প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ ফেব্রুয়ারি : ভোটটা দেবেতো পদ্ম ফুলে ? ভালো করে হেসে বলো ! বাড়ি বাড়ি পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে ঠিক এই ভাবেই এক ভোটারের কাছে কাতর ভাবে অনুনয় বিনয় করছেন তৃণমূল নেতা।এমনটা জেনে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হয়তো চমকে উঠবেন । কিন্তু বাস্তবেই চমকে দেবার মতনই এমন ঘটনা পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের অনেক বলিষ্ঠ নেতা নেত্রীর সামনেই ঘটেছে মেমারিতে। ভোটারকে মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বপন ঘোষালের পদ্মফুলে ভোটে দিতে বলছেন শুনে তাঁরাই শেষে চিৎকার করে বলে ওঠেন পদ্ম নয়,জোড়া ফুল,জোড়া ফুল। এইসব দেখে মেমারি পৌরসভা ভোটের প্রাক্কালে তৃণমূলের অন্দরেই তৈরি হয়েছে ‘সাবোটেজের’ আতঙ্ক।
মেমারিসহ রাজ্যের ১০৮ টি পৌরসভার নির্বাচন হবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি। ১৬ আসনের মেমারি পৌরসভা এবারও নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া মেমারির তৃণমূল কর্মীরা। তাই দলীয় নেতৃত্ব চুড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই মেমারি শহর জুড়ে শুরু হয়ে যায় তৃণমূলের জোরদার প্রচার।দিন দুই আগে
মেমারি পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নল পুকুরপাড় এলাকায় হয় দলীয় প্রার্থী পদ্ম ক্ষেত্রপালে সমর্থনে প্রচারাভিযান । সেই প্রচার কর্মসূচীর অগ্রভাগে থাকেন প্রার্থী ও মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বপন ঘোষাল । এছাড়াও ছিলেন মেমারি পৌরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ী,মেমারি ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য ,জেলাপরিষদ সভাধীপতি শম্পা ধারা ও জেলাপরিষদ কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম।তাঁদের চোখের সামনেই ওই এলাকার প্রৌঢ় ভোটার ছোটন সাহানি কে শহর তৃণমূল সভাপতি স্বপন ঘোষাল বলেন ,“ভোটটা দেবেতো পদ্ম ফুলে ? ভালো করে হেসে বলো !“ এই কথা শুনে প্রচারে বের হওয়া অন্য নেতা নেত্রীরা কার্যত চমকে ওঠেন । পরে তাঁরাই চিৎকার করে বলে ওঠেন ,“পদ্ম ফুলে নয় , পদ্ম ফুলে নয় । ১ নম্বরে জোড়া ফুলে ভোট দেবেন“। ঘটনার পরেই ভাইরাল হয়ে গিয়ে এই ভিডিও এখন মেমারির ভোটারদের ফোনে ফোনে ঘুরছে ।
এই বিষয়ে মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বপন ঘোষাল যদিও শুক্রবার দাবি করেন, তিনি ওই ভোটারকে পদ্মফুলে ভেট দিতে বলেন নি । তিনি বলেন , ’আমি বলেছি দেবেন তো ভোটটা পদ্মকে ফুলে’।সেটা শুনে সবাই ভুল করে ধরে নেয় আমি পদ্ম ফুলের কথা বলেছি । তাই প্রচারে থাকা অন্যরা বলে ওঠেন পদ্মফুল নয় ,জোড়া ফুল ’। অর্থাৎ দলের জোড়া ফুল প্রতীকের কথা স্বপনবাবু যে ভোটারের কাছে তুলে ধরেন নি তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় । পাশাপাশি স্বপন ঘোষাল এও জানান ,১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির কোন প্রার্থী নেই ।কাজেই সেখানের পদ্মফুল কোন গল্পও নেই । আর কংগ্রেসের প্রার্থী রুপা খাঁড়া এদিন থেকে তৃণমূলের হয়ে গিয়েছে বলে স্বপন ঘোষাল জানান ।
তবে স্বপন ঘোষাল যাই বলুন না কেন মেমারির একটা বড় অংশের তৃণমূল কর্মীরা ভোটের দোরগোড়ায় তাঁকে সন্দেহের চোখেই দেখতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য ,দলের প্রথম প্রকাশিত প্রার্থী তালিকায় প্রার্থী হিসাবে স্বপন ঘোষালের নাম ছিল । পরে দ্বিতীয় তালিকায় স্বপনবাবুর নাম বাদ যায় । কর্মীদের বক্তব্য তা নিয়েই হয়তো ক্ষোভে স্বপন ঘোষাল পদ্মফুলে ভোট দেবার কথা বলে ফেলছেন। আর এইসব দেখে কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে ভোটের দিন ’সাবোটেজ’ হতে পারে ।তাই তাঁরা ঘটনার ভিডিও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রেখেছেন ।
মেমারি সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য স্বপন বাবুর কথার মধ্যে ভুল কিছু দেখছেন না । তারা বলেন , কিছুদিন আগে অনুব্রত মণ্ডল কে পাশে নিয়ে মুকুল রায়-ই তে বলেছিলেন ’বিজেপি মানেই তো তৃণমূল’। তাহলে স্বপনবাবুর আর দোষ কোথায় । তিনি তে মুকুলবাবুর সুরেই সুর মিলিয়েছেন ।।