শ্যামসুন্দর ঘোষ,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৮ অক্টোবর : ‘মানুষকে মরে পরিবারের লোককে চাকরি পেতে হচ্ছে কেন ?’- রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্নই ছুড়ে দিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের মালবাজারে হড়পা বানে মৃতদের পরিবারের একজন করে সদস্যকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । সম্প্রতি তিনি মালবাজারে গিয়ে পরিবারগুলির হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে আসেন । মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার সংহতি মঞ্চে দলের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন,’এটা ওনার পুরনো পলিটিক্স৷ চাকরি দিয়ে পরিবারগুলিকে কেনার চেষ্টা করছেন৷ আমরা চাকরি দেওয়ার বিরোধী নই । যে মানুষটি চিরতরে চলে গেলেন চাকরি দিয়ে তাঁকে কি ফিরে পাওয়া যায় ? নাকি পশ্চিমবঙ্গের যুবকদের চাকরি পেতে গেলে শুধু পরীক্ষা দিলেই হবে না, বাড়ির কাউকে হড়পা বানে অথবা বিষাক্ত মদ খেয়ে মারা যেতে হবে ? চাকরি তো পরীক্ষা দিয়ে পাওয়ার কথা । কেন মানুষকে মরে পরিবারের লোককে চাকরি পেতে হচ্ছে ?’
দিন কয়েক আগে গুসকরায় দলের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেছিলেন তৃণমূল নেতা তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু । তিনি বলেছিলেন,’কেন্দ্র যদি প্রকল্পের বকেয়া টাকা না দেয় তাহলে বিজেপিকে এলাকায় মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হবে না ।’ তিনি বিজেপি নেতাকর্মীদের ল্যাম্প পোস্টে বেঁধে রাখার নিদান দেন । এই প্রসঙ্গে এদিন সুকান্ত মজুমদারের মতামতা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,’কেন্দ্র সরকার তো টাকা দিতে চায় । কিন্তু রাজ্যে সেই টাকা চুরি হয়ে যাচ্ছে ৷ যে সমস্ত টাকা চুরি হওয়ার পর ধরা পরছে তা তো নরেন্দ্র মোদীই দিয়েছেন । ওই টাকা সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্টে জমা করার কথা৷ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বান্ধবীর বাড়ি বা একাউন্টে রাখার জন্য তো টাকা দেওয়া হয়নি৷ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের কোথায় কোথায় বান্ধবী আছে খুঁজে বের করলেই জনতা ১০০ দিনের টাকা পেয়ে যাবেন ।’
সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য শুনুন :-
এদিন সভায় বক্তব্য রাখার সময় তোষণ নীতি ও শিক্ষক নিয়োগ দূর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকারকে কার্যত তুলোধোনা করেন সুকান্ত । তিনি বলেন,’মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে যে ২৮ জন যারা চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তাদের মধ্যে ২০ জন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ । উদ্দেশ্য কি? দু’দিন আগে মোমিনপুরের ঘটনা দেখলাম । আমার গাড়ি আটকানোর জন্য ব্যারিকেড করল কলকাতা পুলিশ । আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে চাই,এত ভয় কিসের? বিজেপিকে কেন এত ভয় পাচ্ছেন? সৎ সাহস থাকলে সত্যকে মানুষের সামনে আসতে দিন । মানুষ বিচার করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সত্যই কি সততার প্রতীক নাকি পুরোটাই মিথ্যায় ভরা, অসততায় ভরা,দূর্নীতিতে ভরা । আপাদ মস্তক দূর্নীতিগ্রস্থ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ?’
তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেন,’মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন কে চুরি করছে আমি কি করে জানবো । কিন্তু মানিক ভট্টাচার্যের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া একটা চিঠিতে দেখা গেছে ওই ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লিখেছেন মানিক ভট্টাচার্য এক একটি চাকরি পিছু ৭ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন । এভাবে তিনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন । আর ওই চিঠির কপি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আছে । অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী সেই চিঠি পাননি তা তিনি অস্বীকার করতে পারেন না । আসলে উনি সব কিছু জেনেও না জানার ভান করছেন ।’
এদিন সুকান্ত জানান আগামী দিনে রাজ্যে আগামী দিনে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি । তখন চাকরির প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে । মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে । এর বাইরেও কোনো দলীয় নেতা যদি টাকা নিয়ে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।।