এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ আগস্ট : কলকাতার ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের গ্যালারিতে টাঙানো ব্যানার নজর কেড়েছে সকলের৷ ব্যানারে লেখা আছে : “ভারত স্বাধীন করতে সেদিন পরেছিলাম ফাঁসি ! / মায়ের ভাষা বলছি বলে, আজকে বাংলাদেশি ?” গ্যালারিতে টাঙানো ব্যানারের ছবিটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন রাজ্য বিজেপির যুবনেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারি ৷ তিনি “ইস্টবেঙ্গল”-এর আক্ষরিক অর্থ অনুসারে নিজের মত করে ওই শ্লোগানের ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন । আর তাতে বেজায় চটেছে তৃণমূলের লোকজন । তারা তরুনজ্যোতিকে “তুই তোকারি” করে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করছে ।
প্রসঙ্গত,ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) বাংলা অর্থ হল “পূর্ব বঙ্গ” । যাকে আমরা বাংলাদেশ বলে জানি । কলকাতার দুই জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা মূলত দুই বঙ্গের ফুটবল প্রেমিরা বলে জানেন সকলে । সাধারণত পূর্ব বঙ্গ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাঙালি, যাদের এরাজ্যের মানুষ “বাঙাল” হিসাবে চেনে, তারাই মূলত ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থক বলে পরিচিত। অন্যদিকে মোহনবাগান ক্লাবের সমর্থক মূলত পশ্চিমবঙ্গের আদি বাসিন্দারা বলে মনে করা হয় । আর এই বিষয়টি উত্থাপন করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসার কারন জানতে চেয়েছেন তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । আর তরুনজ্যোতির এই অপরাধের জন্য তার “তিওয়ারি” পদবিকেই আক্রমণের হাতিয়ার করছে তৃণমূলের লোকজন ও বাংলা ভাষার স্বঘোষিত রক্ষকরা । “তুই তোকারি” করে কদর্য ভাষায় আক্রমণের পাশাপাশি ২০২৬ সালে তৃণমূল ভোটে জেতার পর তরুনজ্যোতিকে বিহারে পাঠানোর হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে কেউ কেউ ।
তরুনজ্যোতি তিওয়ারি শুধু লিখেছেন,’আজকের ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি। লেখাটা খুব ভালো। আচ্ছা ক্লাব টার নাম ইস্টবেঙ্গল কেন? কিসের স্মৃতি আছে, তার পেছনে ? মায়ের ভাষা বলার পরেও ওই দেশ থেকে পালাতে কেন হয়েছিল? প্রতিবেশী ছিল, ভাষা এক ছিল, পুকুর ভরা মাছ, গাছ ভরা নারকেল, জমি বাড়ি সবই তো ছিল। মা-বোনের ইজ্জত বাঁচিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে চলে আসতে হয়েছিল কেন? কাদের অত্যাচারে চলে আসতে হয়েছিল? এখনো পর্যন্ত যারা টিকে গেছে ওই দেশে তাদের ওপর অত্যাচার কারা করছে? ভাষা এক ছিল তাই বলে অত্যাচার কি কম হয়েছিল? সব ভুলে গেলেন নাকি?’
তিনি আরও লিখেছেন,’আপনাদের মনে না থাকলে বাড়ির বড়দের জিজ্ঞেস করুন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ওপার বাংলা থেকে পালিয়ে এপার বাংলায় রক্ষা পেয়েছিলেন। এবার কোথায় যাবেন ভেবেছেন? যারা এত সুন্দর লেখাটা লিখেছেন তাদের জিজ্ঞেস করে নেবেন তো একটু।’
এদিকে তরুনজ্যোতির এই মন্তব্যের পর বিভিন্নজন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন । যার অধিকাংশ নেতিবাচক । অসিত মিত্র নামে এক ব্যক্তি স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দুত্ববাদীদের ভূমিকা কি ছিল, সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে লিখেছেন,’একটা হিন্দুত্ববাদী সনাতনীদের নাম পাওয়া যাবে না যে দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে ছিল। ওরা তখন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহায়তা করতো বাঙালি বিপ্লবীদের গোপন আস্তানার খবর পাচার করে গ্রেপ্তার করাতে সাহায্য করতো।’
শঙ্কর(@yansan) নামে একজন লিখেছেন,’তিওয়ারি, শোনো, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পয়লা আগস্ট, ১৯২০ সালে, দেশ ভাগ হওয়ার অনেক আগে। ইতিহাস জেনে কোথা বলো। আর ১৯৪৭ এর অক্টোবর এ বিহার এ কি ঘটেছিলো সেটাও মনে করে দেখো। অন্যায় দুদিকে ঘটেছে।’
সিদ্ধার্থ সেনগুপ্তের প্রতিক্রিয়া, ‘বাংলা ও বাঙালির বেশ কিছু জিনিস আছে যা নিয়ে অবাঙালিদের মন্তব্যকে অনধিকার চর্চা বলে ধরা হয়। ইতিমধ্যেই বাংলা ভাষা নিয়ে সেই অনধিকার চর্চা বিজেপির অন্যান্য অবাঙালি নেতা (আপনি সহ) করেছেন। বাংলার ক্লাব ফুটবল নিয়ে এক বহিরাগতর অনভিপ্রেত মন্তব্য আরেকটি অনধিকার চর্চা। ফল হাতেনাতে পাবেন।’
ইন্দ্রনীল দাস লিখেছেন,’নিজে বিহারে ফিরে যা, আমাদের ক্লাব এর নাম ইস্ট বেঙ্গল কেনো সেটা বোঝার জন্য পেটে বিদ্যা থাকার দরকার, ইতিহাস জানা দরকার। তোদের মত গুটখাখর দের সেটা নেই, আর শোন বিমারি আর মোল্লা হচ্ছে একই বৃন্তের দুটি কুসুম। যেখানে খাস, সেখানেই নোংরা করিস।’ গৌরব দাস লিখেছেন,’তোকে কেন পালিয়ে আসতে হল বিহার ছেড়ে? জমি বাড়ি ছিল বিহারী প্রতিবেশী ছিল, এখানে বাঙালিদের মাঝে কি করিস তুই ?’
নক্ষত্র(@BombagorerRaja) এর মন্তব্য হল,’কে কোথায় যাবে আপনাকে ভাবতে হবে না, সবার আগে বাক্স প্যাটরা বেঁধে রাখুন আপনি, ২০২৬ এর পর আপনাকে বিহারে ফেরৎ দিয়ে আসা হবে গাধার পিঠে চাপিয়ে মাথা মুড়িয়ে।’
তবে কেউ কেউ তরুনজ্যোতি তিওয়ারিকে সমর্থন করেছেন । অভিষেক সি নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন,’ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক ছিলাম কিন্তু যখন এদের CAB বিরোধী বক্তব্যগুলো দেখেছিলাম সেইদিন থেকে এদের প্রতি আছে শুধু একরাশ ঘৃনা। মার খেয়ে প্রানের ভয়ে যেদিন এদের পূর্বপুরুষরা পালিয়ে এসেছিল আর আজ এরা একটি দেশদ্রোহী দলের সমর্থক কিছু অনুদানের বিনিময়ে।’।

