স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে দেশের ক্ষমতায় টিকে ছিল কংগ্রেস । এটা কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা নাকি এর পিছনে ছিল অন্য সমীকরণ ? বিশেষজ্ঞদের দাবি সংখ্যালঘু মুসলিম,খ্রিস্টান ভোটব্যাঙ্ককে নিশ্চিত করে দেশের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সাথে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল এতদিন ধরে । যেকারণে হিন্দু বহুল রাষ্ট্র হলেও শুধুমাত্র সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের সহায়তায় এতদিন ধরে ক্ষমতার অলিন্দে বিচরণ করে গেছে কংগ্রেস । কংগ্রেসের সেই গোপন সমীকরণ সম্পর্কে জানুন :
অতীত ইতিহাস ও সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১২৫ কোটি । গড়ে, প্রতিটি রাজ্যে ধর্মের ভিত্তিতে জনসংখ্যার অংশ হল যথাক্রমে মুসলিম ১৫ শতাংশ, খ্রিস্টান ৮ শতাংশ,অনান্য ৭ শতাংশ এবং হিন্দু ৭০ শতাংশ । দাবি করা হয় যে কংগ্রেসের জমানায় মুসলিম, খ্রিস্টান ও অনান্য ধর্ম সম্প্রদায়ের ৯০ শতাংশ ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত থাকলেও হিন্দু জনসংখ্যার মাত্র ৪২ শতাংশের নাম নিবন্ধিত আছে । হিন্দু ছাড়া মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অন্য সম্প্রদায়ের সবার ভোটার আইডি কার্ড আছে। সরকার তাদের ভোটার কার্ড দ্রুত তৈরি করে দেয় এমনকি জাল কার্ডও তৈরি করে দেওয়ার কোটি কোটি নজির আছে । রিপোর্ট অনুযায়ী,শুধুমাত্র আসামসহ উত্তর পূর্ব ভারতে কংগ্রেসের শাসনের সময় ৪.৫ কোটি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের রেশন কার্ড এবং ভোটার কার্ড করে দেওয়া হয়েছিল । যেখানে হিন্দু শরণার্থীদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ শিথিলতা বজায় রাখা হয়েছে, অর্থাৎ তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে । মুসলিম অত্যাচারের কারণে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীরা কংগ্রেসের সময় রেশন কার্ড বা ভোটার কার্ড পাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারত না । অর্থাৎ কংগ্রেসের নীতি হল পরোক্ষভাবে হিন্দুদের সংখ্যা কমানো এবং অন্য ধর্মের লোকদের জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটানো । আর এরপর থেকেই শুরু হয় কংগ্রেসের গোপন সমীকরণ ।
সরকারি নথি অনুসারে, ভোট দেওয়ার যোগ্য প্রতি ১০০ জনের মধ্যে হিন্দু ৪২ শতাংশ,মুসলিম ১৫ শতাংশ, খ্রিস্টান ৮ শতাংশ এবং অন্যান্য ৭ শতাংশ বাদে বাকিদের ভোটার কার্ড নেই । মানে তারা ভোট দিতে পারবে না। তাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে হিন্দুদের । ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত নেই এমন হিন্দুর সংখ্যা ২৮ শতাংশ । আর যখন ভোট দেওয়ার পালা আসে, মাত্র অর্ধেক হিন্দু অর্থাৎ ২১ শতাংশ হিন্দু ভোট দিতে যায়, যেখানে মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অন্যান্যদের ভোটদানের হার প্রায় ১০০ শতাংশ । অর্থাৎ, মোট ভোটের গড় প্রায় ৪৮ শতাংশ । এর মানে এই ৪৮ শতাংশ লোকই ভারতীয় রাজনীতির দিক নির্দেশনা নির্ধারণ করে । এর মধ্যে হিন্দু ২১ শতাংশ, মুসলিম এবং খ্রিস্টানরা মিলে ২৭ শতাংশ । অর্থাৎ, এটাই কংগ্রেসের নীতি এবং ক্ষমতার টিকে থাকার সমীকরণ । যে সমীকরণ কাজে লাগিয়ে বিগত ৬৫ বছর ধরে নিজেদের সাফল্যকে তারা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে (ব্যাতিক্রম শুধু ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর প্রথম লোকসভা নির্বাচন) ।
এখন দেখা যাক মোট ৪৮ শতাংশ ভোট কার ঝুলিতে কত যায় ।
দাবি করা হয় যে মুসলিম ১৫ শতাংশ ভোটের মধ্যে ১৩ শতাংশ এবং খ্রিস্টান ৮ শতাংশের মধ্যে ৭ শতাংশই যায় কংগ্রেসের ঝুলিতে । অন্য ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ কংগ্রেসকে ভোট দেয়। এর মানে হল মোট ৪৮ শতাংশ ভোটের মধ্যে, কংগ্রেস পায় ২৫ শতাংশ অ-হিন্দু ভোট এবং বিজেপি পায় মাত্র ১ শতাংশ মুসলিম এবং ১ শতাংশ অন্যান্য মিলে মোট ২ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ মোট ২৭ শতাংশ অ-হিন্দু ভোটের মধ্যে, বিজেপি পায় মাত্র ২ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেস পায় ২১ শতাংশ এবং বাকি ৪ শতাংশ অন্যান্য দলগুলি পায়। অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের ২১ শতাংশের মধ্যে কংগ্রেস ৫ শতাংশ, বিজেপি ১০ শতাংশ, অনান্যরা ৬ শতাংশ ভোট পায় ।
এখন ভোটের এই সমীকরণ অনুযায়ী,কংগ্রেস সব মিলে পায় ৩০ শতাংশ ভোট । বিজেপি ১২ শতাংশ এবং অন্যান্য দলগুলির একসাথে ৬ শতাংশ । এই কারণেই কংগ্রেস হিন্দু ভোট নিয়ে চিন্তিত নয় এবং প্রকাশ্যে হিন্দু ধর্ম নিয়ে তারা কটুক্তি করতে ভয় পায় না । আর যখনই মুসলমানরা কংগ্রেসকে ভোট দেয় না, তখন কংগ্রেস ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই তাদের পুনরায় নিজের দিকে টানতে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের হামলা বা সিএএ/এনআরসির জুজু দেখাতে শুরু করে । এভাবেই কংগ্রেস প্রতিবারই মুসলিম ভোট পায় এবং এটাই কংগ্রেসের গোপন সমীরণ । এখনো পর্যন্ত এটি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সফল হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে । কংগ্রেসের এই নীতিকে আঁকড়ে ধরে কেরালার সিপিএম,তামিলনাড়ুর ডিএমকে এবং পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসেরও সাফল্য এসেছে । ২০১১ সালে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক সরে যাওয়ায় ধরাশায়ী হতে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গের সাড়ে তিন দশকের সিপিএম সরকারকেও । বর্তমানে সিংহভাগ হিন্দু ভোট পেয়েও পশ্চিমবঙ্গে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে সক্ষম হচ্ছে না বিজেপি ।
অন্যদিকে মুসলিম তোষামোদের কারণে দেশে ক্রমশ মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। জওহরলাল নেহরুর “হিন্দু কোড বিল” এর কারণে, ১৯৫২ সাল থেকে, কংগ্রেস হিন্দুদের জনসংখ্যা কমাতে এবং মুসলমান ও খ্রিস্টানদের জনসংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে । এই কারনেই সংবিধান সংশোধনের কথা উঠলেই “ভারতের গনতন্ত্র বিপন্ন” বলে চিল চিৎকার শুরু করে দেয় কংগ্রেস ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা । দেশের ১৫ শতাংশ মুসলিম ও ৮ শতাংশ খ্রিস্টান ভোটব্যাঙ্কের সমর্থন থাকায় ৭০ শতাংশ হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের প্রতি কংগ্রেসসহ ওই দলগুলির তেমন নজর থাকেনা । এর উপরে হিন্দুদের মধ্যে ভোটদানের অনীহা তাদের পথকে আরও মসৃণ করে দেয় । কিন্তু যেদিন মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের জনসংখ্যা একসাথে ৫০ শতাংশের উপরে হবে সেদিন তাদের শত চেষ্টাতেও ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না কোনো হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ।।