প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ জুন : অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় নিজে জখম হয়েও অন্যদের বাঁচানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক জিয়াদুল মন্ডল।রবিবার কালনার কপুরডাঙ্গার বাড়িতে ফিরে তিনি যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তা শিউড়ে ওঠার মতোই । পাশাপাশি কিছু লুটেরা কি ভাবে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ও জখমদের সম্পদ লটপাট করে সেই কথাও তিনি তুলে ধরেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের দুমরে মূচরে যাওয়া কামরায় জখমদের আর্তনান জিয়াদুলকে এখনও যেন শোকাতুর করে রেখেছে ।
কালনার জিয়াদুল মণ্ডল অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনেরই যাত্রী ছিলেন। তিনি ভিন রাজ্যো শ্রমিকের কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। এদিন কালনা মহকুমা হাসপাতালের বেডে শুয়ে জিয়াদুল বলেন, ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর তাদের কামরাটা রেল লাইন থেকে অন্তত ৩০ ফুট দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ে। ওই কামরাতে থাকা ২৩ জনের মৃত্যু হয়।বরাত জোরে প্রাণে বেচে গেলেও ভালই চোট পান।কিন্তু ওই সময়ে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের কামরা থেকে ভেসে আসা অন্য জখম যাত্রীদের আর্তনাদ শুনে তিনি মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারেন নি। তাই নিজের শরীরের আঘাত ভুলে তিনি দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কামরা আর্তনাদ করতে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারে নেমে পড়েন।
জিয়াদুলের কথায় ,জখম ট্রেনযাত্রীরা সকলেই তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন । এমন আর্তনাদ করতে থাকা এক জখম যাত্রীর পা ধরে টেনে তিনি তাকে বার করার সময় ওই যাত্রীর কোমর ও পায়ের অংশ দেহ থেকে বিচ্ছিন হয়ে যায় ।যা চাক্ষুষ করে তিনি শিউরে ওঠেন । পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থলে হওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতা কথাও শোনান জিয়াদুল মণ্ডল। তিনি বলেন,দুর্ঘটনার পর উদ্ধারের নামে এক শ্রেণির মানুষজন কার্যত লুটপাট চালাতে থাকে। আহত , মৃত কেউই ওই লুটেরাদের হাত থেকে রেহাই পায় নি । জখমদের ব্যাগপত্র,টাকা পয়সা সবই ওই লুটেরারা গায়েব করে দেয় । এইসব অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জিয়াদুল চোখের জল ধরে রাখতো পারেননি।
জিয়াদুলকে বালেশ্বর থেকে ফিরিয়ে আনতে যাওয়া প্রতিবেশীরা অভিযোগে বলেন,ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম বা আহতদের সরকারি বাসে কোনো ভাড়া লাগবে না ,এমনটা বলা হলেও তার উল্টোটাই ঘটেছে। ওড়িশা থেকে বাংলায় আসার পথে আহতদের কাছ থেকে মাঝ রাস্তায় ৪০০ টাকা দাবি করেন ওড়িশার বাস কর্মীরা। টাকা না দিলে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে বলেও ওই বাস কর্মীরা আহত যাত্রীদের হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে ভড়া মিটিয়ে তবেই বাসে চড়ে ফিরতে পারেন জখম ও আহত যাত্রীরা ।ওড়িশার বাস কর্মীদের এমন অমানবিকতা কোনদিনও ভোলার নয় বলে জিয়াদুলের প্রতিবেশীরা মন্তব্য করেছেন ।।