ’জেনে জামালপুরে বাসিন্দাদের উদ্বেগ বহুলাংশে বেড়ে গিয়েছে ।
ভোট উৎসবের মাঝেই রাজ্যের অনান্য জেলার পাশাশাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও ব্যাপক হারে বেড়ে চলে ’কোভিড’ আক্রান্তের সংখ্যা । স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, গত ১৫ এপ্রিল জেলায় ২০২ জনের কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওই দিন পর্যন্ত জেলায় মোট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩২৪৪ জন । ওই দিন পর্যন্ত জেলায় মৃতের সংখ্যা ছিল ১৮০ জন । তার পর থেকে মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে অর্থাৎ বুধবার রাত পর্যন্ত জেলায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭৪৫ জন ।অর্থাৎ ১৩ দিনে জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫০১ জন। ওই ১৩ দিনে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের ।
স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুয়ায়ী কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেশী শহর বর্ধমানে ।তার মধ্যে জামালপুর ব্লকেও প্রতিদিন কোভিড আক্রান্তের হদিশ মিলে চলেছে। কয়েকদিন আগেই কোভিড আক্রান্ত হয়ে জামালপুর হাটতলা এলাকা নিবাসী এক ডেকেরেটার ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয় ।এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই জামালপুরের বাসিন্দা মহলে আতঙ্ক আরও তীব্র হয় ।আতঙ্কের কারণে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন একটি পাড়ার এক বৃদ্ধা বুধবার মারা যাওয়ার পরেও তাঁর দেহ সৎকারে প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে যেতে চান না । “ওই বৃদ্ধা কোভিড আক্রান্ত ছিলেন ,না ছিলেন না তাও কারুই জানা নেই। তবুও জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান এলাকার চার জনের হাতে দুষ্প্রাপ্য ‘কিট’ তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন । তার পর তারা ওই ’কিট’ পরিহিত হয়ে বৃদ্ধার মৃতদেহ সৎকারের জন্য জামালপুর শ্মশানে নিয়ে যান “।এইসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করে জামালপুরের বাসিন্দারা ’কোভিড টিকা ’ নেওয়ার জন্য উদগ্রিব হয়ে ওঠেন । টিকা পাওয়ার জন্য বিগত কয়েকদিন যাবৎ বহু বাসিন্দা রাত থেকেই জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন । টিকা দেওয়াও চলছিল স্বাভাবিক নিয়ম মেনে । কিন্তু কোভিড’ ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে টিকাকরণ একেবারে থমকে যায়।
এই বিষয়ে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক ঋত্বিক ঘোষ বলেন ,“কোভিড ভ্যাকশিন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এদিন পর্যন্ত আর ভ্যাকসিন হাসপাতালে পৌছায়নি । ‘কোভিড ভ্যাকসিনের সরবরাহ যে নেই তা জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্যেই ’ফ্লেক্সে লিখে’ হাসপাপাল চত্ত্বরে ঝোলাতে হয়েছে । ঋত্বিক আরও বাবু জানান ,গত ২৫ জানুয়ারি থেকে জামালপুর হাসপাতালে কোভিডের টিকা দেওয়া শুরু হয় । প্রথম দিকে ’টিকা’ নেওয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ খুব কম ছিল । মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ‘টিকা’ নেওয়ার ব্যাপারে অতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন জামালপুরের বাসিন্দারা । সংক্রমণ হার ফের বাড়তে শুরু করায় গত তিন সপ্তাহ যাবৎ ’কোভিডের টিকা’ নেওয়ার জন্য হাসপাতাল চত্ত্বরে মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। শুক্রবার টিকা দেওয়া হবে এমন নিশ্চয়তা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এদিন দিতে পারেন নি । তবে তিনি জানিয়েছেন , শুক্রবার যদি ভ্যাকসিন এসে যায় তবে শনিবার থেকে ফের টিকা দেওয়া শুরু করে দেওয়া হবে ।
জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক প্রণব রায় জানিয়েছেন,“জেলায় ভ্যাকসিন অপ্রতুল থাকাতেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।’ তবে ভ্যাকসিন ঘাটতির জন্য এদিন জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়া জেলার আর কোনও হাসপাতালে এদিন টিকাকরণ বন্ধ ছিল কিনা সেই বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক কিছু জানাতে পারেন নি । এমনকি ভ্যকসিন সরবরাহ কবে স্বাভাবিক হবে সেই বিষয়েও সিএমওএইচ এদিন কিছু জানাতে পারেন নি ।।