এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ জুলাই : পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী মুক্ত ভোটার তালিকা তৈরীর দাবিতে গত বুধবার কলকাতার রাজপথে মিছিল করেছিল বিজেপি । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের অফিস পর্যন্ত পদযাত্রা করেন । শুভেন্দু অধিকারী শ্লোগান তোলেন : “রোহিঙ্গাদের খালা কে ? মমতা আবার কে” । তবে এই প্রথম নয়,ইদানিং প্রায় সমস্ত মিছিলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে “রোহিঙ্গাদের খালা” বলে অবিহিত করেছেন বিরোধী দলনেতা । কিন্তু কেন ?
আসুন,তার আগে জেনে নেওয়া যাক “খালা” শব্দের উৎপত্তি ও তার বাংলা অর্থ কি । খালা” শব্দটি মূলত উর্দু ভাষা থেকে এসেছে এবং এর বাংলা অর্থ হলো “মায়ের আপন বোন” বা “মাসী” । মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এই শব্দ প্রয়োগ করে । একজন মাসি ও বোনপোর সম্পর্ক স্নেহের বন্ধনে বাঁধা । মায়ের বিকল্প হিসাবে মাসিকে দেখা হয় ।
কিন্তু কোন দৃষ্টিতে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের মাসি-বোনপোর সম্পর্ক হিসাবে দেখছেন শুভেন্দু অধিকারী ? আসল বিষয় হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতি মমতা ব্যানার্জি ও তার দলের দুর্বলতা । বিজেপির অভিযোগ যে ভোটব্যাংক বাড়াতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটকার্ড করে দিচ্ছে এরাজ্যের শাসকদল । শুভেন্দুর কথায়,রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীদের কারণে জনসংখ্যার যে বিন্যাস তা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ঐ জেলাগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার-এর কয়েক গুন বেশী এবং এরা বিভিন্ন অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে দেশের আধার এবং ভোটার কার্ড তৈরী করে ফেলেছে।’
তিনি আরও বলেছেন,’নির্বাচন কমিশনারের কাছে অবিলম্বে এই অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ভোটার কার্ড বাতিল করার দাবি জানিয়েছি। বিস্তারিত তথ্য আমরা নির্বাচন কমিশনারের হাতে তুলে দিয়েছি। পশ্চিবঙ্গে গণতন্ত্র রক্ষায় বিজেপির লড়াই চলবে।’
কিভাবে অনুপ্রবেশকারীরা দ্রুত বংশ বিস্তার করে জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে তার একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিককে বলেছেন,’ভারতে যে সমস্ত রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়ছে তাদের প্রধান রুট হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ । তাদের জন্মের হার মারাত্মক-২৪.৭৭ শতাংশ । দেশে পপুলেশন গ্রোথ যত তার থেকে বহুগুণ বেশি পপুলেশন গ্রোথ অনুপ্রবেশকারীদের । যেখানে ভারতের অ্যাভারেজ পপুলেশন গড় হচ্ছে ৭ শতাংশ সেখানে অনুপ্রবেশকারীদের পপুলেশন গড় মেখলিগঞ্জ ২৪.৭৭,মাথাভাঙ্গা ২৪.৭৯,কোচবিহার উত্তর ৯৫.৫৯ শতাংশ ।’ শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী মুক্ত ভোটার তালিকা তৈরীর দাবিতে আমরা নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাক্ষাত করেছি ।’
প্রসঙ্গত,রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এদেশে ঢুকে কথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির বদান্যতায় ভোটার লিস্টে নাম তুলে ফেলেছে । ওই অনুপ্রবেশকারীরাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দলগুলির কোর ভোটব্যাংক হয়ে গেছে । জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন ঘটে যাওয়ায় যেকারণে এদেশীয় প্রকৃত ভোটারদের ইচ্ছার যথাযথ প্রতিফলন ঘটছে না বলে অভিযোগ উঠছে । সেই সমস্ত ভুয়া ভোটারদের চিহ্নিত করে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন । কিন্তু এর প্রবল বিরোধিতা করছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস,কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও বামপন্থীরা । কিন্তু গতকাল পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে সরকারি কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন যে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া যেমন চলছে তেমন চলবে । প্রধানমন্ত্রী কড়া ভাষায় এরাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করে বলেছেন,’তৃণমূল কংগ্রেস নিজের স্বার্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গের পরিচয়কে নিলামে তুলে দিয়েছে । এর জন্য এখানে অনুপ্রবেশকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে । অনুপ্রবেশকারীদেরকে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে দিচ্ছে । এজন্য পুরো একটা বাস্তুতন্ত্রকে এখানে খাড়া করা হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গের এই ভূমিকা দেশের সুরক্ষার জন্য বিপদ স্বরূপ । এটা বাংলা সংস্কৃতির জন্যও বিপদ স্বরূপ । কিন্তু তোষামোদের জন্য তৃণমূল সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে । আজ যখন তৃণমূলের এই ষড়যন্ত্রের সকলের সামনে উন্মোচন হয়ে গেছে তখন প্রবেশকারীদের জন্য একটা নতুন আন্দোলন শুরু করেছে৷ এরা দেশের সাংবিধানিক সংস্থাকেও চ্যালেঞ্জ করছে । তৃণমূল এখন অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থনে সরাসরি প্রকাশ্যে চলে এসেছে।’ তোষামোদের রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলা সংস্কৃতির জন্য তৃণমূল বিপদ ডেকে আনছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী । পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,’কিন্তু আমি এই দুর্গাপুরের মাটি থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে যারা ভারতের নাগরিক নয়, যারা অনুপ্রবেশ করে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ভারতের সাংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে । বাংলার অস্মিতার বিরুদ্ধে যেকোন প্রকার ষড়যন্ত্রকে বিজেপি সফল হতে দেবে না ৷ এটা আপনাদের কাছে মোদীর গ্যারান্টি ।’
এর আগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিক দাবি করেন যে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে ১২ থেকে ১৩ লক্ষ রোহিঙ্গা পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে । তিনিও তৃণমূল পার্টি অফিসগুলিতে থেকে রোহিঙ্গাদের ভোটার কার্ড করে দেওয়ার দাবি করেন ।
গত ১৭ জুলাই মমতা ব্যানার্জির ২০১৭ সালের একটা টুইটের স্ক্রীন শর্ট এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করে একটা বড়সড় পোস্ট করেন শুভেন্দু অধিকারী । যে টুইটে মমতা লিখেছিলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য জাতিসংঘের আহ্বানকে আমরা সমর্থন করি। আমরা বিশ্বাস করি যে সকল সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী নয়। আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন।’ প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু লেখেন,’মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য কুমিরের অশ্রু ঝরাচ্ছেন, যা ২০১৭ সালে আপনার টুইট থেকে দেখা যায়। এটি ছিল আপনার নির্লজ্জ কর্মসূচির মাত্র শুরু। বছরের পর বছর ধরে, আপনি এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে দিয়েছেন, তাদের ভুয়া আধার কার্ড, ভোটার আইডি দিয়ে আপনার ভোট ব্যাংককে শক্তিশালী করেছেন। আপনি কেবল রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত করেননি, বরং আমাদের মাতৃভূমি ভারতে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাকেও বিপদে ফেলেছেন। ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে ভয়াবহ পাহেলগাম হামলার পর, যেখানে ২৬ জন নিরীহ হিন্দু প্রাণ হারিয়েছিলেন, আপনি বলেছিলেন যে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন। তাহলে কেন আপনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে এত আগ্রহী, যা কেন্দ্রীয় সরকারেরও এখতিয়ারভুক্ত। আপনি নোংরা রাজনীতি করছেন এবং আপনার দ্বিমুখী নীতি পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের বাকি অংশের জন্য অভিশাপ।’।