শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১৯ মার্চ : মুসলিম মহিলার ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর কেমো থেরাপির দ্বায়িত্ব নিলেন বর্ধমান-দূর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়া । রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর বিধানসভার মেমারি-২ ব্লকের ঝিকড়া গ্রামের কবরস্থান এবং মন্ডলগ্রাম, মালম্বা ও লোহার গ্রামের শ্মশান খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ । আর তখনই বড়পলাশন-১ পঞ্চায়েত এলাকার সারগ্রামের বাসিন্দা সাবিনা চৌধুরী নামে এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে সাংসদের কাছে আসেন । মহিলা সাংসদকে জানান, অর্থাভাবে তাঁর ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে । মহিলা সাহায্যের জন্য সাংসদের কাছে আবেদন জানান । তখন সাংসদ ওই মুসলিম মহিলাকে জানিয়ে দেন তাঁর স্বামীর কেমো থেরাপির খরচ তিনি বহন করবেন । সাংসদ তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে মহিলার স্বামীর প্রেসক্রিপশন পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন ।
জানা গেছে,সারগ্রামের বাসিন্দা সাবিনা চৌধুরীর স্বামী নাজিবুল হুদা চৌধুরী পেশায় জনমজুর ছিলেন । বছর খানেক আগে তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়েছে । তারপর থেকেই তিনি শয্যাশায়ী । এদিকে চিকিৎসকরা তাঁকে কেমোথেরাপির জন্য পরামর্শ দিলে অর্থাভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারেনি ওই হতদরিদ্র পরিবারটি ।
এছাড়া মেমারি-২ ব্লকের মন্ডলগ্রামের বাসিন্দা তাপস দত্ত নামে এক ক্যান্সার আক্রান্ত যুবকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়া । জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয়েছিল তাপসবাবুর । তাঁর একটি শিশুসন্তান রয়েছে ৷ হতদরিদ্র পরিবার । এদিন সাংসদের এলাকায় আসার খবর পেয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য ছুটে যান ক্যান্সার আক্রান্ত যুবকের বাবা কেনারাম দত্ত । তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য সাংসদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান । সাংসদ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন ।
দেখুন ভিডিও 👇
গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এস এস আলুওয়ালিয়া বলেন,’লক ডাউন সময়ে আমি অবিভক্ত বর্ধমান জেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা এবং তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি । তার মধ্যে ৭০ শতাংশ মুসলিম । আর এরা বেশিরভাগ কেরল,মহারাষ্ট্র, গুজরাটে ছিল ।’ তবে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান,ওই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের আধার কার্ডে ছবি চাওয়া হয়েছিল । কিন্তু ওরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে নিজেদের নাম ঝন্টু,মন্টু, সন্টু প্রভৃতি বলে । ওরা ভেবেছিল বিজেপি সাংসদ হওয়ায় হয়তো মুসলিমদের সাহায্য করবে না । কিন্তু পরে ওদের ভুল ভাঙে ।
পাশাপাশি সাংসদ বলেন,’২৯ এপ্রিল ২০১৯ এর আগে আমি প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম । ২৩ মে রেজাল্ট বেড়িয়েছে । ওই দিনই আমি প্রেস কনফারেন্স এ বলেছি, যারা আমায় ভোট দেয়নি আমি তাদেরও এমপি । যারা আমার পোস্টার ছিঁড়েছে আমি তাদেরও এমপি । যারা আমার পোলিং এজেন্টকে বসতে দেয়নি তাদেরও এমপি আমি । সবারই এমপি । আমার উপর সবার অধিকার সমান ৷ আর আমি তাদের পরিবারের সদস্য ।’
জানা গেছে,ঝিকড়া গ্রামের কবরস্থান সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরার জন্য স্থানীয় মুসলিমরা বেশ কিছুদিন আগে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন । গ্রামবাসীরা প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকার একটি এস্টিমেটও জমা দিয়েছিল । যদিও এযাবৎ সেই কাজ অধরা রয়ে গেছে । এদিন সর্ব প্রথমে ঝিকড়া গ্রামের কবরস্থান পরিদর্শনে যান বিজেপি সাংসদ । তিনি এই বিষয়ে তদ্বির করবেন বলে গ্রামবাসীদের প্রতিশ্রুতি দেন । সাংসদ বলেন, ‘কবরস্থানের সংস্কারের জন্য এখনো জেলাশাসকের দপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি । তাই এদিন কবরস্থানটি পরিদর্শনের জন্য এসেছি । গ্রামবাসীরা যাবতীয় কাগজপত্র আমায় দিয়েছেন । যথাস্থানে তা পাঠিয়ে দেবো ।’
এদিন মেমারি-২ ব্লকের মন্ডলগ্রাম, মালম্বা,লোহার গ্রামের শ্মশান ঘুরে দেখে শ্মশানগুলি সংস্কারে উদ্যোগী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়া । সেই সঙ্গে মন্ডলগ্রামের আদিবাসী পাড়া পরিদর্শন করেন তিনি । আদিবাসী পাড়ার বেহাল রাস্তা ও পানীয় জলের সমস্যার কথা শুনে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন বিজেপি সাংসদ । এলাকা পরিদর্শনের সময় এক আদিবাসী শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় তাঁকে । এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলা ও মন্তেশ্বর ব্লকের বিজেপি নেতৃত্বকে সাংসদের সঙ্গে দেখা যায় ।।