প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ জুলাই : ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে খোঁজ খবর নিতে এই রাজ্য চষে বেড়াচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল।সোমবার কমিশনের প্রতিনিধিদল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে আসেন। বিমলজিত উপ্পল ও আই আর কুরিলসের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতিনিধি দল এদিন প্রথম বর্ধমান সার্কিট হাউসে পৌছান । সেখানে এক প্রস্থ বৈঠক সেরে তারা বিকালের দিকে সোজা পৌছে যান জেলার জামালপুর থানার নবগ্রামে । পরে সন্ধ্যায় তাঁরা রায়নার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ।
ভোটের ফল প্রকাশের পর দিন অর্থাৎ গত ৩ মে নবগ্রামেই রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়ে ছিলেন দুই তৃণমূল কর্মী শাজাহান শা (৩০)ও বিভাস বাগ (২৭) এবং এক বিজেপি কার্যকর্তার মা কাকলি ক্ষেত্রপাল (৪৭)। একই দিনে নিহত হন রায়না থানার সমসপুর নিবাসী তৃণমূল সমর্থক গনেশ মালিক (৬০)।নবগ্রাম উড়িষ্যা পাড়ায় বিভাস বাগের বাড়ি। আর কাকলি ক্ষেত্রপালের বাড়ি পাশের পাড়া ষষ্ঠিতলায় ।অপর নিহত সাজু শেখের বাড়ি জামালপুরের ভেড়িলি গ্রামে । নবগ্রামে রাজনৈতিক হিংসায় ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিল ১২ জন । তারা সকলেই এখন জামিনে মুক্ত ।
রায়নার সমসপুরের গনেশ মালিক কে হত্যার ঘটনাতেও ৮ জন গ্রেপ্তার হন । দো-ভাষী কে সঙ্গে নিয়ে কড়া পুলিশ পাহাায় কমিশনের প্রতিনিধিরা এদিন জামালপুরের তিন নিহতদের বাড়িতে পৌছান। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল গত ৩ মে নবগ্রামে নিহত হওয়া তিন জনের বাড়িতে গিয়ে নিহতদের পরিবার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।পাশাপাশি ওইদিন নবগ্রামে কি ঘটনা ঘটেছিল তার সবিস্তার তথ্যও তাঁরা সংগ্রহ করেন।এরপ পর কমিশনের প্রতিনিধিরা রায়নার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
নিহত বিভাষ বাগের স্ত্রী ঝর্ণা বাগ বলেন , সেদিন কি ঘটনা ঘটেছিল তা কমিশনের প্রতিনিধার তাঁর কাছে জানতে চান । বিভাষ বাগ কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাও জানতে যায় ।সরকারী কোনও সাহায্য পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে ঝর্ণাদেবী কমিশণের প্রতিনিদিধের বলেন তিনি ৪ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন । একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি কমিশনের প্রতিনিধিদের কাছে রাখেন ঝর্ণাদেবী । তবে চাকরির বিষয়টি নিয়ে আশ্বাস কিছু মেলেনি বলে ঝর্ণাদেবী মন্তব্য করেন । একই ভাবে কাকলি ক্ষেত্রপাল ও শাজাহন শাহের বাড়িতে গিয়েও পরিবার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সেদিনের ঘটনার কমিশনের প্রতিনিধিরা তথ্য সংগ্রহ করেন । জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই অতি সক্রিয়তা নিয়েই পূর্ব বর্ধমান জেলায় তুঙ্গে উঠেছে তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক তর্জা ।
রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা আসানসোল দক্ষিনের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল
রবিবার কালনায় দলের কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে
জাতীয় মানবাধীকার কমিশন ’ইশুকে’ সামনে
এনে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়ান ।
তৃণমূল কংগ্রেস, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন ,“ভোটের ফল প্রকাশের পর বর্ধমান সহ রাজ্য জুড়ে আক্রান্ত হচ্ছে বিজেপি কর্মীরা মহামান্য আদালত নির্দেশ দেওয়ার পর এখন পুলিশ ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের বাড়ি পৌছে দিচ্ছে ।অগ্নিমিত্রা দাবি করেন ,নির্যাতনের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে আসা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের টিমও এই রাজ্যে ছাড়া পাচ্ছে না । এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মানেন না , মানবাধিকার কমিশনকেও মানেন না“। এখন আদালতকেও মানছেন না বলে অগ্নিমিত্রা পল কটাক্ষ করেন ।
বিজেপি নেত্রীর এহেন মন্তব্যের কঠোর বিরোধীতা করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব । তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র তথা পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু এই প্রসঙ্গে বলেন , ‘বিধানসভা ভোটে পরজয়টা বিজেপির নেতা নেত্রীরা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না । সেইজন্যে ওরা এখন নানা ভাবে রাজ্য সরকারের বদনাম করার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে । তাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন , তপশিলি কমিশন এদের এই রাজ্যে পাঠাচ্ছে ।’ দেবু টুডু দাবি করেন, এরা কোন সরকারের নিরপেক্ষ কোন এজেন্সি নয় ।এরা রাজনৈতিক দল বিজেপির এজেন্সি মাত্র । জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন ,তপশিলি কমিশন শুধু বিজেপির দালালি করছে ।ওরা শুধু বিজেপির নেতা কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলে চলে যাচ্ছে । প্রশাসনিক কোনও লেবেলের সঙ্গে কথা বলছে না , সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কথা বলছে না । বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সিটিং করে শুধু কাজ করছে ।’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন , মহিলা কমিশন , তপশিলি কমিশন এ সবই বিজেপির শাখা সংগঠন বলে দেবু টুডু দাবি করেন । একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, ‘ওদের কথা কে শুনবে !’
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র দেবু টুডুর এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে কশুর করেনি জেলা বিজেপি নেতৃত্ব । বিজেপির পূর্ব বর্ধমান কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ বলেন ,’দেবু টুডুর বক্তব্য থেকেই পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস আসলে
দেশের সাংবিধানিক কোন ব্যবস্থাকেই মানে না । অগ্নিমিত্রা পল ঠিকই বলেছেন, এই রাজ্যে
স্বৈরাচারী , অত্যাচারী সরকার চলছে“ । অন্য দিকে জেলা বিজেপির সহ- সভাপতি প্রবাল রায় বলেন , ‘আজকে যিনি মুখ্যমন্ত্রী তিনি ও তাঁর দলের অন্য রাজ্য নেতারা সিপিএমের রাজত্ব কালে কথায় কথায় ৩৫৬ ধারা , মানবাধিকার কমিশন চাই ইত্যাদি ইত্যাদি বলতেন । এখন জাতীয় মানবাধিকার কমিন তৃণমূলের নেতা, হার্মাদ ও জেহাদিদের আসল চরিত্র গুলি বুঝে আদালতকে জানাচ্ছে । এটাই তৃণমূলের বড্ড খারাপ লাগছে । দেবু টুভু ভারতের সংবিধানকে কতটা মান্যতা দেবেন সেটা ওনার জানা দরকার ।’ প্রবাল রায় কটাক্ষ করে বলেন , ‘মমতা দিদি পশ্চিমবঙ্গে বৃহত্তর বাংলাদেশ গঠনের জন্য যে আলাদা সংবিধান তৈরি করছেন সেটা পড়ে দেবু টুডু এইসব কথা বলছেন, নাকি ভারতের সংবিধান পড়ে এইসব বলছেন সেটাই এখন জানার বিষয় ।’।