এইদিন ওয়েবডেস্ক,জলপাইগুড়ি,১৩ ডিসেম্বর : অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মান প্রধানমন্ত্রী তুইতোকারি করে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের এসসি/এসটি/ওবিসি সেলের সভাপতি কৃষ্ণ দাস বলেছেন, ‘তুই দশরথের ব্যাটার ঘর বানালি, যাকে দেখাই যায় না, আর একশ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখে দিলি।’ শুধু তাই নয়, মুসলিমদের ‘ন্যায্যবাদী মানুষ’ হিসাবে অবিহিত করে এবং ‘মুসলিমরা কারোর জায়গা দখল করতে পারে না’ বলে দাবি করে ওই তৃণমূল নেতা পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে ‘ভাই’ বলেও সম্বোধন করেছে। এদিকে তার এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজেপি । বিজেপি মনে করছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে তৃণমূলের ‘আঁতাত আছে’ ।
জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের আমবাড়ি তারঘেরা ময়দানে শুক্রবার বিকেলে এস আই আর এর বিরুদ্ধে জনসভা ছিল তৃণমূলের । ওই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেন বক্তব্য রাখতে গিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের এসসি/এসটি/ওবিসি সেলের সভাপতি কৃষ্ণ দাস৷ তিনি বলেন,’পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আমাদের ভাই । তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রাখতে হবে । তাদের কোনোভাবেই আলাদা করা যাবে না । আমরা একটাই কথা বলব পড়শির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হোক । পড়শীর সঙ্গে যদি আমরা খারাপ সম্পর্ক করি, পাশের বাড়ির সঙ্গে যদি ভালো সম্পর্ক রাখি তাহলে বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের আক্রমণ করতে পারবে না। অতএব আমি একটা জিনিস বলব বাংলাদেশ পাকিস্তান আমাদের পড়শী৷ পড়শী শুধু নয়, বলতে গেলে আমাদের ভাই । ১৯৪৭ সালের দুই দেশ ভাগ হয় । আমাদের লড়াই করা দরকার চায়নার সঙ্গে । আমাদের লড়াই করার দরকার ইংল্যান্ডের সঙ্গে । ইংল্যান্ড যারা আমাদের এখানে ২০০ বছর রাজত্ব করেছে, শোষণ শাসন সবকিছু করেছে, তাদের সঙ্গে লড়াই করা উচিত । কিন্তু আমাদের ভাইয়ের সঙ্গে বাজে মন্তব্য করা ঝগড়া করা তাদের সঙ্গে সময় নষ্ট করা, এটা ঠিক নয়।’
তৃণমূলের ওবিসি সেলের সভাপতি কৃষ্ণ দাসের কথায়,’মুসলমান হচ্ছে পবিত্র ধর্ম, মুসলমান হচ্ছে পবিত্র মানুষ, মুসলমান হচ্ছে ন্যায্যবাদী মানুষ, মুসলমান হচ্ছে পরোপকারী মানুষ, মুসলমান কোনদিন পরের সম্পত্তি দখল করতে পারে না । এটা কোরানে আছে । তাহলে বাবরি বাবরি নিয়ে কেন চেচাচ্ছেন ? ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী হচ্ছে মামাতো পিসতুতো ভাই। ওদিকে মোদী আর আমাদের এইদিকে হুমায়ুন কবির মামাতো পিসতুতো ভাই । ওই বাগে হবে রাম মন্দির, এই পারে হবে মসজিদ । ওরে বাপরে বাপ । আমাদের দরকার কি ? দরকার স্কুল, কলেজ, চিকিৎসালয় । দরকার আমার ইন্ডাস্ট্রি ।’
তিনি বলেন,’এই রামচন্দ্র, যার কোন ঠিকানা নেই, যার লাপতা নেই, যাকে দেখা যায় না, যাকে ডাকলেও শোনে না, তার টানে হামারে এত জ্বালা । রামায়ণ এবং মহাভারত একটা কাল্পনিক গল্প । কোনো ভগবান টগবান নেই । একটা কাল্পনিক গল্প ।’
দুর্নীতির অভিযোগে ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়ায় কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তুইতোকারি করে কৃষ্ণ দাস বলেন,’একশ দিনের কাজ করে খাচ্ছিল, টাকা বন্ধ । আরে মন্দির বানাচ্ছিস আর গরিবের টাকা আটকে রেখে দিয়েছিস । অযোধ্যার রামচন্দ্রের ব্যাটার সম্পত্তির কুলকিনারা নাই । আর তার নামে মন্দির বানাচ্ছিস? সে কি ভিখারি ? আমরা তোকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছে কিসের টানে? আমর ঘর নাগে । আমর চিকিৎসা নাগে। আমার চাকরি নাগে। আমার রোজকার নাগে । আমার শিক্ষা নাগে । আর তুই কার ঘর বানাইছিস ? রামচন্দ্র ? যার কোনো ঠিকানা নেই । যার কোনো লাপতা নেই । যাকে দেখাও না যায় । যে ডাকালেও শোনে না । তুই ওর দিয়েছিস ঘর । আর যে কাঁন্দি কাঁন্দি মরছে তার তুই খবরেই নেই । তার তুই ঘরেও নেই ।’
অন্যদিকে স্থানীয় বিজেপি নেতা এই প্রকার বিতর্কিত মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন,’তৃণমূলের নেতারা সব সময় পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ প্রেমী হয় । কারণ হচ্ছে একটাই পাকিস্তান থেকে এবং মায়ানমার থেকে যে রোহিঙ্গারা আসবে তারা তৃণমূলের ভোটার । যে পাকিস্তান ভারতের সেনার উপর আক্রমণ করে, যে পাকিস্তানের জঙ্গি-গোষ্ঠী এসে ভারতে আক্রমণ করে, বোমা বিস্ফোরণ করে, ভারতের সৈন্যদের মারে জনসাধারণকে মারে, যে বাংলাদেশের মোঃ ইউনুসের সরকার বলে আমরা চিকেন নেক দখল করব, সেই তৃণমূলের নেতারা পাকিস্তানের বাংলাদেশের দালালি করে । তবে যতক্ষণ নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আছেন ততক্ষণ বাংলাদেশি বা পাকিস্তানেদের ক্ষমতা নেই ভারত আক্রমণ করার ।’ তিনি আরও বলেছেন,’আর তৃণমূলের কাজ হচ্ছে পাকিস্তানি আর বাংলাদেশিদের চাটা । অনুপ্রবেশকারীরা তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে । পাকিস্তান বাংলাদেশের যে সমস্ত জঙ্গি সংগঠন গুলো আছে সেগুলোর সঙ্গে হয়তো তৃণমূলের কোনো যোগসূত্র আছে। তা না হলে কেন তারা এত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশি প্রেমী হবে ? তৃণমূল নিজের দেশের চিন্তা করে না। তাদের পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের চিন্তা বেশি । তৃণমূল যে থালায় খায় সেই থালায় ফুটো করে।’।

