প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ জুন : প্রতারিতের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েই জাল পাসপোর্ট, ভোটার,আধার তৈরি চক্রের এক পাণ্ডাকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।ধৃতের নাম বিপ্লব সরকার। তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি পৌরসভার পারিজাত নগর এলাকায়।মেমারি থানার পুলিশ মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তল্লাশিতে ধৃতের বাড়ি থেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের জাল শিলমোহর, লেটারহেড সহ অন্য নানা সরঞ্জাম উদ্ধার হতেই পুলিশের চোখ কপালে ওঠে । সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ বুধবার ধৃতকে পেশ করে বর্ধমান আদালতে । তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতকে ১০ দিন পুলিশিহেপাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার । বিচারক ধৃতের ৫ দিন পুলিশ হেপাজত মঞ্জুর করেছেন ।
পুলিশ জানিয়েছে,মেমারির পারিজাত নগর এলাকার বাসিন্দা অতনু মণ্ডল।ব্যবসার প্রয়োজনে তাঁকে হুগলীতে থাকতে হয়। অতনু মণ্ডল নিজের পাসপোর্ট করানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন।তা জানতে পেরে অতনু মণ্ডলকে পাসপোর্ট করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় বিপ্লব সরকার । অতনু মণ্ডল তাতে রাজি হয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র বিপ্লব সরকারকে দেয় । এমনকি বিপ্লব সরকার পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য অতনু মণ্ডলের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকাও নেয়। পরবর্তি সময়ে বিপ্লব পাসপোর্ট সংক্রান্ত কিছু নথি অতনু বাবুকে দেয় । সেই নথি নিয়ে অতনু বাবু কলকাতায় পাসপোর্ট অফিয়ে যাচাই করতে গিয়ে জানতে পারেন বিপ্লব সরকার তাঁকে জাল নথি দিয়েছে ।এরপরেই মেমারি থানার দ্বারস্থ হন অতনু বাবু ।তিনি গোটা ঘটনা উল্লেখ করে পুলিশের কাছে অভিযোগও জানান।অভিযোগ পাওয়ার পরেই মেমারি থানার পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। মঙ্গলবার রাতেই অভিযুক্ত বিপ্লবের পরিজাতনগরের বাড়িতে হানা দিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ।পুলিশ দাবী করেছে, ধৃতের বাড়ি থেকে বিভিন্ন সরকারী দফতরের ৮০ টি জাল শিলমোহর ছাড়াও ডি. এম থেকে থেকে শুরু করে বি এল আর ও এমনকি রাজ্যের একাধীক বিধায়কের জাল লেটারহেড উদ্ধার হয়েছে।এছাড়াও একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার,ল্যাপটপ,বেশ কিছু জাল জন্ম সার্টিফিকেট, ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড উদ্ধার হয়েছে ।
প্রতারিত অতনু মণ্ডল জানিয়েছেন,বিপ্লবের দেওয়া পাসপোর্টের নথিপত্র নিয়ে কলকাতায় পাশপোর্ট অফিসে গিয়ে তিনি রীতিমতো অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েন যান। সেখানকার আধিকারিকরা তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন সব নথিপত্রই জাল।অতনু বাবুর আরো অভিযোগ,বিপ্লব মণ্ডল নকল ভোটার,আধার ও প্যান কার্ডও বানাতো।এই বিষয়ে তিনিও নিশ্চিৎ হয়েছেন। কারণ ,তার পুরানো ভোটার কার্ডটি হারিয়ে গিয়েছিল।প্যান কার্ডে নামের বানান ভুল ছিল। ওইসব কার্ডের ঠিকানা তিনি হুগলির থেকে মেমারিতে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন ।তা জেনে মেমারিতে ভোটার তালিকায় নাম না থাকা সত্বেও মাত্র এক মাসের মধ্যেই তাঁর ভোটার কার্ড বিপ্লব বানিয়ে দেয় ।পরে নিশ্চিৎ হন বিপ্লবের বানিয়ে দেওয়া ভোটার কার্ডটিও জাল ।
মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (বর্ধমান দক্ষিণ)
সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন,বিপ্লব সরকার
হুবহু নকল পাসপোর্ট ,ভোটার,অধার ও প্যান কার্ড বানিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতো বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে । বিপ্লব সরকারই প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা বলে এক প্রকার নিশ্চিৎ হওয়া গেছে।এই চক্রের জাল কতদূর বিস্তৃত রয়েছে ও চক্রে আর কারা কারা যুক্ত রয়েছে সেই তথ্য উদ্ধারের জন্য বিপ্লব কে হেপাজতে নেওয়া হয়েছে।চক্রে যাঁরাই যুক্ত থাক তাদের কাউকেই রেয়াত করা হবে না বলে এসডিপিও জানিয়েছেন ।।