বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনকালের মন্ত্রী ও কুমিল্লা-৬ আসনের প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য কুখ্যাত আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বর্তমানে মেয়েকে নিয়ে কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনে আত্মগোপন করে আছেন । শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাহাউদ্দিন এবং তার মেয়ে তাহসিন বাহার সুচানা সংঘাত-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসেন । হাসিনার দলের সদস্য হওয়ায় এবং ‘বিক্ষোভকারীরা’ ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদদের খুঁজে বের করতে শুরু করলে জানতে পারে যে বাহাউদ্দিন অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি কলকাতার সল্টলেকে একজন রাজনীতিকের সাথে থাকেন এবং প্রতিদিন তার থাকার খরচ ১০ হাজার টাকা করে দেন বলে জানা গেছে। “হিন্দু বিদ্বেষী” বলে পরিচিত আওয়ামী লীগের ওই কুখ্যাত নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় তখন প্রশ্ন ওঠে । পুলিশ তাকে জেরাও করে,কিন্তু গ্রেপ্তার করা হয়নি । পরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায় ।
কিন্তু একইভাবে মৌলবাদীদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ভারতে পালিয়ে আসা বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে ফের একবার বাহাউদ্দিন বাহারের প্রসঙ্গ উঠছে । মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, কয়েকদিন আগে তাঁকে আটক করে নদীয়া জেলার কল্যাণী থানার গয়েশপুর ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে দফায় দফায় জিজ্ঞাসবাদ চলে। রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টিম যেমন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমনই সিআইডি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরাও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় নথিপত্র দেখানোর জন্য। ভারতে থাকার বৈধ অনুমতিপত্র দেখাতে না পারায় গত সোমবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বাংলাদেশের আর এক মুক্তমনা ইউটিউবার আসাদ নূর । তিনি এই বিষয়ে এক্স-এ লিখেছেন,গত ৩ নভেম্বর, ভারতীয় সময় সকাল দশটায়, মুফতি মাসুদকে আনুষ্ঠানিকভাবে কল্যাণী থানায় বিদেশী আইনের ধারা ২৩এ-এর অধীনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। এই ধারার অধীনে, তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানা হতে পারে, যার পরে তাকে বাংলাদেশে নির্বাসন দেওয়া হতে পারে। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে, ২৭শে অক্টোবর, তাকে কল্যাণী থানার অন্তর্গত গয়েশপুর ফাঁড়িতে টানা চার দিন আটকে রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন তল্লাশি ও অপমানের পর, পুলিশ তাকে FRRO-তে নিয়ে যায়, তার ভিসা নবায়নের জন্য আবেদন করে এবং ছেড়ে দেয়।
পুলিশের হাত থেকে কি সত্যিই কেউ এত সহজে মুক্তি পায়? না। তিনি দাবি করেছেন,পরিবর্তে, মুফতি মাসুদকে পুলিশ কতটা ভালো এবং ভারত কতটা মহান তা নিয়ে লিখতে এবং কথা বলতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। আমাদের পরামর্শ উপেক্ষা করে, তিনি পুলিশকে বন্ধুর মতো ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন এবং তাদের পক্ষে লিখতে থাকেন। এমনকি তিনি তার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তার মুক্তির বিষয়ে পোস্ট করেছিলেন, যদিও আমরা সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে এটি তাকে বিপদে ফেলবে। ফলাফল?
গতকাল, ২ নভেম্বর, দেবাশিস পান্ডা নামে একজন অফিসার তাকে কল্যাণী থানায় ফেরত ডেকে পাঠান। এবং আজ, মুফতি মাসুদ সেখানে হাজির হলে, পুলিশ তাকে আবার গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হেফাজতে পাঠায়। তার পরবর্তী আদালতের তারিখ সতেরো নভেম্বর। সাতাশ থেকে একত্রিশ তারিখ পর্যন্ত তিনি বাঘের মুখে ছিলেন, তারপর বাঘের খাঁচায় ছিলেন, এবং এখন তিনি বাঘের পেটের ভেতরে।এই গ্রেপ্তার এবং জেল হেফাজতের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং মমতা সরকার উভয়ই দায়ী। সর্বশেষ গ্রেপ্তারের আদেশ এসেছে কলকাতা পুলিশের ডিআইজি থেকে।
আসাদ নূর লিখেছেন,ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশী প্রাক্তন মুসলিমদের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার অধিকার নেই। কিন্তু বাহাউদ্দিন বাহার বা এরশাদ মাহমুদের মতো কেউ যদি হিন্দু বা বৌদ্ধদের উপর ব্যাপক অত্যাচার করার পরে ভারতে প্রবেশ করে, তাহলে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার উভয়ই তাদের সম্মানিত অতিথির মতো আচরণ করবে। আমরা সকলেই এর প্রমাণ দেখেছি। ভারতীয় রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে, মুফতি মাসুদের মতো লোকেরা “খারাপ বাংলাদেশী”। অতএব, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় কর্তৃপক্ষের আদেশে, মুফতি মাসুদ এখন কারাগারে এবং তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
উল্লেখ্য যে মুফতি মাসুদ ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম ত্যাগ করেন এবং ভারতে আইনত আশ্রয় নেন। তিনি সমস্ত রাজ্যের নিয়ম মেনে একাধিকবার তার ভিসা নবায়ন করেছিলেন, তবুও এই বছর FRRO তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে। সকল সচেতন ব্যক্তিকে মুফতি মাসুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি। এই অমানবিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য এবং তার অবিলম্বে মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের আওয়াজ তুলুন। আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন প্রতিবাদ করুন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং মানবিক রাষ্ট্রগুলিকে লিখুন।
তিনি কারাগারে একেবারেই নিরাপদ নন কারণ ভারতীয় কারাগারে অনেক জিহাদি রয়েছে, এবং আমরা আশঙ্কা করছি যে তাকে হত্যা করা হতে পারে। যদি তার কিছু ঘটে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ এবং কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী থাকবে। তাছাড়া, ব্যাপক দুর্নীতির কারণে, বাংলাদেশি বন্দীরা প্রায়শই বর্বর নির্যাতনের শিকার হন যদি না বড় ঘুষ দেওয়া হয়।’ তিনি আহ্বান জানান,’বন্ধুরা, আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ মুফতি মাসুদের জীবন বাঁচাতে পারে এবং তাকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারে।’
কে মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ?
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে ২০১৬ সালে জনপ্রিয় হয়েছিলেন বাংলাদেশী ব্লগার মুফতি আব্দুল্লা আল মাসুদ। তাঁর নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, যেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও নাস্তিকতা সম্পর্কে একাধিক তত্ত্বমূলক ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। বাংলাদেশের একটি কট্টর ইসলামি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার পর ২০১৮ সালে তিনি টুরিস্ট ভিসায় ভারতে আসেন। প্রথমে তিনি কলকাতায় ভাড়া থাকলেও, একাধিক ঠিকানা পরিবর্তনের পর বর্তমানে নদিয়ার গয়েশপুরের একটি বাড়িতে ভাড়া ছিলেন।ভারতে থেকেই তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে একাধিক ভিডিয়ো তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করতেন।
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের হিন্দু বিদ্বেষী কিছু কর্মকাণ্ড
৪ঠা অক্টোবর ২০২৩ তারিখে, আওয়ামী লীগের সাংসদ (কুমিল্লা-৬ আসন) দুর্গাপূজাকে ‘মদযুক্ত পূজা’ (মদের উৎসব) হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন ।
বাহাউদ্দিন বাহার আরও দাবি করেছিলেন যে যদি মদ্যপান কমানো হয়, তাহলে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কমে যাবে। তার আগের বছর ১২ অক্টোবর ‘দুর্গা পূজাকে মদের সাথে যুক্ত’ করে তিনি একই রকম মন্তব্য করেছিলেন।
বাংলাদেশের কুমিল্লার বাসিন্দা বাহার উদ্দিন বাহার চরম হিন্দু বিদ্বেষী এবং ভারত বিদ্বেষী বলে পরিচিত । মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র তাহসীন বাহারকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মিছিল করেছিল ওই কুখ্যাত সংসদ । কুমিল্লার বহু হিন্দু পরিবার তার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিল । হিন্দু ধর্মস্থল, ঘরবাড়ি দোকানপাটে হামলা, লুটপাট-ভাঙচুর-অগ্নি সংযোগ থেকে শুরু করে খুন এবং নারী অপহরণের মতো মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ৷ ২০২১ সালে বাংলাদেশে দুর্গাপূজায় হামলার পেছনে এই বাহার উদ্দিন বাহার জড়িত ছিলেন।।

