প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৬ আগষ্ট : ভারতের সংবিধান প্রণেতার নামে আদিবাসী ও তপশিলীদের জন্য তৈরি হয়েছিল আবাসিক স্কুল । কেন্দ্রের অনুদান না মেলায় সেই স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে রয়েছে । পড়ুয়াবিহীন স্কুল এখন যেন ভুতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়েছে । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই প্রথম কোন আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পদে অসীন হয়েছে। এর পরেও কি ভুতুড়ে বাড়ি হয়েই পড়ে থাকবে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের কর্জনা চটি এলাকায় থাকা আদিবাসী ও তপশিলীদের আবাসিক স্কুলটি ?এর উত্তর সবার অজানা থাকলেও দ্রৌপদী মুরমু দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ায় স্কুলটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
বর্ধমান কাটোয়া রাস্তার খুব কাছে কর্জনা চটি থেকে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে আবাসিক স্কুলটি।বেশ কয়েক বছর আগে বিশাল জমির উপর আদিবাসী ও তপশিলীদের এই আবাসিক স্কুলটি গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ।তৈরি হয় সাতটি শ্রেণীকক্ষ,অফিস, হলঘর এমনকি আবাসন। এলাকার সাধারণ মানুষ ,এমনকি শিক্ষকেরাও এই স্কুল বাড়ি তৈরির জন্য অগ্রণী ভূমিকা নেন ।স্কুলটির নামকরণ করা হয় দেশের সংবিধান প্রণেতা বাবাসাসেব বি. আর .আম্বেদকর এর নামে।উদ্বোধনের পর থেকে স্কুলটি পড়ুয়াদের কোলাহলে মুখর হয়ে থাকতো।ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পারতো ছেলে মেয়েরা।পনেরো জন শিক্ষক তাঁদের জীবনের সেরা সময় ও অর্থ, দুটোই এই স্কুলের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।আম্বেদকরের চিন্তা ভাবনা ও দর্শনকে পাথেয় করেই স্কুলটি চলছিল।কমে গিয়েছিল এলাকায় স্কুল ছুটের সংখ্যাও।কিন্তু সেই সবই আজ ইতিহাস ।
স্কুল বাড়িটি এখন একাকি নিঃসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একসময় কর্জনা ,আরা, বামুনাড়া সহ আশেপাশের অঞ্চলগুলির ছেলেমেয়েরা আম্বেদকরের নামাঙ্কিত এই স্কুলে পড়তে আসত।পড়ুয়াদের কোলাহল আর এই স্কুলে নেই।একই আছেন আম্বেদকর । স্কুল চত্ত্বরের চারপাশ ঝোপ জঙ্গল ও আগাছায় ঢাকা পড়েছে।গোটা স্কুল বাড়ি জুড়ে গা ছমছমে পরিবেশ বিরাজ করছে।স্কুল বাড়ি যেন ভূতের বাড়ির চেহারা নিয়েছে। কারুর
বোঝারই উপায় নেই ওটা হাই স্কুল বিল্ডিং না কি ভুতুরে বাড়ি।স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী এবং শিক্ষকদেরও আক্ষেপের অন্ত নেই।
শিক্ষকরা জানান ,স্কুলটি কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় চলতো।স্কুলটি কিছুদিন চালার পর কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা ও অনুদান পাওয়া থমকে যেতে শুরু করে । পরে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় । কেউ কেউ অনুমান করছেন, রাজ্য থেকে ’নন ফিনান্সিং’ অনুমোদন না পাওয়াটাও স্কুল বন্ধ হওয়ার একটা কারণ।কেন্দ্রর অনুদান আর না পাওয়াতেই স্কুলটি চালানো দূরহ হয়ে পড়ে। তবুও এলাকার মানুষজন ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা ,দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই প্রথম আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত দ্রৌপদী মুরমু দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।এবার হয়তো ফের স্কুলটির সুদিন ফিরবে ।
এই রাজ্যের অন্যতম আদিবাসী নেতা দেবু টুডু
বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি ।স্কুলটির বিষয়ে তিনি বলেন ,’রাজ্যে এমন আবাসিক স্কুল কয়েকটি ছিল। কেন্দ্রের অবহেলা ও বঞ্চনার কারণে ওই স্কুল গুলি এখন শুধু অস্তিত্বটুকু জানান দিচ্ছে ।’ অন্যদিকে এলাকার বাসিন্দা তথা রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু কোনার বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক আশা নিয়ে এই স্কুলবাড়ি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের সরকার হঠাৎ করে সহায়তা প্রদান বন্ধ করে দেওয়ায় স্কুলটি পথ চলা থমকে যায়।কেন্দ্রের সরকার ফের যাতে স্কুলটির জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তার ব্যাপারে রাষ্টপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছেও আবেদন করছেন বলে শান্তনু বাবু বলেন ।
জেলা বিজেপির সহ সভাপতি সৌম্যরাজ
বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’কেন কেন্দ্র অনুদান দেওয়া বন্ধ করলো সেই বিষয়টি আমাদের কাছে পরিস্কার নয়।স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানালে আমরা বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।স্কুলটি যাতে পুনরায় চালু হয় সেই ব্যাপারেও সর্বতভাবে
চেষ্টা করা হবে ।’।