এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০৬ জুন : বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের কাজ করছিলেন গৃহবধু । তারই মাঝে সরকারি চাকরি পেয়ে যান তিনি । এদিকে বেকার স্বামী ও তার পরিবারের আশঙ্কা ছিল বধু সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে আর স্বামীর ঘর করবে না । আর এই আশঙ্কায় বধুর ডান হাত ধারালো অস্ত্রের কোপে বিচ্ছিন্ন করে দিল গুনধর স্বামী । শুধু তাইই নয়, বধু যাতে চাকরিতে কোনোভাবেই যোগ দিতে না পারে তার জন্য তাঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার,চাকরি সংক্রান্ত বাকি কাগজপত্র এবং যাবতীয় শংসাপত্র নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন । নৃসংস এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলার কেতুগ্রাম থানার কোজলসা গ্রামে । রেণু খাতুন নামে ওই গৃহবধূ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক । অভিযুক্ত স্বামী শের মহম্মদ শেখ ওরফে সরিফুল শেখ,তার বাড়ির লোকজন এবং তার কয়েকজন বন্ধুকে খুঁজছে পুলিশ ।
স্থানীয় ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে,কেতুগ্রাম থানার চিনিসপুর গ্রামে বাপের বাড়ি রেণু খাতুনের । পড়াশোনা করার সময় থেকেই কোজলসা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ শেখের একমাত্র ছেলে সরিফুলের সঙ্গে রেণুর পরিচয় ও প্রেম । ২০১৭ সালে তাঁদের বিয়ে হয় । বিয়েতে এক লক্ষ টাকা নগদ , ৮ ভরি সোনার গহনা, একটি স্কুটি এবং আনুষাঙ্গিক আরও কিছু জিনিস যৌতুক হিসাবে দিতে হয়েছিল বলে জানান রেণু খাতুনের বাবা আজিজুল হক । রেণু নার্সিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত । বিয়ের পর দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সপদে চাকরি করছিলেন তিনি । পাশাপাশি সরকারি চাকরির জন্যও চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন । অন্যদিকে সরিফুলের বাবা সিরাজ শেখের গ্রামেই একটি মুদিখানা দোকান আছে । ওই দোকানটি মাস খানেক ধরে চালাচ্ছিল সরিফুল ।
রেণু খাতুনের দাদা রিপন শেখ জানান,সম্প্রতি সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাঁর বোন । কয়েকদিনের মধ্যেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা । কিন্তু রেণু সরকারি চাকরি করুক এটা মেনে নিতে পারছিল না সরিফুল ও তার বাড়ির লোকজন । তাদের আশঙ্কা ছিল চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর হয়তো রেণু আর শ্বশুরবাড়িতে থাকবে না । তাই সরকারি চাকরি না করা জন্য রেণুর উপর তারা চাপ সৃষ্টি করছিল । কিন্তু রেণু নতি স্বীকার করেনি ।
আক্রান্ত বধুর বাবা আজিজুল হকের অভিযোগ, ‘দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি থেকে ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার পর শনিবার চিনিসপুরে আসে মেয়ে । তারপর রাতে শ্বশুরবাড়ি চলে যায় । পরে জানতে পারি রাতে রেণু যখন ঘরে ঘুমচ্ছিল তখন দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রেণুর ওপর চড়াও হয় সরিফুল । ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার মেয়ের ডানহাতের কব্জি বিছিন্ন করে দেয় । মেয়ের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে ওরা সবাই পালিয়ে যায় ।’
জানা গেছে,এরপর বধুকে প্রথমে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় । কিন্তু অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । পরে পরিবারের লোকজন দুর্গাপুরে যে বেসরকারি হাসপাতালে আহত বধু কাজ করতেন সেখানে তাঁকে ভর্তি করেন । বর্তমানে ওই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বধু । এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা জেলায় ।।