জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),১০ আগস্ট : বিশ্বের ৭০টি দেশে প্রায় ৫০ কোটির বেশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করলেও আজও তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এখনো জোর করে আদিবাসীদের জমি দখল করে নেওয়া হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান বা মাতৃভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ তাদের নাই। দেশ এগিয়ে গেলেও বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলস্রোতের বাইরে রেখে কোনো দেশের পক্ষে প্রকৃত উন্নয়ন করা কখনোই সম্ভব নয়।
জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে United Nation Declaration on the Rights of Indigenous Peoples বা আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র উত্থাপন করা হয়। বলা হয় আদিবাসীদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে, মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার দিতে হবে , সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে নিজের মতো করে পরিচালনার অধিকার দিতে হবে ইত্যাদি।
ঘোষণা পূরণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালকে প্রথমবার আদিবাসী বর্ষ
হিসাবে ঘোষণা করে। পরের বছর ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রতি বছর ৯ ই আগষ্ট দিনটিকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস
হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার, ঐতিহ্য রক্ষা, পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই হলো বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে এই রাজ্যেও যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে পালিত হয়ে চলেছে বিশ্ব আদিবাসী দিবস।
মঙ্গলকোট ভারত জাকাত মাঞ্জি পারগাণা মহলের উদ্যোগে নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি পাঠ প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে ৯ ই আগষ্ট পশ্চিম মঙ্গলকোটের জালপাড়ায় পালিত হলো ৩০ তম বিশ্ব আদিবাসী দিবস। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল আদিবাসী সম্প্রদায়ের অর্কেস্ট্রা। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আদিবাসী সমাজের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ দেখা যায়। জালপাড়া ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মঙ্গলকোট থানার আইসি পিন্টু মুখার্জ্জী, এসআই তরুণ সিনহা, পূর্ব বর্ধমান আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক জানক হাঁসদা, লক্ষীরাম হেমরম, সমু মাড্ডি, রবি টুডু, বুদি হেমরম প্রমুখ। এর আগে প্রথা মাফিক আদিবাসী সম্প্রদায়ের পতাকা উত্তোলন ও পুজো করা হয়।
পূর্ব বর্ধমান আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক জানক হাঁসদা বললেন,’সমাজে নিজেদের প্রাপ্র্য অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্যেই এই দিনটি আমরা পালন করে চলেছি। অস্বীকার করার উপায় নাই বর্তমান রাজ্য সরকার তথা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী আমাদের জন্য যথেষ্ট কাজ করে চলেছেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। নিজের ব্যস্ততার মাঝেও যেভাবে আইসি সাহেব ও এস.আই সাহেব দীর্ঘ সময় ধরে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তার জন্য তিনি তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে পিন্টু মুখার্জ্জী বললেন,’যেভাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের যোগ্যতার ছাপ রেখে যাচ্ছে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার কাজে তাদের দ্যাখা যায়। চিকিৎসা জগত থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় তাদের সগৌরব উপস্থিতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নতির দিকে ইঙ্গিত করে। নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রেখেও যেভাবে তারা এগিয়ে আসছে তাতে কোনো প্রশংসায় যথেষ্ট নয়। আগামী দিনে দেশ গড়ার কাজে তাদের আরও বেশি করে দ্যাখা যাবে এব্যাপারে আমি আশাবাদী।’।