এইদিন বিনোদন ডেস্ক,২৭ অক্টোবর : ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বিতর্কিত বাঙালি কবি শ্রীজাত ব্যানার্জির একটা কবিতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয় । “অভিশাপ” শিরোনামের একটি কবিতার শেষ লাইনে তিনি লেখেন : “যতক্ষণ পর্যন্ত নারীদের কবর খুঁড়ে ধর্ষণ করা হয়, ততক্ষণ ত্রিশূলে কনডম পরা উচিত”। হিন্দু সংহতির পক্ষ থেকে কবির বিরুদ্ধে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ তুলে এফআইআর করা হয় তখন । দ্বিতীয় আরও এক বিতর্কিত কবি ও তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুবোধ সরকার ২০১৫ সালের অক্টোবরে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় গোমাংস খাওয়ার অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে রান্না করা গোমাংস খেয়ে নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমানের চেষ্টা করেন । তাকে মাংস খাইয়ে দেন ও নিজেও খান সিপিএমের বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য । অনুষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ছিল ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’ নামে একটা ভূঁইফোড় সংস্থা ।
এখন শ্রীজাত ব্যানার্জি ও সুবোধ সরকারকে নিয়ে নতুন আরও একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে । সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা “সাহিত্য আকাদেমি” এই দুই বিতর্কিত বাঙালি কবিকে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে হিন্দুদের অনুভূতিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছে বলে অভিযোগ উঠছে । অনুষ্ঠানে “সভামুখ্য” ভূমিকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুবোধ সরকারকে ।
আগামী ২৫শে অক্টোবর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া “অভিব্যক্তি” নামক একটি অনুষ্ঠানের ব্রোশারে অতিথি তালিকায় শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, তালিকায় বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র হিন্দু-বিরোধী ব্যক্তিত্ব ছিলেন না; কবি এবং তৃণমূল নেতা সুবোধ সরকারেরও নাম ছিল। ২০১৫ সালে, সুবোধ সরকার “দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার” প্রতিবাদে একটি গরুর মাংসের পার্টির আয়োজন করেছিলেন।
তবে, ব্যাপক জনসাধারণের প্রতিবাদের পর সাহিত্য আকাদেমি অনুষ্ঠানটি বাতিল করে। হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রকাশ্যে আঘাতকারী ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য লোকেরা সংগঠনটির উদ্দেশ্য নিয়ে কে প্রশ্ন তুলছে । সোশ্যাল মিডিয়ায়, মানুষ হিন্দু-বিরোধী মনোভাব প্রচারের জন্য সাহিত্য আকাদেমির সমালোচনা করেছে। সাহিত্য আকাদেমি বারবার হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত করছে বলে মানুষ হতাশা প্রকাশ করে বলছে, শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মকে নিশানা করে এমন লোকদেরই একটি প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে সাহিত্য আকাদেমি ।
হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করার জন্য সাহিত্য আকাদেমি বিতর্কে জড়ানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছরের নভেম্বরে, সংগঠনটি “ভারতীয় পুরাণ: স্মৃতি, পুনর্লিখন এবং অনুবাদ” শীর্ষক একটি সেমিনারে উদ্বোধনী ভাষণ দেওয়ার জন্য দেবদত্ত পট্টনায়েককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বেশ কয়েকটি টুইটে পট্টনায়েক নারীদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর এবং অমানবিক ভাষা ব্যবহার করার জন্য জনসাধারণের ক্ষোভের পরে সেই অনুষ্ঠানটিও বাতিল করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য,শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় “অভিশাপ” নামে ওই কবিতাটি ২০১৭ সালের মার্চ মাসে তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছিলেন, যেদিন যোগী আদিত্যনাথ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন।শিলিগুড়ি সাইবার ক্রাইম থানায় তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয় । কবিতাটিতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে একটি রোগের সাথেও তুলনা করা হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশ শ্রীজাতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ২৯৫এ (যে কোনও শ্রেণীর ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে ইচ্ছাকৃত বা বিদ্বেষপূর্ণ কাজ) এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারা ৫৭ এর ধারার অধীনে জামিন অযোগ্য অভিযোগ দায়ের করে । ধারা ২৯৫এ অনুসারে, সর্বনিম্ন ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং পরিবর্তনশীল জরিমানা নির্ধারণ করা হয় । যদিও কোনো এক অজ্ঞাত কারনে রেহাই পেয়ে যান ওই বিতর্কিত কবি ।।

