এইদিন ওয়েবডেস্ক,নাগৌর(রাজস্থান),১৮ ফেব্রুয়ারী : রাজস্থানের নাগৌর(Nagaur) জেলার দেদওয়ানা মহকুমার (Deedwana) পালোট গ্রামে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধু সাত দিন ধরে জয়পুরের সওয়াই মানসিংহ হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা গেলেন । তাঁর শরীরে ছিল নখের গভীর ক্ষত । গোপনাঙ্গেও ছিল গভীর আঘাতের চিহ্ন । গনধর্ষনকারীরা তাঁকে অচেতন অবস্থায় একটি খাদে ফেলে দিয়ে পালিয়েছিল । পরিবারের তরফ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও কার্যত হাত গুটিয়ে বসেছিল রাজস্থানের পুলিশ । ফলে দীর্ঘ ছয় দিন ধরে খাদের মধ্যেই পড়ে থেকে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন নির্যাতিতা । শেষে পুলিশের যখন সম্বিৎ ফেরে তখন মহিলার ক্ষতস্থানগুলিতে পোঁকা গিজগিজ করছে । গত ১০ ফেব্রুয়ারী মহিলাকে যখন প্রথম হাসপাতালে আনা হয়েছিল তখন তাঁর অবস্থা দেখে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকরাও । তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন মহিলাকে বাঁচানোর । কিন্তু মৃত্যুর কাছে হার স্বীকার করেন রাজস্থানের নির্ভয়া ।
জানা গেছে,পালোট গ্রামের ওই গৃহবধু নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা থানায় গণধর্ষণের এফআইআর করলেও পুলিশ এযাবৎ মাত্র দুইজনকে আটক করেছে । একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং একজন নাবালককে আটক করা হয়েছে । পুলিশের দাবি, ওই দুজনে মিলেই নাকি মহিলার উপর অমানবিকভাবে নির্যাতন করে ধর্ষণ করে এবং তারপর তাকে মৃত ভেবে গ্রামের বাইরে খাদে ফেলে দিয়ে পালায় । অথচ নির্যাতিতার আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীদের সন্দেহ এই ঘটনায় আরও বেশি লোক জড়িত ।
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, বধুর সন্ধানের জন্য প্রতিদিন তাঁরা থানায় আসতেন । কিন্তু দিদওয়ানা থানার সিআই নরেন্দ্র জাখরের মধ্যে বিশেষ উৎসাহ দেখা যেত না । উপরন্তু তিনি ছুটিতে চলে যান ।
জানা গেছে,ইতিমধ্যে এসপি রামমূর্তি যোশী ডাকাতির মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে দিদওয়ানা থানায় পৌঁছলে নির্যাতিতার পরিবার তাঁকে সব খুলে বললে নড়েচড়ে বসে পুলিশ । আর তখনই এসপির নির্দেশে দুই অভিযুক্তকে আটক করা হয় । তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই গনধর্ষনের পর মহিলাকে খাদে ফেলে দেওয়ার কথা কবুল করে । এরপর ১০ ফেব্রুয়ারী গ্রামের পাশে খাদ থেকে বধুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ । কিন্তু সাত দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যান নির্যাতিতা । এসপি রামামূর্তি যোশি দায়িত্বে অবহেলার জন্য এসএইচও নরেন্দ্র জাখর এবং হেড কনস্টেবল প্রহ্লাদ সিংকে সাসপেন্ড করেছেন ।
এদিকে এই ঘটনায় ঘটনা নিয়ে দলিত সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন তাঁরা । শুক্রবার মেঘওয়াল সমাজ ভবনে এনিয়ে সর্বসমাজের একটি সভা ডাকা হয়েছে । পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা ।
মৃতার পরিবারের সদস্যরাও জানিয়ে দিয়েছেন সমস্ত আসামীদের গ্রেফতার করে আইনানুগ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত মৃতদেহের শেষকৃত্য করবেন না । তাঁদের দাবি, পুলিশ যদি যথা সময়ে পদক্ষেপ নিত তাহলে বধুকে বাঁচানো যেত । বধুর বয়ান নথিভুক্ত করে সমস্ত দোষীদের ধরা সম্ভব হত । কিন্তু পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পুলিশ ইচ্ছা করে নির্যাতিতাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মৃতার পরিবার পরিজন ও গ্রামবাসীরা ।।