এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৬ মে : একদিকে শিক্ষক নিয়োগ দূর্নীতি, গরু পাচার মামলা নিয়ে যখন জেরবার রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস, ঠিক তখনই পূর্ব বর্ধমান জেলার দাঁইহাট পুরসভায় দূর্নীতি নিয়ে সরব হলেন খোদ পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার অসীম রায় । শুধু তাইই নয়, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে সোমবার তিনি দীর্ঘ তিনপাতার ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারির কাছে । ইস্তফাপত্রের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও পুরচেয়ারম্যানের কাছেও । তাঁর অভিযোগ,বিভিন্ন বিল যথাযথ ভাবে খতিয়ে না দেখেই পাশ করে দেন পুরসভার ফিনান্স অফিসার হাবিবুর রহমান । তাকে এনিয়ে একাধিকবার সতর্কও করেছেন তিনি । গত বছর ডিসেম্বর মাসে পুরবোর্ডে দূর্নীতির বিষয়গুলি পুর চেয়ারম্যান প্রদীপ রায়ের সামনে উত্থাপনও করেছিলেন । কিন্তু চেয়ারম্যানও এই সমস্ত বেআইনি কর্মকাণ্ডে প্রচ্ছন্ন মদত দিচ্ছেন বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন অসীমবাবু । যদিও দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান প্রদীপ রায় ও পুরসভার ফিনান্স অফিসার হাবিবুর রহমান । দাঁইহাট পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসারের দূর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে কাটোয়া মহকুমাশাসক অর্চনা পি ওয়াংখেড়ে বলেন,’এখনো আমি ইস্তফাপত্র হাতে পাইনি । তাই বিষয়টি নিয়ে এই মুহুর্তে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।’
জানা যায়,হুগলি জেলার নৈহাটি এলাকার বাসিন্দা অসীম রায় ২০১৯ সালে দাঁইহাট পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে যোগ দিয়েছিলেন । তার ইস্তফা দেওয়ার খবর আজ মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গেছে গোটা এলাকায় । তার অভিযোগ মূলত পুরসভার ফিনান্স অফিসার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে । ইস্তফাপত্রে অসীমবাবু ট্যুর বিলের ক্ষেত্রে ভ্রমণের টিকিট সংযুক্ত না করা, ট্যুর বিলে জাল সি পেশ করা, এছাড়া কন্টিজেন্সি খাতের বেশকিছু টাকার গরমিলের অভিযোগ তুলেছেন পুরসভার ফিনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে । এমন কি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার মত গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তিনি ।
অসীমবাবু বলেন,’একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে সরকারি নিয়ম মেনে চলা আমার কর্তব্য,আমি তা মেনেও চলি । কিন্তু বিগত কয়েকমাস ধরেই অফিস চালাতে গিয়ে আমায় বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে । হাবিবুর রহমান কর্মচারীদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী তৈরি করে দিনের পর দিন ধরে বিভিন্ন অনুচিত কাজকর্ম করে আসছেন । আমি বহুবার সতর্ক করেছি তাকে । উলটে তিনি ঘোঁট পাকিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছেন । পুরসভার মধ্যে সম্প্রীতির ক্ষেত্রে ও সুস্থ কর্মসংস্কৃতির পরিবেশকে নষ্ট করে দিয়েছেন উনি ।’
তার আরও অভিযোগ,’গতবছর ডিসেম্বর মাসে পুরবোর্ডের মিটিংয়ের সময় সমগ্র বিষয়টি আমি চেয়ারম্যানের সামনে উত্থাপন করেছিলাম । তথ্যসহ বেআইনি বিষয়গুলি ধরিয়েও দিয়েছিলাম । কিন্তু চেয়ারম্যানের প্রচ্ছন্ন মদতে সেগুলি ধামাচাপা পড়ে যায় । এই পরিস্থিতির সঙ্গে আপোষ করে চলা আমার পক্ষে সম্ভব নয় । তাই আমার ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি ।’
যদিও পুরসভায় দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান প্রদীপ রায় ও ফিনান্স অফিসার হাবিবুর রহমান । চেয়ারম্যানের কথায়, ‘পুরসভায় কোনও অনিয়ম হয়না,সরকারি আইন মেনেই সব কাজকর্ম চলে । আর যদি কোনও বিষয়ে কিছু অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসাবে অসীমবাবুকেও তার দায় নিতে হবে ।’।