প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ জুলাই : নার্সের সরকারী চাকরি করতে চাওয়ায় ভাড়াটে দুস্কৃতিদের সঙ্গে নিয়ে বধূ রেণু খাতুনের ডান হাত কেটে নেয় তাঁর স্বামী।এই ঘটনায় জড়িত সকল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের পর ২৫দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট জমা দিল পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার পুলিশ। শুরু হয়ে গিয়েছে অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং রেণুর পাশে দাঁড়ানোয় সে কয়েকদিন আগেই নার্সের সরকারী চাকরিতে যোগ দিয়েছে।এখন অপরাধীদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজার দিতে রেণু আইনি লড়াই শুরু করে দিয়েছেন ।
রেণু খাতুনের হাত কেটে নেওয়া সংক্রান্ত মামলার চার্জশিট কেতুগ্রাম থানার তদন্তকারী অফিসার গত ৩০ জুন কাটোয়া মহকুমা আদালতে জমা দিয়েছেন।আদালতের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চার্জশিটে অভিযুক হিসাবে রেণু খাতুনের স্বামী সহ ছয় জনের নাম রয়েছে । অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে পুলিশ ৪৯৮(এ) ,৩২৬,৩০৭ ,১১৪,১২০(বি) ও ৩৪ ধারা আরোপ করেছে। কাঁচি দিয়ে ডান চেপে ধরে তার পর কাটারির কোপ বাসিয়ে দিয়ে অভিযুক্তরা রেণু খাতুনের ডান হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ কারা হয়েছে । পুলিশ তদন্ত চালিয়ে ওই কাঁচি ও কাটারি ছাড়াও ঘটনার দিন অভিযুক্তদের ব্যবহার করা স্কুটার ও একটি চারচাকা গাড়ি ও যে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে তাও চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে।আদালতে পেশ করা চার্জশিটে পুলিশ দাবি করেছে,অভিযুক্তদের কয়েকজন ঘটনার দিন স্কুটারে চড়ে রেণু খাতুনে শ্বশুর বাড়িতে এসেছিল । তার পর তাঁরা এমন নৃশংশ ঘটনা ঘটিয়ে ওই চারচাকা গাড়িতে চড়ে পালিয়ে ছিল ।অভিযুক্তদের এইভাবে যাতায়াত যাঁরা যাঁরা দেখেছে তাঁদের বয়ানও পুলিশ নিয়েছে । আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এও জানিয়েছে, বুধবার রেণু খাতুনের শ্বশুর ও শাশুড়ির জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারক ।
প্রসঙ্গত,সরকারী হাসপাতালের নার্স হওয়ার জন্য রেণু খাতুনের জীবন সংগ্রামের কাহিনী আজও বাংলার মানুষের মনে টাটকা হয়ে রয়েছে ।কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রাম নিবাসী আজিজুল হকের মেয়ে রেণু খাতুন আজ অন্য মহিলাদের কাছে লড়াইয়ের প্রেরণা হয়ে উঠেছেন।এই রেণু খাতুন ভালবেসে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে স্থানীয় কোজলসা গ্রাম নিবাসী যুবক সরিফুল শেখকে বিয়ে করে । তারপর থেকে নার্সিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেণুর জীবন আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই দিধ কাটছিল। একাধিক বেসরকারি সংস্থায় নার্সিংয়ের কাজ করার সাথে রেণু কয়েক মাস আগে হওয়া রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে নার্সপদের চাকরির পরীক্ষা দেন । সেই পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণও হন।সেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি দিন গুনছিলেন । কিন্তু সরকারী নার্সের চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে চরম বাধা হয়ে দাঁড়ান তাঁর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন ।
ভালবেসে রেণু যাঁকে জীবন সঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সেই সরিফুল শেখের মনে ধারণা জন্মায় রেণু সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে সে আর তার সঙ্গে সংসার করবে না । রেণু তাঁর হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই রেণু যাতে নার্সের সরকারী চাকরি করতে না পারে তার পরিকল্পনা কষে ফেলে সরিফুল । পরিকল্পনা মতো গত ৪ জুন রাতে ভাড়াটে দুস্কৃতিদের সঙ্গে নিয়ে সরিফুল শ্বশুর বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা রেণুর ডান হাতের কব্জি অংশে ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দিয়ে হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয় । নৃশংস ওই ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ৫ জুন রেণুর বাবা আজিজুল হক কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথম রেণু খাতুনের শ্বশুর সিরাজ শেখ ও শাশুিড়ি মেহেরনিকা বিবি কে গ্রেপ্তার করে ।এর পর দু’দিনের মধ্যে পুলিশ সরিফুলকে গ্রেফতার করে। তারপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার তালগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে দুই ভাড়াটে দুস্কৃতি আসরফ আলি শেখ ও হাবিবুর রহমানকে।তিন জনকে হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে গোটা ঘটনার মাস্টারমাইণ্ড সরিফুলের মাসতুতো ভাই চাঁদ মহম্মদ । পুলিশ তাঁকেও গ্রেপ্তার করে ।তাঁদের সবার ঠাঁই হয় শ্রীঘরে ।।