জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গলসি(পূর্ব বর্ধমান),১৮ জুলাই : একদিকে প্রায় ষাট হাজার কোটি টাকার ব্যবসা অন্যদিকে পরিবেশ। শেষ পর্যন্ত পরিবেশকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহার। তবে হঠাৎ করে নয়,স্থানীয় প্রশাসন থেকে গত জুন মাস ধরে দেশব্যাপী প্রচার করে পয়লা জুলাই থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ব্যতিক্রম নয় গলসী ২নং ব্লকের সাটিনন্দী পঞ্চায়েত। সরকারি নির্দেশ মেনে স্থানীয় বাজারকে প্লাস্টিক মুক্ত করার জন্য ও পুনরায় এলাকাবাসীদের সতর্ক করার লক্ষ্যে ১৮ ই জুলাই সাটিনন্দী বিদ্যানিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে খানা জংশন বাজারে যৌথভাবে প্রচার নামে
সাটিনন্দী পঞ্চায়েত ।
সভ্যতার নামাবলী গায়ে চাপিয়ে যত আমরা আধুনিকতার বুলি আউড়াচ্ছি তত আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছি। নিত্য বাজার করতে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে ব্যাগ না নিয়ে যাওয়াটা হয়ে উঠেছে ফ্যাশন। ভাবখানা দোকানদার প্লাস্টিকের ব্যাগে মাল দিয়ে দেবে। প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার যত বাড়তে শুরু করল তত সেটা পাতলা হতে হতে ৭৫ মাইক্রনের নীচে নেমে গেছে। একইসঙ্গে মানব সভ্যতার অস্তিত্বকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
এই প্লাস্টিক ব্যাগ এত পাতলা যে দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা যায় না। স্বাভাবিক ভাবেই অবহেলার আস্তাকুঁড়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। যত্র তত্র পড়ে থাকে এই প্লাস্টিক ব্যাগ। মানুষের অবহেলার জবাবও দেয় নিজস্ব ভঙ্গিতে। হাওয়ায় উড়ে এসে মানুষের অন্দরমহলে প্রবেশ করে অনায়াস ভঙ্গিমায়। সঙ্গে নিয়ে আসে নোংরা আবর্জনা। সবচেয়ে বেশি রাগ যেন জল নিকাশী ড্রেনের উপর। কখনো আমরা সরাসরি ঐ পাতলা প্লাস্টিক ফেলে দিচ্ছি ড্রেনের মধ্যে, কখনো বা উড়ে এসে ড্রেনের মধ্যে পড়ছে। ফলাফল সেই একই। নিকাশী ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। নোংরা জল এবং দুর্গন্ধে ভরে ওঠে এলাকা। বর্ষার সময় ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়। আবার এগুলো পোড়ানো যায় না। সেক্ষেত্রে বিষাক্ত গ্যাসে ভরে ওঠে বাতাস।
এই পরিস্থিতিতে খানা জংশনবাসীকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে সাটিনন্দী পঞ্চায়েত । সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় রেললাইন সংলগ্ন খানা জংশন বাজারে। ভোরবেলাতেই দূরদূরান্ত থেকে বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসে। ক্রেতারা সেইসব জিনিস কিনতে সেখানে আসে। থাকে ফল, মাছ, খাসি বা মুরগির মাংস। বিক্রেতারা প্রায় প্রত্যেকেই প্লাস্টিকের ব্যাগে করে খরিদারকে বিক্রিত মাল দেয়। সমস্যা সৃষ্টি হয় তারপরই।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বাজার এলাকায় প্রচার শুরু হয়। প্রধান বৈশাখী পুইলে, উপপ্রধান, পঞ্চায়েতের সেক্রেটারী, কয়েকজন পঞ্চায়েত কর্মী এবং প্রধান শিক্ষক মানব কুমার যশ সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা বাজার এলাকায় র্যালি করে। হাতে ছিল প্লাকার্ড। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই প্লাস্টিক ব্যাগের কুফল সম্পর্কে বোঝানো হয় । সবার লক্ষ্য খানা জংশন বাজারকে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ মুক্ত করা ।
প্রধান শিক্ষক মানব কুমার যশ বললেন,’যেভাবে এই প্লাস্টিক আমাদের জীবনের উপর ক্রমবর্ধমান প্রভাব ফেলে চলেছে তাতে খুব শীঘ্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিপর্যয় অনিবার্য। আগামী প্রজন্মের স্বার্থে আমাদের সতর্ক হতেই হবে ।’
অন্যদিকে পঞ্চায়েত প্রধান বৈশাখী পুইলে বললেন,’সরকারি নির্দেশ মেনে কিভাবে আমাদের সবার প্রিয় খানা জংশন বাজারকে প্লাস্টিক মুক্ত করা যায় সেটা নিয়ে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও স্হানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করি। তারপর র্যালি করে বাজারের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করছি । আশাকরি সবার মিলিত প্রচেষ্টার ফলে খানা জংশন বাজার প্লাস্টিক মুক্ত হবে।।