জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,২১ জুন : জন্মের সময় থেকেই সুগার, থাইরয়েড, ব্লাড প্রেসার, ক্লোস্টেরল, ওবেসিটি ইত্যাদি যেন অধিকাংশ মানুষের যমজ সহোদর হয়ে উঠেছে। ওষুধের নাম ঠাঁই পেয়েছে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায়। আর্থিক কারণে সুস্থভাবে বাঁচার তাগিদে মানুষ খুঁজতে শুরু করেছে বিকল্প পথ। তখনই মানুষের সামনে হাজির হয়েছে ‘যোগা’ বা ‘ইয়োগা’। প্রাচীন যুগ থেকেই এই ‘যোগা’-র হাত ধরেই ভারতের মুনি-ঋষিরা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের সুস্থ রেখেছিলেন ।যোগ অভ্যাস হল দেহ, মন ও আত্মাকে যুক্ত করে সুস্থ থাকার এক প্রাচীন পদ্ধতি। এতো শুধু ব্যায়াম নয়, এর আসল অর্থ হল চেতনা। ইয়োগা কথার সাধারণ অর্থ মিলন। দেহ, মন ও শক্তি- এই তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে আমাদের শরীর চলে। ইয়োগা এই তিনটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, মিলন ঘটায়। নিয়মিত যোগচর্চার মাধ্যমে অসুস্থ শরীর রোগমুক্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠে। সুস্থ শরীর আরও সতেজ হয়ে ওঠে। চঞ্চল ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মন শান্ত হতে থাকে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যোগার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ২০১৪ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২১ শে জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন। তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই বছরই ১১ ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘ ২১ ই জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস বলে ঘোষণা করে। তারপর থেকে মূলত যোগ অনুশীলন এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সামগ্রিক পদ্ধতির বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং আত্ম-সচেতনতার জন্য ধ্যানের অভ্যাস গড়ে তুলে একটি চাপমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বের নানান দেশের সঙ্গে এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও দিনটি পালন করা হয় ।
প্রবল উৎসাহের সঙ্গে ২১ শে জুন অষ্টম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষ্যে নেহেরু যুব কেন্দ্র বর্ধমান শাখার উদ্যোগে পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রতিটি ব্লকে প্রায় দুই শতাধিক ক্লাবে বিশ্ব যোগ দিবস পালন করা হয়। প্রতিটি ক্লাবে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত। স্হানীয় মানুষের উপস্হিতিতে তারা যোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন কৌশল প্রদর্শন করে।
অন্যদিকে জেলা স্তরের অনুষ্ঠানটি পূর্বস্থলী চুপি পাখিরালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে বিশিষ্ট যোগা প্রশিক্ষক নিমাই চন্দ্র নাথ, প্রশান্ত কুন্ডু, অজয় মুখার্জী যোগ অনুশীলন করান। একইসঙ্গে আমাদের জীবনে যোগ এর গুরুত্ব কি সেই সম্পর্কে সচেতনতা মূলক বার্তা দেওয়া হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অনিন্দ্য দাস করেন । এছাড়াও কাষ্ঠশালী হিরো অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেও বিশ্ব যোগ দিবস পালন ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয় ।
শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য জেলা স্তরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্বস্থলী উত্তর বিধান সভার বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, নেহরু যুব কেন্দ্রের পূর্ব বর্ধমান জেলা যুব আধিকারিক উত্তরা বিশ্বাস, সুজন ঠাকুর, প্রীতম মুখার্জী, কৃষ্ণ প্রামাণিক, অসিত ভট্টাচার্য, দিব্যেন্দু সিংহ, প্রশান্ত নাথ, পূর্বস্থলীর সনৎ মন্ডল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত,বিশ্বের বৃহত্তম যুব সংগঠন নেহেরু যুব কেন্দ্র ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আমলে ১৯৮৭ সালে ভারত সরকারের যুব ও ক্রীড়া দপ্তরের অধীনে এটি স্ব-শাসিত সংস্হা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে এবং নেহেরু যুব কেন্দ্র সংগঠন নামে পরিচিতি লাভ করে। শুরু থেকেই সংগঠনটি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরীরচর্চা প্রভৃতির মাধ্যমে দেশের যুবক-যুবতীদের মধ্যে আত্ম-সচেতনতা গড়ে তোলার কাজে নিজেদের নিযুক্ত করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে চলেছে।
অনুষ্ঠানে প্রতিটি বক্তা বর্তমান যুগে আমাদের জীবনে যোগের গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন এবং শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে নিজেদের সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত যোগ অনুশীলনের পরামর্শ দেন । উত্তরাদেবী বলেন ,’আমাদের লক্ষ্য শুধু যোগ নয় খেলাধুলা, শরীরচর্চা প্রভৃতির মাধ্যমে দেশের যুব সমাজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা।’ তিনি যুব সমাজকে নিয়মিত যোগ অনুশীলনের জন্য আহ্বান জানান ।।