ভারতের আর এক ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকের গল্প শুনুন । যে একদিনে দশ হাজার দলিতকে হত্যার জন্য দায়ি ছিল । তবে সে করেনি,করিয়েছিল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইসলামি মৌলবাদী জিন্নাহ,পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর । সিএএ জন্মের পর থেকে একটি নাম খুব দ্রুত আবির্ভূত হয়েছে। সিএএ কেন প্রয়োজনীয় তা বোঝাতে অনেক বিজেপি নেতা ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন । আর সেই বিশ্বাসঘাতক কুখ্যাত ব্যক্তিটি হল যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল । ভারতের সিংহভাগ মানুষ তার বিশ্বাস ঘাতকতার সঙ্গে পরিচিত নয় । যে ব্যক্তি শুধু নিজের দেশেরই নয়, নিজে দলিত হয়েও দলিত সম্প্রদায়ের মারাত্মক ক্ষতি করে দিয়েছিল । স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন লোকসভায় যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের নাম নিয়েছিলেন, যদিও ভিন্ন প্রসঙ্গে, তখন ওই ব্যক্তির বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয় কেউ কেউ । এই ব্যক্তি সম্পর্কে সকলের একটু পড়া উচিত এবং এই ‘মহান আত্মা’ কে তা খুঁজে বের করা উচিত ।
আসলে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ১৯০৪ সালে বাংলার বরিশাল জেলার মাইস্কাদির একটি দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৩৯-৪০ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছাকাছি এসেছিলেন, কিন্তু কিছু সময়ের পরে তিনি নিজেকে কংগ্রেস থেকে দূরে সরিয়ে মুসলিম লীগ পার্টিতে যোগ দেন। যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলকে মুসলিম লীগের বিশেষ সদস্যদের মধ্যে গণ্য করা শুরু হয়েছিল কারণ মন্ডল অবিভক্ত ভারতের তিনি একজন খুব বড় দলিত নেতা ছিলেন, এত বড় যে তিনি ডক্টর আম্বেদকরের থেকেও বড় ছিলেন বলে মনে করা হয় । এটাও বলা হয় এবং এর প্রমাণ রয়েছে যে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ডক্টর আম্বেদকর ।
তবে আপনি শুনে অবাক হবেন যে দলিত ও মুসলমানদের জোটের কারণে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল। ‘জয় ভীম জয় মিম’ প্রথম ব্যবহার
করেছিলেন যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল। আর যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ছিলেন দলিতদের একজন বড় নেতা। আজকের নেতারা তাদের সামনে কিছুই নয়। বুঝতেই পারছেন দলিতদের মধ্যে যোগেন্দ্রনাথই সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন। এই কারণেই জিন্নাহ যোগেন্দ্রনাথকে সহজেই মেনে নিয়েছিলেন কারণ জিন্নাহ জানতেন যে দলিতদের সমর্থন ছাড়া পাকিস্তান তৈরি করা যাবে না।
এই যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল জিন্নাহর সাথে পাকিস্তান সৃষ্টির কথা বলতে শুরু করেন, এবং দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনদের বোঝাতে বলতে শুরু করেন যে দলিত ও মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশ হবে। যেখানে আমাদের যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে, আমাদের নতুন দেশ পাকিস্তান সৃষ্টির পর আমরা সকল দলিত ভাইয়েরা ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যাব এবং সেখানে খুব আরামে বসবাস করব। যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল তার ক্ষমতা দিয়ে আসামকে বিভক্ত করেছিলেন, এটি ঘটেছিল ১৯৪৭ সালে। ওই বছর ৩ জুন ঘোষণার পর, আসাম আয়ালহাটকে গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল যে তারা পাকিস্তান না হিন্দুস্তানের অংশ হবে, সেই অঞ্চলে হিন্দু ও মুসলমানের সংখ্যা সমান সমান ছিল। গণভোটে একজন হিন্দু নির্ধারক ফ্যাক্টর হলে সেই অংশ ভারতের কাছেই থাকত, কিন্তু জিন্নাহর ধূর্ত চক্রান্ত কাজ করেছিল এখানে । জিন্নাহ যোগেন্দ্রনাথকে আসামে পাঠান এবং তাকে বলেছিলেন যে সমস্ত দলিতকে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিতে হবে । আর সেটাই ঘটেছে; মন্ডলের এক সংকেতে, দলিতরা পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয় কারণ সেখানে দলিত হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এইভাবে, আসামের সেই অংশটি, যা আজ বাংলাদেশে, পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়… আজকের চট্টগ্রাম ৷ দেশ ভাগের পর খুব উৎসাহের সাথে,যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল জিন্নাহর সাথে পাকিস্তান তৈরি করেন এবং লক্ষাধিক দলিতদের সাথে ভারতকে বিদায় জানিয়ে পাকিস্তানে চলে যান।
কিন্তু যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের মুসলমানদের তথাকথিত সহানুভূতির মায়া অচিরেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় । ১৯৫০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে মাত্র এক দিনে ১০০০০ (দশ হাজার) এরও বেশি দলিতকে হত্যা করা হলে যোগেন্দ্রনাথ তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল নিজেই তার পদত্যাগপত্রে এই কথা বলেছিলেন । জিন্নাহর মৃত্যুর পর, যোগেন্দ্রনাথ একটি দীর্ঘ পদত্যাগপত্র লেখেন যাতে তিনি দলিতদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়ানক নৃশংসতার কথা উল্লেখ করেন এবং অভিযোগ করেন যে পাকিস্তান সরকার সব কিছু চোখ বন্ধ রেখে নৃশংসতা ঘটতে দিয়েছিল । শেষ পর্যন্ত, ১৯৫০ সালে, সেই একই যে ‘জয় ভীম জয় মিম’ শ্লোগান তুলে দেশ ভাগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল, ভারতে আশ্রয় নেন । লাখ লাখ দলিতকে মৃত্যুর মুখে ফেলে যোগন্দ্রনাথ মণ্ডল উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসেন এবং অজ্ঞাতসারে বসবাস শুরু করেন । সম্ভবত তিনি তার কর্মের জন্য লজ্জিত ছিলেন । তার দেখাদেখি ধীরে ধীরে একই দলিত হিন্দুরা উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসতে শুরু করে ।
এই উদ্বাস্তুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য, মোদী সরকার একটি নতুন আইন, সিএএ তৈরি করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যারা নিজেদের দলিতদের শুভাকাঙ্খী বলে ঘোষণা করেছিল তারা নিজেরাই এই আইনের বিরোধিতা করছে এবং তাও মুসলমানদের সাথে সাথ মিলিয়ে । দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক যোগন্দ্রনাথ মণ্ডলের মতই দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ নব্য জিন্নাহদের পাতা ফাঁদে ফের পা দিতে দেখা যাচ্ছে । আজ আবারও জয় ভীম জয় মীম স্লোগান ধ্বনিত হচ্ছে,কিন্তু তারা মাত্র কয়েক দশক আগের ভারতীয় ইতিহাসে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল নামে ওই কলঙ্কিত চরিত্রের শেষ পরিণতি ভুলে গেছে ।।

