প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ নভেম্বর : রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে হামেশাই উদ্ধার হচ্ছে বোমা। এমনকি বোমা বিস্ফোরণে মৃত ও আহতের সংখ্যায় উত্তরোত্তর বাড়ছে। আর তা নিয়েই এই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে বিঁধলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।মঙ্গলবার বর্ধমানে জেলা বিজেপি কার্যালয়ে দলের কার্যকারিনী বৈঠকে যোগ দেন বিজেপির দুই সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ও লকেট চট্টোপাধ্যায় ।বৈঠক শুরুর প্রাক্কালে সৌমিত্র খাঁ সাংবাদ মাধ্যমকে জানান,’আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে না!এত বোমা উদ্ধার ও বিস্ফোরণ তারই আভাস। বোম তৈরি করা আর সবাইকে বোম ছোড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের কালচার।যেদিন ফিরহাদ হাকিমের সাথে ভাইপোর লড়াই হবে,সেদিনও কালীঘাটে বোমা পড়বে।আমরা তা দেখবো’। পাশাপাশি তৃণমূলের বর্ধমান দক্ষিনের বিধায়ক খোকন দাস কে বর্ধমানের অনুব্রত মণ্ডল বলে কটাক্ষ করেন সৌমিত্র খাঁ।একই ভাবে লকেট চট্টোপাধ্যায়ও নানা ইশুতে তৃণমূল কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তোলেন।বিজেপি সাংসদের এইসব মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব ।
রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে না বলে প্রতিনিয়ত গলা ফাটাচ্ছে বিরোধীরা । বিজেপিও কি তাই ভাবছে? এই প্রশ্নের উত্তরে সৌমিত্র খাঁ বলেন,’পঞ্চায়েত ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে আমাদের যত দূর যেতে হবে, আমরা যাবে । আমরা লাড়াই চালাবো ,আদালতেও যাবো।আমরা চাই মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে ।’ তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর দাবি বিজেপি তুলবে কি না ,এই বিষয়টি যদিও সৌমিত্র খাঁ স্পষ্ট করেননি ।
রাজ্য মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম কেও এদিন কটুক্তিতে বিদ্ধ করেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ । তিনি বলেন,’ফিরহাদ হাকিম একদিন কালীঘাটে পাথর ছুঁড়েছিল । আর ভাইপো ও ফিরহাদ হাকিমের লড়াইটাও হবে। কালীঘাটেও কোনদিন বোমা পড়বে,যেদিন ফিরহাদ হাকিম আর ভাইপোর লড়াই হবে । সেদিন কালীঘাটেই বোমা পড়বে,সেই দিনটা
আমরা দেখবো ।’ গ্রাম বাংলার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তৃণমূলের প্রার্থীরা পঞ্চায়েত ভোটে লড়বে বলে তৃণমূল নেতৃত্ব যে দাবি করছে তা নিয়েও কটাক্ষ করেন সৌমিত্র খাঁ। এই প্রসঙ্গে তাঁর দাবি,’তৃণমূলের উন্নয়ন মানেই পারিবারিক উন্নয়ন ।’একই সাথে তিনি বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসকে একহাত নেন সৌমিত্র খাঁ দাবি করেন,’বর্ধমানে যত অপসংস্কৃতি খোকন দাস এনেছেন । আর খোকন দাস দ্বিতীয় অনুব্রত হতে যাচ্ছে বলে শুনছি । উনাকে বর্ধমানের অনুব্রত বললেও চলে । উনিও বর্ধমানের কেষ্ট হয়ে খুব তাড়াতাড়ি যাবেন বলে সৌমিত্র মন্তব্য করেন।তবে কোথায় খোকন দাস যাবে তা অবশ্য সৌমিত্র খাঁ স্পষ্ট করেননি ।
একই রকম কটাক্ষের সুরে এদিন বিজেপি সংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন,’এবারের পঞ্চায়েত ভোটে মেদিনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেস দাঁত ফোটাতে পারবে না। সিণ্ডিকেট বাজি নিয়ে তৃণমূলে এখন নিজেদের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। টাকা তোলার জন্য ওদের ক্ষমতার লড়াই চলছে । তৃণমূল কংগ্রেস দলটা নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে করতে শেষ হয়ে যাবে বলে লকেট চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেন’।ডিএলএড এর প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটা এখন পশ্চিমবঙ্গে ফ্যাশান হয়ে গেছে। সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে। গোটা শিক্ষা মন্ত্রালয় জেলে চলে গেছে । কিন্তু ভূতগুলো এখনও বসে আছে। বাংলার শিক্ষা নিয়ে আগে আমরা গর্ববোধ করতাম ।কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে বলবো বাংলার শিক্ষা এখন কোন জায়গায় চলেগেছে !কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে বলবো এই বিষয়ে উনি যেন ধ্যান দেন।
সৌমিত্র খাঁ ও লকেট চট্টোপাধ্যায়ের এইসব মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন,’২০২১শের বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের হতাশা বিজেপি নেতাদের এখনও কুরে কুরে খাচ্ছে । বাংলা দখলের স্বপ্ন পূরণ না হবার হতাশা থেকেই দুই বিজেপি সাংসদ এইসব মন্তব্য করেছেন । বাংলার মানুষ খুব ভাল করেই জানেন, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় বিজেপি নেতারা কি কায়দায় পঞ্চায়েত ভোট করে । বিজেপি নেতা ও সাংসদরা বাংলাকে যত ছোট করার চেষ্টা করবেন, বাংলার মানুষ ওদের তত বেশী করে প্রত্যাক্ষান করবে ।’পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজেপির ভরাডুবি হবে বলে দেবু টুডু দাবি করেছেন ।।