প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ ডিসেম্বর : এক ঝলক দেখলে মনে হবে কোন রাজপ্রাসাদ। কিন্তু মস্ত দুটি বাড়ির একটিরও মালিক কোন রাজা বাদশা নন। তবুও ওই রাজপ্রাসাদ তুল্য বাড়ি দুটির চার সদস্যের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়’ রয়েছে! তাঁদের মধ্যে একজন আবার পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান জাহাঙ্গীর শেখের স্ত্রী। এঁনারা প্রত্যেকেই খণ্ডঘোষের কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছে খণ্ডঘোষের রাজনৈতিক মহলে । প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার গরিব পরিবারের সদস্যরাও ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ির জন্য খণ্ডঘোষ ব্লকের একটি তালিকা প্রকাশ্যে এসেছে। সেই তালিকায়
৭৩১ নম্বরে রয়েছে উপপ্রধান জাহাঙ্গীর শেখের
স্ত্রী সীমা শেখের নাম।এছাড়াও তালিকার ৭৩৪ ও ৫৪৩ নম্বরে রয়েছ উপপ্রধানের দুই ভাই আলমনগির ও আজমগিরের নাম।এমনকি উপপ্রধানের সদ্য প্রয়াত বাবা শেখ মহসিনের নামও আছে ওই তালিকার ৭০০ নম্বরে।তালিকা দেখে শাঁকারি অঞ্চলের অনেকেরই চোখ কপালে ওঠা অবস্থা তৈরি হয়েছে ।
এদিকে তালিকার থাকা ‘যোগ্য’রা যাতে বাড়ি পান তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। সেই ব্যবস্থার প্রথম ধাপে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি, সিভিক ভলেন্টিয়ারদের নিয়ে গঠিত দল কয়েকদিন আগে কেশবপুরে সমীক্ষা করতে যায়।তখনই উপপ্রধানের অট্টালিকা ও বিষয়আশয় তাঁদের নজরে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ব্লক প্রশাসনের দফতরেও রিপোর্ট করেছেন।
যদিও কেশবপুরের বাসিন্দাদের কেউ কেউ উপপ্রধানদের পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য পূর্বে উপপ্রধান ও তার পরিবারের কারুরই আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না।জাহাঙ্গীর শেখ। ২০১৮ সালে উপপ্রধান হওয়ার পর থেকে পেশায় চাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের আর্থিক অবস্থা পাল্টাতে শুরু করে। আর ওই বছরেই ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র জন্য সমীক্ষা করে প্রশাসন।তখনই উপপ্রধানের স্ত্রী-সহ চারজনের নাম উপভোক্তাদের তালিকায় তোলা হয়।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) কাজল রায় জানিয়েছেন, “ত্রুটিমুক্ত তালিকাই তৈরি করা হবে।যোগ্য উপভোক্তাদের নামই তালিকায় থাকবে“। আর খণ্ডঘোষের বিডিও সত্যজিৎ কুমার বলেন, “রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ওইসব নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। উপপ্রধান জাহাঙ্গীর শেখ এদিন দাবি করেন,আগে তাঁরা চালাঘরে থাকতেন। তখনকার ওই অবস্থা দেখে প্রশাসনের কর্তারা সম্ভবত সরকারি অনুদানে বাড়ি পাওয়ার জন্য তাঁদের পরিবারের কয়েকজনের নাম প্রকল্পে নাম তুলে দিয়েছিল। বিষয়টি নজরে আসার পরেই তিনি বিডিওকে ফোন করে নাম বাদ দিতে বলেছেন।কিন্তু একই পরিবারের চারজনের নাম উপভোক্তা তালিকায় কী ভাবে নাম উঠল? এই বিষয়ে উপপ্রধানের সাফাই,এটা তাঁর ধারণার বাইরে!যদিও পঞ্চায়েতের প্রধান শিউলি খাঁয়ের দাবি, “কি করে কি হয়েছে তার সবকিছু সবাইয় জানেন। এ নিয়ে দলকে যা বলার বলেছি।’
বিজেপির খণ্ডঘোষের পর্যবেক্ষক খোকন সেন কটাক্ষ করে বলেন,’অতবড় অট্টালিকা বানানোর পরেও এক লক্ষ ২০ হাজার টাকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়ার তালিকায় নাম উঠেছে। তৃণমূলের নেতাদের লোভ এখন সীমা ছাড়িয়েছে ।’ খণ্ডঘোষ নিবাসী সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ কটাক্ষ করে বলেন,’উপপ্রধানের অট্টালিকার একটা থামের খরচ আবাস প্রকল্পের টাকার সমান। গরিব মানুষকে বঞ্চিত করে সেই টাকা হাতাতেও তৃণমূল নেতারা কুন্ঠাবোধ করছেন না ।’ তৃণমূলের খণ্ডঘোষ ব্লকের সভাপতি অপার্থিব ইসলামের দাবি,’সাত-আট বছর আগেকার তালিকায় থাকা উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির জন্য কেন্দ্র এত দিনে অনুমোদন দিয়েছে।এতদিন গরিব মানুষদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। আমাদের সরকারের আমলে তখনকার তালিকায় নাম থাকাদের অনেকেরই আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সেটা দেখতেই এখন সমীক্ষা চলছে। এরজন্য আগের তালিকা পক্ষপাতদুষ্ট ছিল,এমনটা মানতে চান নি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি।’।