জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জি,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০৬ ডিসেম্বর : শীতকালে নলেন গুড়ের সন্দেশ, খেজুর গুড়ের রসগোল্লা, পাটালি বা নবাত, খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি পায়েস অথবা খেজুর গুড়ে ডুবিয়ে পিঠে কোন বাঙালির না খেতে ভাল লাগে! সাধারণ ভাবে মিষ্টি অপচ্ছন্দের তালিকায় থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের কিশোরীরাও খেজুর গুড় দিয়ে পিঠে বা পায়েস খেতে খুব ভালবাসে। বাঙালির কাছে শীতকাল ও খেজুর গুড় – কার্যত সমার্থক।
শীত পড়তে না পড়তেই অন্যান্যবারের মত এবারও এলাকার মানুষের খেজুর গুড় খাওয়ার ইচ্ছে পূরণ করতে নদীয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে এসে হাজির খেজুর গুড় প্রস্তুতকারক তথা ব্যবসায়ীরা। প্রায় সহস্রাধিক খেজুর গাছ ‘লিজ’ নিয়ে সেগুলি থেকে খেজুর রস সংগ্রহ এবং গুড় ও পাটালি তৈরি করতে শুরুও করে দিয়েছে। ধীরে ধীরে খরিদ্দারদের আগমন শুরু হয়েছে।
বিপত্তি এখানেই! খেজুর গুড়ের স্বাদ ও গন্ধ পেতে গেলে দরকার পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা। দুয়ারে ঠাণ্ডা অপেক্ষা করলেও এখনো সাড়া জাগিয়ে চৌকাঠ অতিক্রম করে ঘরে প্রবেশ করেনি। ফলে সংগৃহীত খেজুর রসের পরিমাণ যেমন কম হচ্ছে তেমনি তার গুণমান কম। উৎপন্ন খেজুর গুড় ও পাটালির মধ্যে চির পরিচিত স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না। তুলনামূলকভাবে খরিদ্দারদের সংখ্যাও কম । ক্ষতির আতঙ্ক গ্রাস করছে খেজুর গুড় উৎপাদকদের। কপালে তাদের চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে।
আউশগ্রামের খেজুর গুড়ের স্বাদে মুগ্ধ হুগলির ডানকুনির দেবকুমার ব্যানার্জ্জী ও তার পরিবার। শীত পড়লেই প্রতি বছর স্বপরিবারে তিনি এখানে আসেন খেজুর গুড় কিনতে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। তার কন্যা দশম শ্রেণির ছাত্রী আদ্রিজা ব্যানার্জ্জী বলে,’আমাদের ওখানে খেজুর গুড় বা পাটালি পাওয়া গেলেও এখানকার নূর চাচার কাছে কেনা গুড়ের স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। তাইতো বাবার সঙ্গে এখানে এসেছি।’ এক প্রশ্নের উত্তরে সে আরও বলে যে মিষ্টি খেতে ভাল না লাগলেও নলেন গুড় দিয়ে তৈরি রসগোল্লা বা পায়েস খেতে আমার খুব ভাল লাগে। লাজুক হাসি উঁকি মারল তার ঠোটের কোণে।
নদীয়া থেকে আগত অন্যতম খেজুর গুড় উৎপাদক নূর হোসেন সেখ বললেন,’আমি এখানে ১৪-১৫ বছর ধরে আসছি। ঠান্ডা সেভাবে না পড়ার জন্য রসের পরিমাণ যেমন কম হচ্ছে তেমনি উৎপন্ন খেজুর গুড়ের মধ্যে সেভাবে স্বাদ পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে খদ্দেরদের সন্তুষ্ট করতে পারছিনা। তার আশা এই সাময়িক বৃষ্টি শেষ হলেই হয়তো আশানুরূপ ঠান্ডা পড়বে। তখন গুড়ের মধ্যে পরিচিত স্বাদ পাওয়া যাবে।’
এখন ঠান্ডা পড়ার অপেক্ষায় যেমন নূররা আছেন তেমনি দেবকুমারবাবুর মত অসংখ্য খাদ্যরসিক বাঙালিরাও অপেক্ষা করছে । কিন্তু একদিকে শীতের সেভাবে আবির্ভাব নেই,তার উপর ঘুর্ণিঝড় ‘মিচাং’ এর আবির্ভাবে চিন্তায় সকলে । তবে সকলের আশা যে ঘুর্ণিঝড় কাটতেই জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়বে,তখন পরিস্থিতির বদল হবে ।।