প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ ফেব্রুয়ারি : বিডিও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর টাকা নিয়ে দুর্নীতি করছে। কেন্দ্রের পরিদর্শক দলের গড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। মঙ্গলবার বিকালে এমনই ঘটনা ঘটলো পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে । যা নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক । সব অভিযোগ যদিও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন জামালপুর ব্লকের বিডিও ।
কেন্দ্রীর দেওয়া অর্থে পঞ্চায়েত এলাকায় উন্নয়ন কাজ কতটা সার্থক ভাবে হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে এদিন জামালপুর ব্লকে আসেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।সেই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা চকদিঘী পঞ্চায়েত এলাকায় হওয়া কাজ দেখে বিকালে আসছিলেন জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে ।আগে থেকেই পঞ্চায়েত অফিসের কাছাকাছি জড়ো হয়ে ছিলেন বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রায় শতাধীক মহিলা। প্রতিনিধি দলকে তখন গাড়িতে চড়ে জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে দিকে আসছিলেন। ওই সময়ে মেমারি-তারকেশ্বর রোডে নতুনগ্রামে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে যায় কেন্দ্রের পরিদর্শক দলের গাড়ি। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠলে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বিক্ষোভ সামাল দেন
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর টাকা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে ঢুকছে না। উল্টে বিডিওর সঙ্গে যোগসাজস করে খোলা হয়েছে অন্য অ্যাকাউন্ট। সেখানেই মোটা অঙ্কের টাকা ঢুকছে। সেই টাকা আবার উঠেও যাচ্ছে।এমন ছলচাতুরির জন্য ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা স্বনির্ভর হতে পারছেন না। বিক্ষোভকারীরা বিডিওর আরো নানা বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেন। তাঁদের অভিযোগ,বিডিওর মদতে জামালপুর ব্লকের সমবায়গুলি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এই ব্লকে গাছ কাটা নিয়ে যেমন দুর্নীতি হচ্ছে,তেমনি হাঁস-মুরগি বিলি নিয়েও দুর্নীতি করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা পূর্ণিমা ঘোষ, উমা দাস সহ কয়েকজন দু,দফায় জামালপুর থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন,স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্ট গুলি বন্ধ করে সমস্ত লেনদেন যাচাই করা হোক। এমনকি সমবায় বন্ধ রেখে তদন্তের দাবিও তাঁরা জানিয়েছেন । সমবারের নথি চুরির অভিযোগও মহকুমা শাসক (বর্ধমান দক্ষিণ)-র কাছে জানিয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।
ব্লকের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী মিরাতাজ শেখ এদিনের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, জামালপুর ব্লকে সমবায়গুলিতে ‘নকল বোর্ড তৈরি করে বিডিও তছরুপ করছে।
গোষ্ঠী গুলির স্বার্থ দেখা হয় না। এই কাজে তাঁকে মদতদাতাও কয়েকজন রয়েছে। মিরাতাজ বলেন,
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কাছে এইসব দুর্নীতির কথা তুলে ধরতেই এদিন তাঁরা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধির গাড়ির সামনে জড়ো হয়ে ছিলেন। কেন্দ্রীর প্রতিনিধির প্রতি তাঁরা কোন বিদ্বেষ পোষণ করেন নি বলে মিরাতাজ শেখ দাবি করেছে।
যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার সঙ্গে তিনি কোনও ভাবেই যুক্ত নন।বিডির কথায়,’বৃক্ষ পাট্টার চুক্তি হয় পঞ্চায়েত আর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মধ্যে। গাছ বিক্রির টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে ঢোকে। তেমনি হাঁস-মুরগি বিলি করে প্রাণীবিকাশ দফতর, তারাই উপভোক্তাও ঠিক করে। আর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্ট পাল্টানো বা বদলানোর ক্ষমতা কারুরইর নেই। টাকা সরাসরি জেলা থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে ঢোকে।বিডিওর স্পষ্ট দাবি, তাঁর বদনাম করতেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এইসব মিথ্যা অবিযোগ তোলা হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে,কেন্দ্রীয় দলটি এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ প্রথম জামালপুরের চকদিঘি পঞ্চায়েতে যায়। সেখান থেকে রক্মীণী-মহুলা এলাকার একটি প্রদানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা পরিদর্শন করেন। তারপরে পঞ্চায়েতের ভিতর ঢুকে প্রায় সাড়ে তিনটে পর্যন্ত ১০০ দিনের কাজ, আবাস প্রকল্প-সহ নানা প্রকল্পের নথি খতিয়ে দেখেন। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় দলটি দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি দল চলে যায় জামালপুর ২ পঞ্চায়েতে। আরেকটি দল চকদিঘি পঞ্চায়েতের ১০০ দিন প্রকল্পের বেশ কয়েকটি কাজ দেখেন বলে জানা যায়।সর্বত্র সরকারী প্রকল্পের কাজের বোর্ডগুলি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা খুঁটিয়ে দেখেন।এছাড়াও জামালপুর ২ পঞ্চায়েত অধীন কাঠুরিয়াাপাড়া গ্রামের উপভোক্তা শংকর মাঝির প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা টাকা হাতিয়ে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের যে পার্টি অফিস তৈরি হয়েছে সেটিও দেখতে যান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ।।