প্রশ্ন : জীব, ঈশ্বর ও ব্রহ্মে পার্থক্য কি ?
উত্তর : জীব হচ্ছে ব্যক্তি, আর সকল জীবের সমষ্টি হচ্ছেন ঈশ্বর। জীবের অবিদ্যা প্রবল, ঈশ্বর বিদ্যা ও অবিদ্যার সমষ্টি মায়াকে বশীভূত করে রয়েছেন এবং
স্বাধীনভাবে এই স্থাবরজঙ্গমাত্মক জগৎটা নিজের ভেতর থেকে project (বাহির) করেছেন । ব্রহ্ম কিন্তু ঐ ব্যষ্টি-সমষ্টির অথবা জীব ও ঈশ্বরের পারে বর্তমান । ব্রহ্মের অংশাংশ ভাগ হয় না । বোঝাবার জন্য তাঁর ত্রিপাদ,চতুষ্পাদ ইত্যাদি কল্পনা করা হয়েছে মাত্র । যে পাদে সৃষ্টি-স্থিতি-লয় অধ্যাস হচ্ছে, সেই ভাগকেই শাস্ত্র ‘ঈশ্বর’ বলে নির্দেশ করেছে । অপর ত্রিপাদ
কূটস্থ, যাতে কোনরূপ দ্বৈত কল্পনার ভান নেই; তাই ব্রহ্ম। তা বলে এরূপ যেন মনে করিসনি যে, ব্রহ্ম—জীবজগৎ থেকে একটা স্বতন্ত্র বস্তু ।
বিশিষ্টাদ্বৈতবাদীরা বলেন, ব্রহ্মই জীবজগৎরূপে পরিণত হয়েছেন । অদ্বৈতবাদীরা বলেন,তা নয়, ব্রহ্মে এই জীবজগৎ অধ্যস্ত হয়েছে মাত্র ; কিন্তু বস্তুতঃ ওতে ব্রহ্মের কোনরূপ পরিণাম হয়নি। অদ্বৈতবাদী বলেন, নাম-রূপ নিয়েই জগৎ। যতক্ষণ নাম-রূপ আছে, ততক্ষণ জগৎ আছে। ধ্যানধারণা বলে যখন নাম-রূপের বিলয় হয়ে যায়, তখন এক ব্রহ্মই থাকেন । তখন তোর,আমার বা জীব-জগতের স্বতন্ত্র সত্তার আর অনুভব হয় না। তখন বোধ হয়, আমিই নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ প্রত্যক্-চৈতন্য বা ব্রহ্ম। জীবের স্বরূপই হচ্ছেন ব্রহ্ম ; ধ্যান-ধারণায় নাম-রূপের আবরণটা দূর হয়ে ঐ ভাবটা প্রত্যক্ষ হয় মাত্র ।
উদ্বোধন কার্যালয় কলকাতা হইতে প্রকাশিত “বেদান্ত কি ও কেন” হইতে সংগৃহীত ।