এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ ডিসেম্বর : জয়নগরে কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ের দোষীসাব্যস্ত মুস্তাকিন সর্দারকে ফাঁসির সাজা দিয়েছে বারুইপুর পকসো আদালত। তিনটি ধারায় মুস্তাকিনকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হল। বাকি একটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । ঘটনার ৬১ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ‘ইতিহাসে নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন । এদিকে সাজা ঘোষণায় এত দ্রুততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তাঁর প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী ‘ক্রেডিট নিতে এত আগ্রহী কেন?’ কামদুনি মামলার আসামিদের মতোই জয়নগরের আসামিকে ফাঁসি দেওয়া হয় নাকি খালাস দেওয়া হয় তা দেখার জন্য অন্তত ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি ।
প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল জয়নগরের ওই কিশোরী । মেয়েটি রাত পর্যন্ত বাড়ি না-ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন । তারপর ওই নাবালিকার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় । মেয়েটিকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে পরিবার । ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে আসে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সত্যতা । এই ঘটনায় পুলিশ মুস্তাকিন সর্দারকে গ্রেফতার করে । তারপর মাত্র ৬২ দিনের মাথায় বিচারপর্ব সম্পন্ন করে তার ফাঁসির সাজা শোনানো হয় । বৃহস্পতিবার জয়নগরের ঘটনায় বারুইপুর আদালত সাজা ঘোষণার পর ‘ইতিহাসে নজিরবিহীন’ আখ্যা দিয়ে রাজ্য পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেন মমতা ব্যানার্জি । তিনি এক্স-এ লিখেছিলেন,’৪.১০.২০২৪ তারিখে জয়নগরে একটি নাবালিকা মেয়েকে নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িত মামলার অভিযুক্তকে আজ বারুইপুরের পকসো আদালত এই নৃশংস ঘটনার মাত্র ৬২ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে৷ মাত্র দুই মাসের মধ্যে এমন একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া রাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই অসামান্য কৃতিত্বের জন্য আমি রাজ্য পুলিশ এবং প্রসিকিউশন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সকলকে অভিনন্দন জানাই। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতি সরকারের শূন্য সহনশীলতা রয়েছে এবং ন্যায়বিচার যাতে বিলম্বিত বা অস্বীকৃত না হয় তা নিশ্চিত করতে থাকবে।’
এরপর মুখ্যমন্ত্রীর ওই পোস্টটি ট্যাগ করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’আমি জয়নগর ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়কে স্বাগত জানাই, আমি আশা করি যে রাজ্যে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অন্যান্য জঘন্য অপরাধ মোকাবেলা করার সময় এই ব্যতিক্রমটি নিয়ম হয়ে যাবে । যাইহোক ম্যাডাম সিএম, আপনি এত তাড়াতাড়ি ক্রেডিট নিতে এত আগ্রহী কেন? কামদুনি মামলার আসামিদের মতোই আসামিকে ফাঁসি দেওয়া হয় নাকি খালাস দেওয়া হয় তা দেখার জন্য অন্তত ১০ বছর অপেক্ষা করা যাক। কামদুনির এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায়, বিজ্ঞ বিচারক ছয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন; সাইফুল আলী, আমিন আলী ও আনসার আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং এসকে এমামুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম ওরফে ভুট্টো এবং ভোলা নস্করের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। পরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তার পা টেনে আনতে শুরু করে এবং হাইকোর্টে মামলার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ঘটায়। হাইকোর্টে নিম্ন আদালতের রায়ের পক্ষে ১৪ টি রাজ্য প্যানেল অ্যাডভোকেটরা প্রতিনিধিত্ব করতে অস্বীকার করেছিলেন বা পরিবর্তন করা হয়েছিল। মাননীয় হাইকোর্টের বিচারপতিরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে রাষ্ট্র যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের বাইরে অপরাধের আগে ষড়যন্ত্র প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং আরও উল্লেখ করেছেন যে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্বাসনের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করার জন্য প্রমাণের নেতৃত্ব দেয়নি। শেষ পর্যন্ত, মাননীয় কলকাতা হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডের দুই আসামির সাজা কমিয়েছে, একজন খালাস করেছে। একই রায়ে, আরও তিনজনকে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হলেও শুধুমাত্র প্রমাণ গোপন করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ।’
শেষে তিনি লিখেছেন,’এই লোকেরা জেলের বাইরে রয়েছে এবং টিএমসি পার্টির কর্মী হিসাবে তাদের পরিচয়পত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, যখন পুলিশ তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। আমি সন্দিহান যে এই মামলাটিও কামদুনি পথে যেতে পারে। দোষী বেকসুর খালাস হতে পারে। তাই অসময়ে ক্রেডিট নেওয়ার আগে আসুন অপেক্ষা করি ।’।