প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ নভেম্বর : সিপিএম মানেই চুলে পাক ধরা নেতাদের সমারোহ,পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে কৌট ঝাঁকিয়ে পয়সা তোলা ।এমন একটা ধারণা দীর্ঘ দু-তিন দশক ধরে তৈরি হয়ে আছে বাংলার জনগনের মনে।এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের সিপিএম নেতারা যা করে বসলেন তা কার্যত নজিরবিহীন।তাঁরা একদল শিশু ও নাবালককে সিপিএমের পদযাত্রার প্রথম সারিতে সামিল করেন।আর ওই শিশু ও নাবালকরা লাল ঝাণ্ডা কাঁধে নিয়ে পদযাত্রায় বড়দের সঙ্গেই গলা ফাটিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে চলে । পঞ্চায়েত ভোটর আগে সিপিএম পার্টির হয়ে শিশু ও নাবালকরা এমন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠায় সিপিএম নেতারাও যেন বেশ উৎফুল্ল।যদিও তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে, এখন সিপিএম যে সাংগঠনিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়া একটা পার্টিতে পরিণত হয়েছে তা এই ঘটনাই প্রমাণ করে দিয়েছে’।
বছর ঘুরলেই এই রাজ্যে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন । আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ’চলো গ্রামে যাই’ এই কর্মসূচি নিয়েছে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস।এর পাল্টা, সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষ করেই সিপিএম ’গ্রাম জাগাও- বাংলা বাঁচাও’ কর্মসূচি নিয়ে পথে নেমে পড়ছে। সিপিএমের যুব সংগঠনের(DYFI)
জামালপুর ১ আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সন্দীপ সাঁতরা তাঁদের সেইসব কর্মসূচির বেশকিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।এমনকি তিনি সেই পোস্টটি সিপিএমের জামালপুর ১ আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদকদ সুকুমার মিত্র সহ ৫৬ জনের
ফেসবুক প্রোফাইলে ট্যাগও করেছেন । সেই
ভিডিও গুলিতে দেখা যাাচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে শ্লোগান দিতে দিতে সিপিএমের পদযাত্রা গ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে।সেই পদযাত্রার একেবারে প্রথম সারিতে থেকে লাল ঝান্ডা কাঁধে নিয়ে একদল শিশু ও নাবালক গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে হেঁটে যাচ্ছে। ভিডিওয় শোনা যাচ্ছে পদযাত্রায় থাকা দলের বয়স্ক কেউ ওই কচিকাচাদের আরো জোরে শ্লোগান দেওয়ার কথাও বলছেন।
শুধু পদযাত্রার এই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করাই নয়, মিছিলে অংশ নেওয়া শিশু ও নাবালকদের বাম প্রীতির তারিফও করেছেন ডিওয়াইএফআই (DYFI)নেতা সন্দীপ সাঁতরা । এই বিষয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন,’এ এক নতুন ভোরের লড়াই।ছোটো ছোটো কুঁড়িদের ফোটবার সংগ্রাম চলছে চলবে । এ লড়াই বাঁচার লড়াই,এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াই জিততে হবে ।’
কিন্তু যে খুদেদের পড়াশুনায় মগ্ন থাকার কথা,স্কুলে ও খেলার মাঠে থাকার কথা,তাঁদের রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে সিপিএম কি ঠিক কাজ করেছে?এই প্রশ্নের উত্তরে সন্দীপ সাঁতরা বলেন,’দিন কয়েক আগে জামালপুরের রামনাথপুর থেকে জ্যোৎশ্রীরাম ও পাঁচড়া থেকে চৌবেড়িয়া পর্যন্ত তাঁদের দলের পদযাত্রা হয়। এই দুই পৃথক পদযাত্রায় শিশু ও নাবালকরা সামিল হয়।তবে দলের কোন নেতৃত্ব ওই শিশু ও নাবালকদের উৎসাহিত করে পদযাত্রায় সামিল করায়নি । ওইসব শিশুদের বাবা মায়েরা পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন । তা দেখে তাঁদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও পদযাত্রায় পা মেলায়। সেই কারণেই নাকি দলীয় নেতৃত্বের কেউ তাঁদের ওই পদযাত্রা থেকে সরিয়ে দেননি বলে সন্দীপ সাঁতরা দাবি করেছেন“।বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনও একই সাফাই দিয়েছেন।
তবে সিপিএম নেতৃত্বের এই সাফাই অবশ্য মানতে চাননি তৃণমূল ও বিজেপির নেতারা।তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সিপিএম কে তীর্যক ভাষায় কটাক্ষ করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যর মুখপত্র দেবু টুডু বলেন,’বাংলার মানুষ আর সিপিএম পার্টির পাশে নেই।তাই সাংগঠনিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়া সিপিএম পার্টির নেতারা এখন শিশু ও নাবালকদের কাঁধে ভর দিয়েই অস্তিত্ব জানান দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে ।’
অপরদিকে জেলা বিজেপির সহ সভাপতি
সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’শিশু ও নাবালকরা কেউ ভোটার নয়।তাঁরা রাজনীতির কিছু বোঝেও না।তা জেনেও সিপিএম নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সামিল করিয়ে গর্হিত কাজই করেছে।’ সাংগঠিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়াতেই সিপিএম খড়কুটোর মতো যাকে পারছে তাকেই আঁকড়ে ধরছে বলে সৌম্যরাজ মন্তব্য করেন । চাইল্ড লাইনের পূর্ব বর্ধমান জেলা কোঅর্ডিনেটর অভিজিৎ চৌবে এই প্রসঙ্গে বলেন,’শিশুদের হাতে পার্টির ঝান্ডা ধরিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সামিল করানোটা একেবারেই অনুচিত কাজ হয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাবে। বাচ্চাদের স্কুল মুখি করে তাঁদের হাতে পেন ,বই ,খাতা তুলে দিয়ে শিক্ষার আলো দেখানোটাই কাম্য হওয়া উচিৎ। তাতে সমাজেরও ভালো হবে ।’।