“জড়, শক্তি, মন, চৈতন্য বা অন্য নামে পরিচিত বিভিন্ন জাগতিক শক্তি সেই বিশ্বব্যাপী চৈতন্যেরই প্রকাশ। আমরা ভবিষ্যতে তাঁহাকে ‘পরম প্রভু’ বলিয়া অভিহিত করিব। যাহা কিছু দেখ, শোন বা অনুভব কর, সবই তাঁহার সৃষ্টি ; ঠিক বলিতে গেলে তাঁহারই পরিণাম- আরও ঠিক বলিতে গেলে বলিতে হয়, তিনি স্বয়ং। তিনি সূর্য ও তারকারূপে উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ পাইতেছেন, তিনিই জননী বসুন্ধরা, তিনিই স্বয়ং সমুদ্র। তিনিই মৃদু বৃষ্টিধারারূপে পড়িতেছেন, তিনিই সেই মৃদু বাতাস, যাহা আমরা নিঃশ্বাসের সহিত গ্রহণ করিতেছি, তিনিই দেহে শক্তিরূপে কার্য করিতেছেন। তিনিই বক্তৃতা, তিনিই বক্তা, তিনিই এই শ্রোতৃমণ্ডলী। তিনিই এই বক্তৃতা মঞ্চ,যাহার উপর আমি দণ্ডায়মান; তিনিই ঐ আলোক, যাহা দ্বারা আমি তোমাদের মুখ দেখিতেছি-এ-সবই তিনি । তিনি জগতের উপাদান ও নিমিত্ত কারণ,তিনিই ক্রমসঙ্কুচিত হইয়া অণু হন, আবার ক্রমবিকশিত হইয়া পুনরায় ঈশ্বর হন; তিনিই নিচে নামিয়া আসিয়া অতি নিম্নতম পরমাণু হন; আবার ধীরে ধীরে নিজস্বরূপ প্রকাশ করিয়া স্বরূপে পুনমিলিত হন—ইহাই জগতের রহস্য।
“তুমিই পুরুষ, তুমিই স্ত্রী, তুমিই যৌবনগর্বে ভ্রমণশীল যুবা, তুমিই কুমারী,তুমিই বৃদ্ধ-দণ্ড ধরিয়া কোনরূপে চলিতেছ, তুমিই সকল বস্তুতে হে প্রভু, তুমিই সব-কিছু”–জগৎপ্রপঞ্চের এই ব্যাখ্যাতেই কেবল মানবযুক্তি মানববুদ্ধি পরিতৃপ্ত হয়। এক কথায় বলিতে গেলে, আমরা তাঁহা হইতেই জন্মগ্রহণ কবি, তাঁহাতেই জীবিত এবং তাঁহাতেই আবার প্রত্যাবর্তন করি ।”
উদ্বোধন কার্যালয় কলকাতা কর্তৃক প্রকাশিত “বেদান্ত কি ও কেন” পুস্তক হইতে সংগৃহীত ।