এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ মে : সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অবশেষে চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের পুনরায় পরীক্ষার দিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তিনি জানান, আগামী ৩০ মে এসএসসির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি হবে৷ সমান্তরালভাবে নজর থাকবে রিভিউ পিটিশনের দিকেও । যানিয়ে ইতিমধ্যেই বহু প্রশ্ন উঠছে৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছেন, ‘পরীক্ষার সূচি আপনার কত নম্বর প্ল্যানের অংশ ?’ এর আগে সর্বোচ্চ আদালত পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলকে টাকা কামানোর ব্যবস্থা করে দিল সুপ্রিম কোর্ট ।’ আজ ফের তিনি ‘মাননীয়া’ মমতা ব্যানার্জিকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘আপনার দলের নেতারা আবার লক্ষ লক্ষ টাকায় চাকরি বিক্রি করার সুযোগের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে।’
মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে পরীক্ষার দিন ঘোষণার পর শুভেন্দু অধিকারী বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে । তিনি সেই সমস্ত প্রশ্নগুলি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন । শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’আজ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দুটো অপশন (পথের) কথা বলেছেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে:- ১) আদালতের পুনর্বিবেচনার আর্জির ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকা। ২) পুনরায় পরীক্ষায় বসা ।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়া, আপনি বিগত কয়েক মাস ধরে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের নানা রকম আশ্বাস, অভয় দিয়েছেন। কখনো বলেছেন স্কুলে ফিরে যান, কখনো বলেছেন স্কুলে পড়াতে তো কোনো বারণ নেই (তা সে বেতন ছাড়াই হোক না কেন), কখনো বলেছেন সরকার পাশে আছে, ভরসা রাখুন চাকরি যাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি…আপনার নাকি প্ল্যান এ, বি, সি, ডি… তৈরি আছে।
আজ যখন পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করলেন (যেটা সম্পূর্ণ এসএসসি-র এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে, আপনার কোনো ভূমিকা হওয়া উচিত নয়), তখন উল্লেখ করলেন না কেন যে, এই ঘোষণা আপনার কত নম্বার প্ল্যানের অংশ?’
বিরোধী দলনেতা লিখেছেন,’আপনি আজও চেষ্টা করেছেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিভ্রান্ত করতে, তবে আর কত দিন ঠকাবেন এই যোগ্য নিরপরাধ চাকরিহারাদের? আজ তারা আপনার এই ঘোষণা কে ‘মৃত্যুপরোয়ানা’ বলে উল্লেখ করেছে।
যাই হোক, আপনি দুটো অপশনের (পথের) কথা বলেছেন, আমি আপনাকে তিনটা সহজ প্রশ্ন করতে চাই:-
১) যদি আদালতে পুনর্বিবেচনার আর্জির ফলাফল চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের পুনর্বহাল করার পক্ষে না যায়, তবে আর কোন আইনি পথে এদের সাহায্য করা সম্ভব হবে? কারণ যোগ্যদের তালিকা আদালতে জমা না দিয়ে আপনি নিজে এদের আইনি সম্ভাবনার সমস্ত দরজার শিকলে তালা দিয়েছেন।
২) পুনরায় পরীক্ষায় বসতে বলে যে উপদেশ আপনি দিচ্ছেন, কি গ্যারান্টি আছে, যে যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকারা চাকরি হারিয়েছেন আপনার সরকারের শিক্ষামন্ত্রী, আপনার দলের নেতাদের ও তৎকালীন এসএসসি কর্তাদের দুর্নীতির ফলে, তারাই আবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি ফিরে পাবেন? হয়তো সম্পূর্ণ নতুন ব্যক্তিরা চাকরি পেলেন। আপনি দায়িত্ব নিয়ে, ১০০% সুনিশ্চিত ভাবে এক জন কারুর নাম বলতে পারবেন যে চাকরি ফিরে পাবেই পাবে? হয়তো কিছু জন পাবে, বেশি বা কম, সে তো ফলাফল বেরোলে বোঝা যাবে।
৩) যে রিভিউ পিটিশন নিয়ে আপনি এত আশাবাদী, এবং চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভরসা জোগানোর আপনার এক মাত্র সম্বল, সেই রিভিউ পিটিশন দাখিল করার সময়ে কি যোগ্যদের তালিকা জমা দিয়েছেন সাথে?
শুভেন্দু আরও লিখেছেন,’যে বিজ্ঞপ্তি জারি করার ঘোষণা আজ করলেন এবং যার ফলে পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষকতার চাকরির শূন্যপদে আবার নিয়োগ হবে, এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার ব্যাপারে সব থেকে খুশি হয়েছে আপনার দলের নেতারা, কারণ তারা আবার লক্ষ লক্ষ টাকায় চাকরি বিক্রি করার সুযোগের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে ।’
প্রসঙ্গত,মঙ্গলবারের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন যে, পরীক্ষায় বসতেই হবে। তাঁর কথায়,’চাকরি বাতিলটা সরকারের অর্ডার নয়। আমরা সুপ্রিম কোর্টে কারও চাকরি যাওয়ার কথা বলিনি। কিছু স্বার্থপর মানুষ এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পরীক্ষা দেব না বলে কোনও লাভ নেই। সবাইকে বলব, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সব অপশন কাজে লাগান। আসল লক্ষ্য আমাদের চাকরি ফিরে পাওয়া।’
যদিও অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন । সাংবাদিক প্রসূন মৈত্র বলেছেন,’মানে সোজা কথায় মমতা ব্যানার্জী যেটা বুঝিয়ে দিলেন সেটা হলো যে “নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থে চাকরিহারাদের নিয়ে রাজনীতি” শুধু তিনিই করবেন আর সেটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মুখ্যসচিব’কে পাশে বসিয়ে। রাজ্যবাসী লজ্জা পাও।’
এদিকে নতুন করে পরীক্ষায় বসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিহারারা । মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই সাংবাদিক বৈঠক করে চাকরিহারারা বলেন,’মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস বিবৃতি দেখে আমাদের মনে হল সমস্ত যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য একটা মৃত্যু পরোয়ানা ঘোষণা করলেন।’ তারা বলেন,’আমরা কখনও চাইনি যে বিজ্ঞপ্তি জারি হোক। মুখ্যমন্ত্রী যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা বললেন, সেখানে এত ডিটেলস নোটিফিকেশন দেওয়ার কথা বলা হয়নি। আমাদের একটা আশঙ্কা ছিল, সরকার আমাদের পরীক্ষার দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। ডিটেলস নোটিফিকেশন দেওয়ায়, সেই আশঙ্কা সত্যি যাচ্ছে। আমাদের মনে হচ্ছে, যোগ্যদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।’।

