এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ এপ্রিল : মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের জাফরাবাদে খুন হওয়া বাবা হরগোবিন্দ দাস ও ছেলে চন্দন দাসের পরিবারকে জোর করে তুলে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির করানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে । পরিবারটি কলকাতার সল্টলেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৷ কিন্তু আজ রবিবার সকালে কলকাতা পুলিশ দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে এবং তাদের রীতিমতো অত্যাচার করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ । কিন্তু সজল ঘোষ, তরুনজ্যোতি তিওয়ারি, শঙ্কুদেব পন্ডা, প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালসহ বেশ কয়েকজন বিজেপির নেতানেত্রী সেখানে ছুটে আসেন এবং পুলিশকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় । শেষ পর্যন্ত পুলিশ পিছু হঠতে বাধ্য হয় । এদিকে এই ঘটনার পর বিধাননগর(পূর্ব) থানার আইসি শঙ্কর নারায়ণ সাহার পাশাপাশি রাকেশ রায়, বাবলু দাস, মানিক মন্ডল, কৌশিক ঘোষ এবং চৈতন্য দাস নামে পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত বাবা হরগোবিন্দ দাসে স্ত্রী পারুল দাস ও ছেলে নিহত চন্দন দাসের স্ত্রী পিঙ্কি দাস । পাশাপাশি তারা নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন ।
তাদের হাতেলেখা চারপাতার অভিযোগ পত্রটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পাশাপাশি তিনি অন্য একটি পোস্টে পুলিশের দ্বারা ভাঙচুর করা কপাট ও উত্তেজনার মুহুর্তের ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি । তবে নিহতদের পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তা খুবই ভয়ংকর । তারা লিখেছেন,ঘটনা ঘটে ০৪.০৫.২০২৫ তারিখ সকাল ১০টা নাগাদ, যখন বিধাননগর (পূর্ব) থানার একটি বড় সংখ্যক পুরুষ পুলিশ সদস্য আমাদের অবস্থানস্থল বি.জি- ৫৬ সল্টলেক সেক্টর-২ কলকাতা- ৭০০০৯১-এ হানা দেয়। তারা জোর করে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে আমাদের মেরে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কোন ও মহিলা কনস্টেবল উপস্থিত ছিলেন না, যা সম্পূর্ণভাবে আইন ও আমাদের মর্যাদার পরিপন্থী।
এই অভিয়ান পরিচালনার অজুহাত হিসেবে বলা হয় যে হরগোবিন্দ দাস-এর ছেলে সমর্থ দাস একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু এই অভিযোগের কোন ও কপি আমাদের দেখানো হয়নি এবং এখন আমাদের দৃঢ়ভাবে মনে হচ্ছে যে সমর্থ দাস-কে পুলিশই অপহরণ করে এই অভিযোগে স্বাক্ষর করিয়েছে। গত দুই ধরে সে যোগাযোগহীন অবস্থায় ছিল এবং আমারা এখনও তার সাথে যোগাযোগ করতে করতে পারছি না । এনিয়ে আমরা চরমভাবে উদ্ভিন্ন আমরা বিশ্বাস করি তাকে জোর করে বা ভয় দেখিয়ে ওই অভিযোগে স্বাক্ষর করানো হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে মুর্শিদাবাদে দায়ের হওয়া তথাকথিত মামলার তদন্তকারী অফিসার (আইও) প্রথমে উপস্থিতই ছিলেন না। শুধুমাত্র বিধাননগর (পূর্ব) থানার অফিসাররা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমাদের প্রবল প্রতিবাদের পর আইসি শংকর নারায়ণ সাহা তদন্তকারী অক্ষিসারকে ডাকেন যিনি সাধারণ পোশাকে ঘটনাস্থলে আসেন তাঁর সঙ্গে কোন ও ইউনিফর্ম পরিহিত মহিলা কনস্টেবল ও ছিলেন না। অনেক পরে বিধাননগর থানার এক মহিলা কনস্টেবল উপস্থিত হন তখন আমরা একটি লিখিত বিবৃতি দিই- যেখানে আমারা ‘স্পষ্টভাবে জানাই যে আমরা নিজ ইচ্ছায় কলকাত্মায় এসেছি এবং কোনও জোর জবরদস্তি আমাদের উপর ছিল না।
আমরা সহযোগিতা সত্ত্বেও তদন্তকারী অফিসার আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে মান, যদিও আমাদের আইনজীবী এসে পড়ায় সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই ঘটনার ফলে আমরা চরম ভাবে আতঙ্কিত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত । যাঁরা এই হয়রানিমূলক অভিমানে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: শংকর নারায়ন সাহা (আইসি) রাকেশ রায় বাবলু দাস, মানিক মন্ডল, কৌশিক ঘোম এবং চৈতন্য দাস৷ যারা সকলেই তাদের পদমর্যাদার অপব্যবহার করে আমাদের হেনস্থা ও ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন ।আমরা সেই রাজনৈতিক নাটকের অংশ হতে চাই না, যা পরিচালিত হচ্ছে সেই প্রশাসনের দ্বারা যারা আমাদের স্বামীদের বাঁচাতে সম্পূর্ণরূতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৫ সালের ৫ই যে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর যে জনসভা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সেখানে আমাদের উপস্থিতির কোনও ইচ্ছা নেই- যেখানে আমাদের স্বামীদের নির্মম হত্যার সত্যতাকে মিথ্যা শান্তির গল্পে চাপা দেওয়া হবে।
অত এব আমরা অত্যন্ত বিনীতভাবে ও জরুরি ভিত্তিতে দাবি জানাচ্ছি: আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হোক৷ কলকাতা হাইকোর্টে আমাদের আবেদনপত্র দাখিলের জন্য নিরাপদ মাতায়াতের ব্যবস্থা করা হোক ।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দ্বারা সংঘটিত এই হয়রানি ও বেআইনি আচরনের স্বাধীন তদন্ত করা হোক । আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি: আমরা এই রাজ্য সরকারের কাজ থেকে কোন ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ চাই না বা গ্রহন করব না। আমরা আর্থিক সহায়তা চাই না – আমরা ন্যায়বিচার দবি করছি। আমাদের স্বামীদের মৃত্যু কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘটেনি-এটা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সরকারি অবহেলার ফল। এই ধরনের ক্ষতির কোনও আর্থিক মূল্য নেই এবং আমরা আমাদের স্বামীদের স্মৃতিকে কোনও রাজনৈতিক ভন্ডামির মাধ্যমে কলঙ্কিত হতে দেব না। অনুগ্রহ করে আমাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হতে দেবেন না।
আমাদের সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করুন এক আমাদের স্বামীদের মৃত্যুকে রাজনৈতিক সুবিধার তলে চাপা পড়তে দেবেন না। গভীর বেদনা ও মরিয়া আশায়,আমরা এই অভিযোগ আপনার কাছে জানাইতিছি যথাযথ বিচাবের আসায় এবং আমরা যা কিছু অভিযোগ লিখিছি তা সজ্ঞানে কোন চাপের কারনে বা ভয়ে নয় । আমাদের আত্ম রক্ষার জন্য লিখছি ।।