প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৬ ডিসেম্বর : কেরালায় পাঠানোর জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলার মাধবডিহি থানার বুলচন্দ্রপুর এলাকার একটি রাইসমিল থেকে ২৫ টন গোবিন্দ ভোগ চাল বোঝাই করে ট্রাক নিয়ে রওনা হয়েছিল চালক ও খালাসি । ট্রাকটি ছিল রায়নার পলেমপুরের একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির । কিন্তু ট্রাকের নম্বরটিই ভুয়ো এবং এমনকি ট্রাকটির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যও জাল । বিষয়টি রাইসমিল কর্তৃপক্ষ প্রথমে টের পাননি । কিন্তু গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ট্রাকটি রওনা হওয়ার পর তার আর কোনো হদিশ করতে না পেরে রাইস মিল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন যে তাদের ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যের গোবিন্দ ভোগ চাল লুট হয়ে গেছে । এরপর তিনি মাধবডিহি থানার দ্বারস্থ হন । যদিও কর্তৃপক্ষের অভিযোগ দায়েরের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি চুরি যাওয়া চাল এবং ট্রাকট উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা হল মিলন দাস ও তাপস শর্মা৷ তাদের মধ্যে প্রথমজন ট্রাকটির চালক এবং দ্বিতীয়জন ট্রাকের খালাসি । মিলনকে নদীয়া জেলার চাকদহ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় । তাপসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কৃষ্ণনগর থেকে । তাদের দু’জনকে জেরা করে হুগলীর বলাগড় থেকে ওই ট্রাকটি এবং চুরি যাওয়া ৪০০ বস্তা গোবিন্দ ভোগ চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ । সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ দুই ধৃতকে আজ শুক্রবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) অভিষেক মণ্ডল জানিয়েছেন,চুরি যাওয়া বাকি চাল উদ্ধার এবং চুরি চক্রে জড়িত বাকিদের হদিশ পেতে ধৃত তাপস শর্মাকে পুলিশ হেপাজতে নেওয়া হয়েছে। ধৃক ট্রাক চালককে টিআই প্যারেডের জন্য এদিন আদালতে আবেদন জানানো হয় বলেও তিনি জানান।
রাইস মিল কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান যে কেরালার এক চাল ব্যবসায়ী তাদের কাছে ২৫ টন গোবিন্দ ভোগ চাল সরবরাহ করার বায়না করেছিল । সেই মোতাবেক গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রায়নার পলেমপুরের একটি ট্রান্সপোর্ট সংস্থা মারফত ২৫ টন গোবিন্দ ভোগ চাল ট্রাকটিতে লোড করা হয়েছিল। ট্রাকটির নম্বর ছিল WB15B 6597। কিন্তু ২২ ডিসেম্বর থেকে ওই ট্রাকটির লরির চালক, মালিক বা কারোর সাথেই যোগাযোগ করা যায়নি । যেকারণে তাদের সন্দেহ হয় । এরপর তারা ট্রাকটির নম্বর খতিয়ে দেখে জানতে পারেন যে ট্রাকের
নম্বরটিই ভুয়ো।এমনকি ট্রাকটির মালিকানা সংক্রান্ত নথিপত্রও জাল। বিভিন্ন ভাবে খোঁজ খবর চালিয়ে রাইস মিল কর্তৃপক্ষ আরও জানতে পারেন যে ওই নম্বরের আসল ট্রাকের মালিক হুগলি জেলায় অবস্থান করছেন । রাইসমিল কর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ট্রান্সপোর্ট মালিক এটিকে “বড় ভুল” বলে স্বীকার করে নেয় ।
জানা গেছে,রাইসমিলের তরফে অভিযোগ দায়ের হতেই মাধবডিহি থানার ওসি-র নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল ঘটনার তদন্তে নামে । ইতিমধ্যেই রাইসমিল কর্তৃপক্ষ যে সমস্ত তথ্য দিয়েছিল, আর ভিত্তিতে তদন্তে নেমে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে । পাশাপাশি চুরি যাওয়া চাল এবং ট্রাকট উদ্ধার করতে সক্ষম হয় । এই ঘটনায় ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির কোনো ভূমিকা আছে কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।।

