প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫এপ্রিল : তিন দিন অতিক্রান্ত। এখনও রাজু ঝা কে খুনের রহস্যভেদ করতে পারেনি পুলিশ । তবে নিখুঁত পরিকল্পনা করেই যে “ইডির“ ডাক পাওয়া রাজ্যের খনি অঞ্চলের বেতাজ বাদশাকে খুন করা হয়েছে সেই ব্যাপারে অন্তত আর কোন দ্বিমত নেই পুলিশ কর্তাদের । এই খুন কাণ্ডে যে ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলাররা যুক্ত ছিল সেটা সময় গড়ানোর সাথে সাথে আতস কাঁচের মত স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি কারণে রাজু ঝাকে খুন হতে হল ? কেনই বা রাজু খুন হওয়ার পরেই গরু পাচার মামলায় ফেরার অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ ঘটনাস্থল থেকে গা ঢাকা দিল ? তা নিয়ে রহস্য রয়েই গিয়েছে।
কয়লা পাচার মামলায় রাজু ঝার ইডি দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার দিন গত সোমবার । তার ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ গত শনিবার রাত ৮ টা নাগাদ শক্তিগড়ে কলকাতামুখী ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়ায় সাদা রঙের একটি ফরচুনা গাড়ি । ওই গাড়ির চালকের বাম পাসের আসনে বসে ছিলেন কয়লা করবারী রাজু ঝা । গাড়ির পিছনের আসনে বসে ছিলেন রাজু ঝার সহযোগী ব্রতীন মুখোপাধ্যায় ও সিবিআইয়ের তদন্তাধীন গরু পাচার মামলায় ফেরার অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ । ওই ফরচুনা গাড়ির পিছন পিছন নীল রঙের একটি দামি চারচাকা গাড়ি এসে দাঁড়ায় ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী ওই দিন শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়ানক কাণ্ড ঘটে যায় । নীল রঙের গাড়িটি থেকে কয়েকজন নেমেই একেবারে শার্প শুটারের কায়দায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই ফরচুনা গাড়ির আরোহীদের লক্ষ্য করে পরপর গুলি চালায় । গুলি চালিয়েই নীলচে রঙের গাড়িতে চেপেই দুষ্কৃতীরা দ্রুত কলকাতামুখি রোড ধরে পালিয়ে যায় । গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় রাজু ঝার শরীর । পিছনের আসনে বসে থাকা রাজুর সহযোগী ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের বাম হাতে গুলি লাগে। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে আব্দুল লতিফ ও তাঁর গাড়ির চালক নুরকে দুস্কৃতিদের ছোঁড়া একটিও গুলি স্পর্শ করে না । আর এই ঘটনার দিন রাজু ঝার সঙ্গে একই গাড়িতে যে আব্দুল লতিফও ছিল সেটা ১ এপ্রিল শক্তিগড় থানায় দায়ের করা অভিযোগে লতিফের গাড়ির চালক নুর স্পষ্ট করে দিয়েছে ।
ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ দু’জনকে উদ্ধার করে ঘটনাস্থলের অদূরের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে চিকিৎসকরা রাজু ঝাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের বাম হাতে অস্ত্রোপচার হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ।সোমবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান । ওই দিনই ব্রতীন
ও লতিফের গাড়ির চালক নুরকে পুলিশ টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালায় । কিন্তু তার পর থেকে ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও খুনিদের একজনেরও নাগাল পুলিশ পায়নি। আততায়ীদের ব্যবহৃত নীল গাড়িটি ও গাড়িটি থেকে আগ্নেআস্ত্র ,কার্তুজ,একাধিক
নম্বার প্লেট এইসব পুলিশ পেলেও আব্দুল লতিফ বেপাত্তাই রয়ে আছে। এই খুনের ঘটনার তদন্তে খুব শিঘ্র “ব্রেক থ্রু “ পাওয়া যাবে বলে সোমবার জেলা পুলিল সুপার কামনাশিস সেন আশা প্রকাশ করেলেও মঙ্গলবার সারাটা দিন তার কিছুই হয়নি ।
তবে তদন্তকারী শীটের সদস্যদের কাছে এখন তদন্তের যাবতীয় কেন্দ্র বিন্দুতে যে আততায়ীদের ব্যবহার করা নীল গাড়িটি জায়গা করে নিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । ওই গাড়িতে চেপে ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলাররা শক্তিগড়ে এসে খুনের ঘটনা ঘটিয়ে যে পালিয়েছে তা ধরে নিয়ে তদন্তকারী পুলিশের একটি দল এখন পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড চষে বেড়াচ্ছে । সূত্রের খবর,“ঝড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে
তদন্তকারীরা একপ্রকার নিশ্চিৎ হয়েছেন যে ঘটনার দিন অর্থাৎ ১ এপ্লিল খুব ভোরে ওই নীল চারচাকা গাড়িটি ঝাড়খণ্ডে যায় । তারপর ওই দিনই দুপুর দুপুর ঝাড়খণ্ডের কোন ডেরা থেকে সুপারি কিলারদের চাপিয়ে নিয়ে একই নীল চারচাকা গাড়ি শক্তিগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঝাড়খণ্ড যাওয়া ও ফিরে আসার সময়ে নীল গাড়িটিতে যে নম্বার প্লেট লাগান ছিল সেই একই নম্বারের (WB 06P 3454) নীল চারচাকা গাড়ির হদিশ শক্তিগড় থানার অদুরে পায় পুলিশ । এইসবের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী পুলিশ কর্তারি একপ্রকার নিশ্চিৎ যে রাজু ঝাকে খুনে ঝাড়খন্ডের সুপারি কিলারদের কে কাজে লাগানো হয়েছিল”। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল এদিনও আরো একবার ওই গাড়ি ও ঘটনাস্থলে পৌছে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় ।
এইসবের মধ্যেই আবার রাজু ঝাকে খুনের ঘটনা ও তার পরবর্তী তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে শাসক- বিরোধী রাজনৈতিক তর্জা । জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র প্রশ্ন তুলেছেন,এমন ভয়ানক একটা খুনের ঘটনার পর জেলা পুলিশ কোন যুক্তিতে নূর এবং ব্রতীনকে ছেড়েদিলেন ? কেন তাদের কাস্টডিতে নেওয়া হল না ? পুলিশ কী করে জানলো ওদের উপর কোনো আক্রমণ হবে না ? বিজেপি নেতার এইসব মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, মৃত্যুঞ্জয় বাবু রাজনীতি ছেড়ে গোয়েন্দার কাজ নিন।পুলিশ কাকে ধরবে আর কাকে ছাড়বে সেটা সম্পূর্ণ পুলিশের ব্যাপার। মৃত্যুঞ্জয়বাবুর জেনে রাখা ভাল এই বাংলার পুলিশ আগাগোড়াই অন্য রাজ্যের পুলিশের থেকেও অনেক বেশ দক্ষ ।।