এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০৫ জুলাই : বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কালে এক হিন্দু শিক্ষককে খুনের ঘটনায় সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ি করেছিল সেদেশের পুলিশ । কলেজের অধ্যক্ষকে জুতোর মালা পড়িয়ে ঘোরানোর ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে প্রচারও করা হয়েছিল । কিন্তু এসবের পিছনে যে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মানুষদের মধ্যে ‘জিহাদি’ মানসিকতা কাজ করছে তা ফের একবার প্রমান পাওয়া গেল বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ।
শনিবার (২ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে একটি সংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল হিন্দু মহাজোট । সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বিবৃতি জারি করা হয় । তাতে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৭৯ জনকে খুন করা হয়েছে,১৪৫ জনকে হত্যার চেষ্টা,৬২০ জনকে হত্যার হুমকি,১৮৩ জনের উপর হামলা চালানো হয়েছে এবং নিখোঁজ হয়েছেন ৩২ জন ।
সংগঠনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৭ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি এবং ১৫৬টি পরিবার ও মন্দির লুট হয়েছে । ৪৬৮টি বসতবাড়ি হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট, ৩৪৩টি অগ্নিসংযোগ, ৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ২ হাজার ১৫৯ একর ৩৬ শতাংশ ভূমি দখল এবং ৪১৯ একর ৬৩ শতাংশ দখলের তৎপরতা চালানো হয়েছে। ঘরবাড়ি দখল হয়েছে ১৭টি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ২৯টি, মন্দিরের জমি দখল ২৯টি, বসতবাড়ি উচ্ছেদ হয়েছে ১৩২টি। এ ছাড়া ৭১৭টি পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টা, ৮ হাজার ৯৪৩টি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি, ১৫৪টি পরিবারকে দেশত্যাগের বাধ্যকরণ, ৩ হাজার ৮৯৭টি পরিবারকে দেশত্যাগে হুমকির শিকার এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৯টি পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক ।
তিনি আরও দাবি করেন, চলতি বছরে ৫০১টি সংঘবদ্ধ হামলা, ৫৬টি মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ, ২১৯টি প্রতিমা ভাংচুর, ৫০টি প্রতিমা চুরি, ৭৭ জনকে অপহরণ, ১৫ জনকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৩ জন ধর্ষণ,
১০ জন গনধর্ষণের শিকার, ধর্ষণের পর তিন জনকে হত্যা, ১৯ জনকে ধর্ষণচেষ্টা, ৯৫ জনকে ধর্মান্তরিত করা, ২১ জনকে ধর্মান্তরের চেষ্টা, ৬৩টি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনাও ঘটেছে দেশে।
এ ছাড়াও মিথ্যা মামলায় সম্প্রদায়টির ৯৬ জনকে গ্রেফতার, বরখাস্ত, চাকরিচ্যুত ও জেল-জরিমানা, ৮০২টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করা, ৫৭টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অপবিত্রকরণ, ৬০টি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা, ১০০ জনকে ধর্মীয় নিষিদ্ধ গোমাংস খাওয়ানোর ঘটনা ঘটেছে। মোট ৬৩৮টি আলাদা ঘটনা ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ১৫২ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার।
কিন্তু কিভাবে এই রিপোর্ট তৈরি করা হল ? সাংবাদিকিদের এই প্রশ্নের উত্তরে গোবিন্দ চন্দ্রবাবু বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের একটি নিজস্ব গবেষণা সেল রয়েছে । সেলের আওতায় দেশের প্রতিটি জায়গায় কমিটি গঠন করা আছে । সেই কমিটিগুলির পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে ।’
তিনি বলেন,’এইসব ধারাবাহিক ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, এদেশে হিন্দুদের বসবাস দিনকে দিন কঠিনতর হচ্ছে । তাই সংগঠনের তরফ থেকে দাবি জানানো হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষায় জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন এবং পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে ।’ পাশাপাশি পৃথক সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় চালু করার দাবি জানান তিনি ।।